ফাইল ছবি
ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: একটা আফ্রিকান প্রবাদ ‘Smooth seas never made a skilled sailor’, অর্থাৎ শান্ত সমুদ্রে তৈরি হয় না দক্ষ নাবিক। যা বিখ্যাত হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চারবারের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্টের মুখে। বিংশ শতকের কুখ্যাত অর্থনৈতিক মন্দার সময় রুজভেল্ট তাঁর ‘নতুন নীতি’-র প্রচলন করেন, যা যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে অবধারিত অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে উদ্ধার করে। এই প্রবাদই উঠে এল তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পোস্টে। রবিবার নিজের ইনস্টাগ্রামে তাঁর এই তাৎপর্যপূর্ণ পোস্ট রীতিমতো আলোড়ন ফেলে দিয়েছে।
View this post on Instagram
দলের তরফ থেকে একাধিক নেতৃত্বের মত, ৩৪ বছর সিপিএমের শাসনের অবসান ঘটানোর পাশাপাশি গত ১৩ বছর কেন্দ্রের বঞ্চনা এবং নানা ষড়যন্ত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রুখে দিয়েছেন। আর গত ১৫ বছর ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দক্ষ নাবিকের মতো নানা প্রতিকূলতার মধ্যে শক্ত হাতে হাল ধরে রেখেছেন অভিষেক (Abhishek Banerjee)। বাংলা বিরোধীদের বাংলা দখলের এই ষড়যন্ত্রকে রুখে দেওয়ার আপসহীন লড়াইটাকেই অভিষেক ইঙ্গিত করেছেন বলে মনে করছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস।
২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে দলে গুরুবার্তা দিয়েছিলেন অভিষেক। লোকসভা ভোটে যাঁরা দলের হয়ে কাজ করেননি, তাঁদের বিরুদ্ধে ৩ মাসের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। রাজ্য রাজনীতির পাশাপাশি তাঁর ভূমিকা লুটিয়েন্স দিল্লির রাজনীতিতেও আলোড়ন তুলেছে। সংসদের অধিবেশনে কেন্দ্রীয় বাজেটের বিরোধিতায় যে ঝাঁজালো ভূমিকায় অভিষেককে দেখা গিয়েছে, তা রীতিমতো চর্চায়। দলীয় নেতৃত্বের একটা অংশের মত, বিরোধীদের ভূমিকা কী পর্যায়ের হওয়া উচিত, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন অভিষেক। বুঝিয়েও দিয়েছেন, কেন্দ্রের বঞ্চনার প্রতিবাদ কতটা আগ্রাসী হলে তবে তার দাম মেলে। অন্তর্নিহিত অর্থ যা-ই হোক, অভিষেকের এই মন্তব্যে দলে যে নতুন করে চর্চা শুরু হয়েছে তার প্রমাণ এদিন সঙ্গে সঙ্গে মিলেছে অভিষেকের পোস্ট ভাইরাল হয়ে।
দলের সিনিয়র সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়ের বক্তব্য, “এই আফ্রিকান প্রবাদটি সবার জীবনে সমানভাবে প্রযোজ্য। বাধাবিপত্তি, প্রতিরোধের বেড়াজাল ডিঙিয়ে যারা এগিয়ে যায় তারাই সফল ব্যক্তি হিসাবে জনগণমনে সমাদর পায়। ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ অকূল পাথারে যে নাবিকেরা নিশ্ছিদ্র অন্ধকারে উথালপাথাল স্রোতেও বিচলিত না হয়ে দাঁড় শক্ত করে ধরে রাখতে পারে তারাই শেষ পর্যন্ত অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে। এই দক্ষতা, সফলতা সাহসের সঙ্গে সব বাধা-বিপর্যয় মোকাবিলা করে অর্জন করা যায়।” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লড়াই এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের তাঁর পাশে শক্ত হাতে হাল ধরে থাকার কথা উল্লেখ করে দলের রাজ্যসভার মুখ্য সচেতক সুখেন্দুশেখরবাবু বাম ও বিজেপিকে বিঁধে বলেছেন, “বাংলায় ২৭ বছর ধরে একটানা সংগ্রাম চালিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৩৪ বছরের জগদ্দল পাথর রাজ্য থেকে সরিয়েছিলেন। বাংলাকে বঞ্চিত করে, নানাভাবে ষড়যন্ত্র করে আরব সাগরের উপকূল-উদ্ভূত দুই অধিপতি ও তাদের জ্ঞাতিভুক্ত স্যাঙাতেরা বঙ্গোপসাগর দিয়ে এই রাজ্যে অনুপ্রবেশ করতে চেয়েছিল। তাদেরও মমতাদি বাংলার মানুষের সমর্থনে ১৩ বছর ধরে রুখে দিয়েছেন। অভিষেকও ১৫ বছর ধরে দক্ষ নাবিকের মতো দিদির পাশে শক্ত হাতে হাল ধরে রেখেছে।”
তাঁর কথায়, “তাঁদের দুজনেরই জীবনদর্শন হল–জান দেব, তবু মান দেব না। বাংলা বিরোধীদের বাংলা দখল করতে দেব না। বাংলাকে ভাঙতে দেব না।” একই সুর দলের প্রাক্তন সাংসদ শান্তনু সেনের কথায়। বলেছেন, “সর্বভারতীয় তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক ও যুবসমাজের আইকন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনীতির সমুদ্রপথটা একেবারেই মসৃণ ছিল না বলেই তিনি আজকে নিজেকে দক্ষ নাবিক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। আর সেই কারণেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মাথায় রেখে তৃণমূল কংগ্রেসের সংগঠনের ভিতকে বুথস্তর পর্যন্ত মজবুত থেকে মজবুততর করতে পেরেছেন।”
বিরোধীদের মধ্যে বিজেপি আর কংগ্রেস যদিও অভিষেকের এই মন্তব্য়ের অন্য ব্যাখ্যা দিতে চেয়েছে। বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যর কথায়, “প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ, প্রকাশ্য বা অন্তর্নিহিত তৃণমূলের কোনও বক্তব্য নিয়ে এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের জনমনে কোনও উৎসাহ নেই বা আগ্রহ নেই। স্বাভাবিকভাবেই বিরোধীদেরও তাই! কারণ মানুষের যখন উৎসাহ থাকে না, তখন আমাদেরও তা নিয়ে কোনও উৎসাহ থাকে না।” কংগ্রেস নেতা শুভঙ্কর সরকারের কথায়, “ভাল নাবিক হওয়ার জন্য ভালো প্রশিক্ষণও দরকার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সফল নাবিক হয়েছিলেন কংগ্রেসের পতাকা কাঁধে নিয়েই। রাজনীতির মঞ্চে কংগ্রেসের এই প্রশিক্ষণ থাকলে, তাদের পতাকাটা থাকলেই একমাত্র অশান্ত সমুদ্রে সফল নাবিক হওয়া যায়। এই মনে হচ্ছে, ডুবে যাচ্ছে। কিন্তু আবার সেই পতাকা দেখা গেল। সেটা একমাত্র সম্ভব যার মাস্তুলে কংগ্রেসের পতাকা থাকবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.