ফাইল ফটো
দীপঙ্কর মণ্ডল: দিল্লির নিজামুদ্দিনে তবলিঘি জামাতের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন। ফেরার পর হলদিয়ার যুবকের আপাতত ঠিকানা – বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ড। শরীরে COVID-19 বাসা বেঁধেছে। পবিত্র কোরান পাঠ করে তাঁর সময় কাটছে। নিয়ম মেনে পাঁচ ওয়াক্ত নমাজও পড়েন। সোমবার আসরের নমাজ শেষে একটু কথা বলার ফুরসত হল। বললেন, “আমার জন্য স্ত্রী এবং দুই মেয়ে অপেক্ষা করছে। প্রত্যেকদিন মেয়েরা ভিডিও কলে আকুল হয়ে জিজ্ঞেস করে – আব্বা, ঘর কব আওগে? আমি তাদের বুঝিয়ে বলি, খুব তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরব।”
দিল্লি গিয়েছিলেন অফিসের কাজেই। তারপর নিজামুদ্দিনের সমাবেশে। আর তা নিয়ে আফশোস ঝরে পড়ে যুবকের গলায়। আইসোলেশন থেকে মোবাইলে তিনি বলেন, “যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। আমি কখনও কারও ক্ষতি করিনি। করোনা মুক্ত হয়ে দ্রুত বাড়ি ফিরতে চাই। কিন্তু মহল্লার সবাই আগের মতো আমায় মেনে নেবে তো?”, সংশয়ের সুর তাঁর গলায়। হলদিয়ার এই যুবক আগের মতোই ভাল আছেন। শরীরিক অবস্থার কোনও অবনতি হয়নি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ভেন্টিলেশন তো দূর অস্ত, গত চারদিনে তাঁকে কোনও ওষুধও দেওয়া হয়নি।
আইডি হাসপাতালের কাচের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকেন যুবক। রোজ শুনশান রাস্তায় ভোর হয়। সকাল গড়িয়ে সন্ধে নামে। দূরের গাছগুলিতে পাখি বসে, কিন্তু আওয়াজ শুনতে পান না তিনি। নিঝুম রাতে ঘুম ভেঙে গেলে মেয়েদের কথা মনে পড়ে। গত চারদিনে দেড় ও আড়াই বছরের দুই মেয়ের সঙ্গে বহুবার ভিডিও কলে কথা বলেছেন যুবক। স্ত্রী ও মেয়েদের একটাই প্রশ্ন, “কবে আসবে তুমি?” কিছুটা কি ক্লান্ত? যুবকের জবাব, “আমি একজন বাবা। আমি একজন স্বামী। ওরা তো আমায় খুব ভালোবাসে। বাইরে আছি। কেমন আছি ভেবে দুশ্চিন্তা তো করবেই।”
দেশে ৪২৮১ জন করোনায় আক্রান্ত। কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, তাঁদের মধ্যে ১৪৪৫ জন তবলিঘি জামাতের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। দিল্লিতে ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া ২৫ হাজার ৫০০ জনকে কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে। জমায়েতে অংশ নেওয়া ২০৮৩ জনের মধ্যে ১৭৫০ জন ব্ল্যাকলিস্টেড। জমায়েতে যোগ দেওয়ায় হরিয়ানার পাঁচটি গ্রাম সিল করা হয়েছে ও সেখানকার প্রত্যেক বাসিন্দাকে কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হয়েছে। এসব খবর উদ্বেগ বাড়ায় বাংলা থেকে নিজামুদ্দিনে যাওয়া করোনা আক্রান্ত যুবককে। কিছুটা উদাস গলায় তিনি বলেন, “আমাকে হয়ত মহল্লা ছাড়তে হবে। জানি না, পুরনো কাজে যোগ দিতে পারব কি না। আমি ধার্মিক মানুষ। যেখানেই থাকি, সবার ভাল চাইব।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.