ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: লোকসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ইস্যুকে হাতিয়ার করেছে বিরোধী বিজেপি। তার উপর আবার সন্দেশখালি নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর চলছে। তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল নিয়েও যথেষ্ট চর্চা রয়েছে বিরোধী শিবিরে। এই পরিস্থিতিতে শুক্রবারের ভারচুয়াল বৈঠকে লোকসভা ভোটেরই সুর বেঁধে দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আসন্ন ভোটযুদ্ধের আগে দলীয় নেতা-কর্মীদের পথে নেমে কাজের নির্দেশ দিলেন তিনি।
চব্বিশের ভোটযুদ্ধে অভিষেকের স্লোগান, “জমিদারি হঠাও, বাংলা বাঁচাও।” গেরুয়া শিবিরকে দুষতে বঞ্চনাকে হাতিয়ার করে ভোট বৈতরণী পারই লক্ষ্য ঘাসফুল শিবিরের। কারণ, বার বার দাবি জানিয়েও একশো দিনের কাজের বকেয়া টাকা পাঠায়নি কেন্দ্র। দিল্লিতে গিয়ে আন্দোলনের পরেও লাভ হয়নি কিছুই। বরং রাজধানীতে বীরবাহা হাঁসদা এবং মহুয়া মৈত্রদের মতো মহিলা সাংসদরা হেনস্তার শিকার হন বলে অভিযোগ। অবশেষে কেন্দ্রের তোয়াক্কা না করেই ‘বঞ্চিত’ শ্রমিকদের পাশে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য। আগামী ১ মার্চ বকেয়া টাকা সরাসরি ‘বঞ্চিত’দের অ্যাকাউন্টে ঢুকবে। এই ইস্যুকেই এবার প্রচারের হাতিয়ার করার নির্দেশ অভিষেকের। চায়ের দোকান থেকে হাট-বাজার সর্বত্র তৃণমূল অঞ্চল সভাপতিদের এই ইস্যুতে প্রচার চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। প্রসঙ্গত, দক্ষিণ ২৪ পরগনা বাদে গোটা রাজ্যে ৩ হাজার ৩৩৪টি অঞ্চলে সহায়তা শিবির খোলার কথা বলেছেন অভিষেক। আগামী ১৮-২৫ ফেব্রুয়ারি প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলবে শিবির। এই শিবিরে জমা পড়া আবেদনপত্র মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে।
রাজ্যের প্রত্যেক বিধায়ককে ‘বঞ্চিত’ শ্রমিকদের নাম নথিভুক্তকরণের শিবিরে যাওয়ার অনুরোধ অভিষেকের। তিনি বলেন, “আমি বিধায়কদের অনুরোধ করব আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে আট দিন প্রতিটা শিবির অন্তত দুবার করে ভিজিট করবেন। তাতে আট দিনে অন্তত ৩০টা শিবির ভিজিট করতে পারবেন। বিধায়কদের ক্ষেত্রে শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে বলব আপনি সমস্ত তৃণমূল বিধায়ককে বিষয়টি জানিয়ে দেবেন।” সাংসদদেরও একই অনুরোধ করেন অভিষেক। তাঁর কথায়, “আমি সাংসদদের বলব আপনার এলাকার সাতটা বিধানসভার অন্তত পাঁচটা করে শিবির ভিজিট করবেন। আমি লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলব প্রত্যেক সাংসদকে এটা জানিয়ে দিতে।” প্রয়োজনে বিধায়ক এবং সাংসদদের একই সঙ্গে ওই শিবিরে যাওয়ার কথাও বলেন অভিষেক। আগামী ২ বছর ধরে তৃণমূলের এই লড়াইয়ের কথা প্রচারের নির্দেশ তাঁর।
বিরোধীদের ঘায়েল করার পন্থা যেমন ভারচুয়াল বৈঠকে স্থির করেন অভিষেক। ঠিক তেমনই সংগঠনকে আরও শক্তপোক্ত করাও উদ্দেশ্য তাঁর। সে কারণে লোকসভা নির্বাচনের আগে দলীয় নেতা-কর্মীদের আরও জোটবদ্ধ হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। যেকোনও কর্মসূচির ক্ষেত্রে অঞ্চল ও ব্লক সভাপতিদের কথা বলে বুথ সভাপতিদের সঙ্গে আলোচনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তফসিলি জাতি, উপজাতি শ্রেণিভুক্তদের নিয়ে একটি আলাদা ‘টিম’ তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অভিষেকের নির্দেশ, “যেখানে যেখানে তৃণমূলের বিধায়ক নেই, সেখানে ব্লক সভাপতিরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে আপনাদের বিধানসভার ১০ জন তফসিলি জাতি ও ৫ জন তফসিলি উপজাতি শ্রেণিভুক্তের নাম পাঠাবেন আগামী ৫ দিনের মধ্যে। এমন নাম পাঠাবেন যাঁদের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। যাঁরা বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রস্তুত। যাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লড়াইয়ের সমর্থক। এই ১৫ জনকে আমরা কাজে লাগাব। যেভাবে বছরের পর বছর বিজেপি তফসিলি জাতি, উপজাতি শ্রেণিভুক্তদের উপর অত্যাচার করছে সেকথা আমরা তুলে ধরব। এমন নাম পাঠাবেন না যে আপনার কাছের লোক তাই পাঠিয়ে দিলেন। আমরা খতিয়ে দেখব। বাংলায় যে কটি বুথ রয়েছে সেই প্রতিটা বুথ থেকে চারটি করে নাম ২৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে দলের কাছে পাঠাবেন। মাদার সংগঠন থেকে দুজন, একজন মহিলা সংগঠন ও একজন যুব সংগঠনের (যাঁর বয়স ৪০ বছরের কম)। এই সেনাদের আমরা কাজে লাগাব।” অভিষেকের অনুমান, আগামী মার্চেই হয়তো ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়ে যাবে। সেই সময় দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে আরও একবার ভারচুয়াল বৈঠকে বসবেন অভিষেক। কোন ইস্যুকে হাতিয়ার করে ভোটপ্রচার করবে ঘাসফুল শিবির, তা নিয়ে ওই বৈঠকে আলোচনা করবেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.