Advertisement
Advertisement
R G Kar Medical College & Hospital

সূত্র ব্লু টুথের ছেঁড়া তার, আর জি করের তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যুতে পুলিশের জালে ১

আর জি করের তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনায় একজনকে আটক করল পুলিশ। রাতেই আটক করে তাকে লালবাজারে নিয়ে যাওয়া হয়। সূত্রের খবর ওই যুবকের নাম সঞ্জয় রায়। সে ওই হাসপাতালের কর্তব্যরত হোমগার্ড।

A youth detained in R G Kar Medical College & Hospital's lady doctor death case
Published by: Sayani Sen
  • Posted:August 10, 2024 9:17 am
  • Updated:August 10, 2024 10:15 am

অর্ণব আইচ ও নিরুফা খাতুন: আর জি করের তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনায় একজনকে আটক করল পুলিশ। রাতেই আটক করে তাকে লালবাজারে নিয়ে যাওয়া হয়। সূত্রের খবর ওই যুবকের নাম সঞ্জয় রায়। সে ওই হাসপাতালের কর্তব্যরত হোমগার্ড। সেমিনার হল থেকে ব্লু টুথের ছেঁড়া তার পাওয়া যায়। ওই ছেঁড়া তারের সূত্র ধরে সঞ্জয়কে আটক করা হয়েছে বলেই খবর। ঘটনার রাতে সঞ্জয়ের সঙ্গে আর কেউ সেমিনার হলে ছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। 

শুক্রবার সকালে সেমিনার হলে নীল রঙের ম‌্যাট্রেসের উপর ‘ঘুমোচ্ছিলেন’ মহিলা চিকিৎসক। তাঁর মাথার কাছে ছিল ল‌্যাপটপ ও মোবাইল। সতীর্থ এক চিকিৎসক ডাকতে গিয়ে তাঁর মাথায় হাত রেখেই চমকে ওঠেন। শরীরে যে একেবারেই উত্তাপ নেই। ম‌্যাট্রেসে রক্তের দাগ। তরুণী চিকিৎসকের পোশাক ছিল অবিন‌্যস্ত। দেহের নিচের অংশে পোশাক ছিল না। এই দৃশ‌্য দেখে চিৎকার করে তিনি বেরিয়ে আসেন হলের বাইরে। অন‌্য চিকিৎসকরাও ছুটে আসেন। আসে টালা থানার পুলিশও। রাতেই টালা থানার পুলিশ ময়নাতদন্তের রিপোর্টের ভিত্তিতে খুনের মামলা দায়ের করেছে। খুনের আগে চিকিৎসককে ধর্ষণ করা হয়েছিল কিনা তা তদন্ত করে দেখছে লালবাজারের গঠিত ‘সিট’। পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, আরও ধারা যুক্ত হতে পারে।

Advertisement

চেস্ট বিভাগের ওই চিকিৎসক স্নাতকোত্তর দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রীও ছিলেন। হাসপাতালে নাইট ডিউটি ছিল তাঁর। ওই মহিলা চিকিৎসকের পরিবারের লোকেদের অভিযোগ, তাঁকে খুন করা হয়েছে। আর জি কর হাসপাতালের সহ চিকিৎসকরা অভিযোগ তোলেন, ওই মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণের পর নৃশংসভাবে খুন করা হয়। পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, ময়নাতদন্তের পর প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকরা পুলিশকে জানান, বৃহস্পতিবার ভোর তিনটে থেকে সকাল ৬টার মধ্যে শ্বাসরোধ করে চিকিৎসককে খুন করা হয়।

Advertisement

এত জোরে গলায় চাপ দেওয়া হয় যে, গলার হাড়ও ভেঙে যায়। খুনের আগে তাঁকে ধর্ষণ করা হয়, এমন ইঙ্গিতও চিকিৎসকরা দিয়েছেন। দু’চোখ ও মুখ দিয়ে রক্ত গড়াচ্ছিল। বাঁ গোড়ালি, পেট, গলা, ডান হাত, ঠোঁট, মুখে ১০টিরও বেশি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। যে ম্যাট্রেসের উপর তাঁকে শায়িত অবস্থায় পাওয়া যায়, সেখানে চুলের চিহ্ন মিলেছে। যৌনাঙ্গে ক্ষতের চিহ্ন। ওই অংশ থেকে ক্রমাগত রক্তপাত হয়েছে। শরীরের ওই অংশের পাশে পড়ে রয়েছে চুলের ক্লিপ। ম‌্যাট্রেসের পাশে পড়ে তরুণীর ভাঙা চশমা। ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা জানান, তরুণীর ঠোঁট, মুখ, গালে আঘাতের চিহ্ন আছে। চাদরে রক্তের চিহ্নও মিলেছে। পুলিশের ধারণা, এই ঘটনার পিছনে থাকা অভিযুক্ত তরুণীর অত‌্যন্ত পরিচিত।

[আরও পড়ুন: ব্রোঞ্জ ম্যাচের আগে ৪.৬ কেজি ওজন বেড়ে গিয়েছিল আমনেরও! কমালেন মাত্র ১০ ঘণ্টায়]

রাতেই লালবাজার তদন্তের জন‌্য বিশেষ তদন্তকারী দল বা ‘সিট’ গঠন করে। চেস্ট-সহ তিনতলার বিভিন্ন বিভাগে রাত আটটা থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত ডিউটিতে থাকা প্রত্যেক চিকিৎসক ও নার্সকে জেরা করা হয়। এমনকী, কোনও নিরাপত্তারক্ষী, ওয়ার্ড বয়, সাফাইকর্মী ও হাসপাতালের অন‌্য কোনও কর্মী রাত দু’টো থেকে সকালের মধ্যে সেমিনার রুমের কাছে এসেছিলেন কি না, পুলিশ তার তদন্ত চালাচ্ছে। ধর্ষণ হয়ে থাকলে, সেটা গণধর্ষণ ছিল কিনা তাও তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। কীভাবে সরকারি হাসপাতালের চারতলায় এই ঘটনাটি ঘটল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে শুক্রবার দুপুর থেকে উত্তাল হয় আর জি কর হাসপাতাল ও চিকিৎসক মহল।

পুলিশ সূত্রে খবর, টানা ৩৬ ঘণ্টার ডিউটি ছিল ওই তরুণী চিকিৎসকের। নাইট ডিউটি চলাকালীন রাত এগারোটা নাগাদ তিনি ফোনে মায়ের সঙ্গে কথা বলেন। রাত দু’টো নাগাদ চেস্ট বিভাগেরই দুই জুনিয়র সহকর্মীর সঙ্গে নৈশভোজ সারেন। এর পর তিনি বিশ্রাম নিতে সেমিনার হলে যান। সঙ্গে ছিল ল‌্যাপটপ ও মোবাইল। পুলিশের ধারণা, ল‌্যাপটপ খুলে কাজ করছিলেন তরুণী। তখনই আততায়ী ভিতরে আসে। আবার সে সেমিনার হলের ভিতর লুকিয়ে ছিল, এমনও হতে পারে। একাধিক ব‌্যক্তি থাকার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। সম্ভবত সে পিছন থেকে হামলা চালায় তরুণীর উপর। তিনি বাধা দিতে গেলে তাঁকে মারধর করা হয়। অচেতন অবস্থায় তাঁর উপর যৌন অত‌্যাচার করা হয়, এমন সম্ভাবনা রয়েছে। তখনও তাঁর শরীরে প্রাণ ছিল।

কিন্তু যে এই কীর্তি করেছে, সে তরুণী চিকিৎসকের অত‌্যন্ত পরিচিত। তাই প্রমাণ লোপাটের জন‌্যই শ্বাসরোধ করে তাঁকে খুন করা হয়। শ্বাসরোধ করার সময় তাঁর মুখে রক্ত চলে আসে। সেই কারণে ঠোঁটে রক্তের চিহ্ন রয়েছে। এদিন সকাল ন’টার পর থেকে তরুণীর খোঁজ চলছিল। যে চিকিৎসক সকালের ডিউটি করতে আসেন, তিনি ফোন করেও তাঁকে পাচ্ছিলেন না। সেমিনার হলে খোঁজ করতে গিয়ে দেখেন, পোডিয়ামের স্টেজের ভিতর চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছেন। মাথার কাছে ল‌্যাপটপটি তখনও চলছে। মোবাইলও রয়েছে। কিন্তু দেহটি ঠান্ডা দেখে তিনি অন‌্য চিকিৎসকদের ডেকে আনার পর তাঁদের পায়ের অবস্থান দেখে সন্দেহ হয়। তাঁরা চাদর খুলে দেখেন, দেহের নিচের অংশে কোনও পোশাক নেই। তাতে তাঁদের সন্দেহ হয়। প্রাথমিকভাবে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা শুরু হয়। তবে পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে খুন ও ধর্ষণের মামলা রুজু হতে পারে।

[আরও পড়ুন: দেহের পাশে অন্তর্বাস, জিনস! তরুণী ডাক্তারের দেহ উদ্ধারে তৈরি SIT, রুজু খুনের মামলা]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ