(বাঁদিকে) অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং (ডানদিকে) কুণাল ঘোষ
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তৃণমূল আয়োজিত অনুষ্ঠানে কিছু শিল্পীকে আমন্ত্রণ না জানানো নিয়ে নিজের অবস্থানে অনড় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার এনিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এধরনের রাজনীতি বিশ্বাস করেন না। বিষয়টি নিয়ে নিজের পুরনো অবস্থানে অনড় তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তিনি বলেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সর্বোচ্চ নেত্রী। তিনি যা বলবেন, শুনব। অভয়া আন্দোলনের সময় যে শিল্পীরা রাজ্য সরকার, মুখ্যমন্ত্রীকে অপমান করেছিলেন, তাঁদের অনুষ্ঠান না ডাকার বিষয় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন রাজ্যের তৃণমূল কর্মীরা, দাবি কুণালের।
এদিন ‘বয়কট’ ইস্যুতে অভিষেককে প্রশ্ন করা হলে বলেন, “আমি যত দূর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিনি, তিনি বয়কট, ভেঙে দাও-গুঁড়িয়ে দাওয়ের রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন না। যদি করতেন, তা হলে এক সময়ে যাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করেছেন, তাঁরা দলে ফিরতে পারতেন না।”
বিকেলে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে মুখ্যমন্ত্রীকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা গুটিকয়েক শিল্পীকে বয়কট করার দাবি জানানো রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষও নিজের অবস্থানে অনড় থেকেছেন। তবে একইসঙ্গে অভিষেকের মন্তব্য নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেছেন, “অভিষেক বন্দে্যাপাধ্যায় ঠিকই বলেছেন। আমরা বয়কটের রাজনীতি করি না। এটাই আমাদের নীতি। কিন্তু যে কয়েকজন আমাদের বলেছিলেন চটিচাটা, মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেছিলেন, নবান্নের ছাদ থেকে হেলিকপ্টারে পালিয়ে যাবেন, ‘অমুকের গালে গালে, জুতো মারো তালো তালে’ তাঁদের বাদ দিয়ে তৃণমূল কর্মীদের অনুষ্ঠানে আয়োজনের কথা বলেছিলাম। যে শিল্পীরা মুখ্যমন্ত্রীকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন, তৃণমূলকে ঘৃণার চোখে দেখেন, খবর নিয়ে দেখুন, সারা বাংলার তৃণমূল কর্মীরা এখন আর তাঁদের কোনও অনুষ্ঠানে ডাকছেন না। সাধারণ কর্মীরাই, তাঁদের আবেগ থেকে নেত্রীকে আক্রমণ করা শিল্পীকে বাদ দিয়ে চলেছেন।” তাঁকে ইঙ্গিত করে কি অভিষেক এমন কথা বলেছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে কুণাল বলেন, “উনি এমন কথা আমাকে নিয়ে বলতেই পারেন না বলে আমার বিশ্বাস। আমি মনে করি না অভিষেক আমায় ইঙ্গিত করে এমন বলেছেন। কারণ, অভিষেক জানেন, ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই রক্তাক্ত-মুমূর্ষু মমতাদিকে পুলিশের গাড়ি থেকে জোর করে আমি টেনে বার করে নিজের গাড়িতে তুলে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছেছিলাম। আর ২০০৪ থেকে ২০১১ এই পর্বে আমি মমতা বন্দে্যাপাধ্যায় তথা তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য কী কী করেছি, তার বিস্তারিত অভিষেক জানেন। একইসঙ্গে অভিষেক এটাও জানে আমার বিরুদ্ধে দলের কয়েকজন কী কী ষড়যন্ত্র করেছিলেন এবং যার জন্য আমাকে জেলে যেতে হয়েছিল। এই বিষয়টি নিয়ে অভিষেকের সঙ্গে আমার বিস্তারিত-দীর্ঘ কথা হয়েছে, পুরোটাই তাঁর জানা। আর জেল পর্বে থাকা সত্ত্বেও এক মাসের জন্যও দলের চাঁদা আমি বন্ধ করিনি।” এর পরই কুণাল জানিয়ে দেন, অভিষেকের প্রথম সংগঠন ‘যুবা’-র আত্মপ্রকাশের কাহিনী। ২০১১ সালের ২১ জুলাই ব্রিগেডে দলের শহিদ স্মরণ সভার মঞ্চেই যুবার সভাপতি হিসাবে অভিষেকের নাম ঘোষণা হয়েছিল। সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে এদিন কুণাল বলেন, “অভিষেককে দাঁড় করিয়ে মমতাদি আমাকে দিয়েই ওই ঘোষণা করিয়েছিলেন।”
উল্লেখ্য, আর জি করে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-হত্যার প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিলেন বিনোদন মহলের একাংশ। যাঁরা অনেকেই আবার নিশানা করেছিলেন রাজ্য় সরকার ও মুখ্যমন্ত্রীকে। ঘটনার কিনারা করা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের ভূমিকার লাগাতার সমালোচনা করেছিলেন একটা বড় অংশই। বর্ষবরণের মরশুমে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তাঁদের বয়কটের ডাক দিয়েছিলেন তৃণমূলের একাংশ। কয়েকজন শিল্পীর বুকিং তৃণমূলের আয়োজকরা বাতিল করে দিয়েছিলেন। কার্যত বয়কট শুরু হয়ে গিয়েছিল বহু অরাজনৈতিক ক্লাব এবং সংগঠনের তরফে আয়োজিত ‘উইন্টার কার্নিভাল’ থেকেও। বিষয়টির কার্যত বিরোধিতা করেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিনও নিজের সেই অবস্থানে অনড় রইলেন তিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.