ছবি: প্রতীকী
অর্ণব আইচ: পুলিশের চোখে ধুলো দিতে পুলিশকেই সাহায্য! রীতিমতো তদন্তে সাহায্য করতে পুলিশ যে নমুনা সংগ্রহ করেছিল তাতে নিজেই সই করেছিল খুনি। দক্ষিণ শহরতলির ঠাকুরপুকুরে (Thakurpukur) প্রৌঢ়া খুনের তদন্তে নেমে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে পুলিশ। খুনের অভিযুক্ত খইরুল মণ্ডল ওরফে রাজুর কীর্তি দেখে হতবাক পুলিশ আধিকারিকরাও। রবিবার ধৃতকে আলিপুর আদালতে তোলা হলে তাকে ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।
কালীপুজোর পরের দিন এই ঘটনার সূত্রপাত। শুক্রবার সকালে ঠাকুরপুকুর এলাকার শখের বাজারের কাছে সন্তোষ রায় রোডের ফুটপাথের একটি গর্ত থেকে উদ্ধার হয় মানসিক বিপর্যস্ত সন্ধ্যা সর্দার (৫২)-এর দেহ। জানা যায়, হরিদেবপুরের বাসিন্দা ওই মহিলা ঘুরতে ঘুরতে চলে এসেছিলেন ঠাকুরপুকুর এলাকায়। তাঁর পরিবারের অন্যরাও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। ময়নাতদন্তের পর পুলিশ জানতে পারে যে, গলা টিপে ওই মহিলাকে খুন করা হয়েছিল। যেখান থেকে দেহটি উদ্ধার হয়, তার কাছেই রয়েছে একটি মাংসের দোকান। সেখানকার কর্মচারী খইরুল। মহিলার দেহ উদ্ধারের পর যখন প্রাথমিক তদন্তের কাজ চলছে, তখন খইরুল নিজেই পুলিশকে সাহায্য করার নাম করে এগিয়ে আসে। এমনকী, ঘটনাস্থলে ‘সিজার লিস্টে’ সইও করে সে।
খইরুলের মনে হয়েছিল, ‘সাহায্যকারী হওয়ার কারণে’ তাকে পুলিশ সন্দেহ করবে না। কিন্তু ময়নাতদন্তে খুন ধরা পড়ার পর প্রাথমিকভাবে কালীপুজোর রাতে ওই অঞ্চলে রাতে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের নামের তালিকা তৈরি করেন পুলিশ আধিকারিকরা। একই সঙ্গে খতিয়ে দেখা হয় এলাকার সিসিটিভির ফুটেজ। ফুটেজে প্রমাণিত হয় যে, রাতে খইরুল ওই এলাকায় ছিল। গভীর রাত পর্যন্ত জেগে ছিল সে। এর পর তালিকা অনুযায়ী, পুলিশ খইরুল-সহ কয়েকজনকে জেরা করতে শুরু করে। রাতে সে কী করছিল, এই প্রশ্নের উত্তরে তার বক্তব্যে দেখা যায় অসঙ্গতি। অন্যদের বক্তব্যের সঙ্গেও তার বক্তব্য মিলছিল না। শেষ পর্যন্ত টানা জেরার মুখে সে খুনের কথা স্বীকার করে।
জানা গিয়েছে, মহিলা ওই এলাকায় ঘুরতে ঘুরতে চলে আসার পর থেকেই তাঁকে টার্গেট করেছিল খইরুল। মহিলা ফুটপাথের কাছেই বসেছিলেন। বেশি রাতে তাঁকে কাছেই একটি নির্মীয়মাণ বাড়িতে ডাকে সে। ওই বা়ড়িতে আশ্রয় নিতে বলে। মহিলা বাড়ির কাছে যেতেই তাঁর হাত ধরে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে খইরুল। মহিলা রাজি না হওয়ায় অভিযুক্ত তাঁর যৌন নিগ্রহের চেষ্টা করে। মহিলা আপ্রাণ বাধা দেন। সেই রাগেই ওই বাড়িটির একতলায় মহিলার শ্বাসরোধ করে তাঁর খুন করে খইরুল। এর পর তাঁর দেহটি টেনে নিয়ে এসে ফুটপাথের উপর গর্তে ফেলে দেয়। তাকে টানা জেরা করা হচ্ছে। অভিযুক্তকে ঘটনাস্থলে নিয়ে গিয়ে ঘটনার পুনর্গঠন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.