ছবি: প্রতীকী
অর্ণব আইচ: গার্ডেনরিচে যুবতীকে ‘গণধর্ষণ’ করে বাড়ি থেকে ১৫ লক্ষ টাকা ও গয়না ডাকাতির ঘটনার কিনারা করলেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। ঘটনার দু’দিনের মধ্যেই গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার ওই যুবতীরই এক ‘বন্ধু’। এই বন্ধুর সঙ্গে গত আড়াই বছর ধরে সম্পর্ক ছিল ওই যুবতীর!
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতর নাম আসগর শাহ। পেশায় সে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। গার্ডেনরিচ এলাকার বাতিকল সেকেন্ড লেনে তার বাড়িতে হানা দিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ লুঠ করা দশ লক্ষ টাকা নগদ, সোনা ও রূপোর গয়না এবং মোবাইল উদ্ধার করে। বৃহস্পতিবার ওই যুবতী আদালতে গোপন জবানবন্দি দেন। তাঁর মেডিক্যাল পরীক্ষাও হয়েছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করেছেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরাও। জেরার মুখে আসগর যুবতীর হাত, মুখ বেঁধে তাঁকে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে বলে পুলিশের দাবি। ঘটনার পিছনে আরও কেউ ছিল কি না, পুলিশ তা জানার চেষ্টা করছে। শুক্রবার তাকে আদালতে তোলা হবে।
গাডেনরিচের পাহাড়পুর রোডের বাসিন্দা ওই যুবতীর অভিযোগ, তাঁদের ফ্ল্যাটের তালা বাইরে থেকে চাবি দিয়ে খুলে ভিতরে প্রবেশ করে দু’তিন জন দুষ্কৃতী। তারা পিছন থেকে চেপে ধরে তাঁর মুখ। শোওয়ার ঘরে তাঁর হাত, পা মুখ বেঁধে ফেলে। আলমারি থেকে ১৫ লক্ষ টাকা ও গয়না ডাকাতি করে। তাঁকে গণধর্ষণ করে পালিয়ে যায় তারা। তদন্ত করে গোয়েন্দা পুলিশ জানতে পারে যে, ওই যুবতী বিউটিশিয়ান কোর্স শেষ করার পর একটি বিউটি পার্লারে কাজ করতেন। প্রায় আড়াই বছর আগে যুবতীর সঙ্গে আসগরের আলাপ হয়। বিহারের গয়া জেলার বেলাগঞ্জের বাসিন্দা ২৪ বছরের আসগর বেশ কয়েক বছর ধরে বাতিকলে ভাড়া থাকে। দু’জনের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি ও ঘনিষ্ঠতা হয়। আসগরের দাবি, সে যুবতীর বাড়িতেও এসেছে। গত এক বছর ধরে এই সম্পর্কের কথা জানাজানি হয়। যুবতীর মা, বাবা ও ভাই তাঁকে আসগরের সঙ্গে মিশতে বারণ করেন। কিন্তু যুবতী কথা না শুনতেন না। তাই তাঁকে বাইরে থেকে তালাবন্ধ করে রেখে নিজেদের কাপড়ের কারখানায় বেরিয়ে যেতেন পরিবারের লোকেরা। যুবতীর কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয় মোবাইলও। যদিও ডাকাতি ও গণধর্ষণের তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দারা জানতে পারেন যে, একটি মোবাইল রাখা ছিল বাড়িতে। সেটিও লুঠ করে নিয়ে গিয়েছে দুষ্কৃতীরা। সেই মোবাইলের কললিস্ট দেখে গোয়েন্দারা তদন্ত শুরু করেন। এ ছাড়াও এলাকার বেশ কয়েকটি সিসিটিভির ফুটেজ উদ্ধার করেন গোয়েন্দারা। তাতে এক যুবকের ছবিও দেখা যায়। এই ব্যাপারে যুবতীর সঙ্গেও পুলিশ কথা বলে। শেষ পর্যন্ত তদন্তে আসগরের নাম উঠে আসে। তল্লাশি চালিয়ে তাকে এদিন দুপুর আড়াইটে নাগাদ গ্রেপ্তার করা হয়।
গোয়েন্দারা জেনেছেন, অভিযুক্ত যুবক কোনওভাবে তাঁদের ফ্ল্যাটের তলার নকল চাবি জোগাড় করে। ওই চাবি দিয়েই খোলা হয় তালা। ডাকাতির জন্য অভিযুক্ত যুবক তার ইলেকট্রিক সারানোর যন্ত্রপাতি নিয়ে এসেছিল। তার সাহায্যেই আলমরির লক ভেঙে ফেলে লুঠপাট চালায়। যদিও পালানোর সময় দরজায় তালা লাগানো হয়নি। বাইরে থেকে ছিটকানি লাগানো হয়েছিল। তা খুলেই রাতে যুবতীর ভাই ভিতরে ঢুকে দেখেন, শোওয়ার ঘরে হাত, পা, মুখ বাঁধা অবস্থায় পড়ে রয়েছেন তাঁর দিদি। আসগরের সঙ্গে আর কেউ এসেছিল কি না ও কীভাবে সে ফ্ল্যাটের নকল চাবি জোগাড় করল, তা জানার চেষ্টা হচ্ছে। লুঠ হওয়া বাকি টাকাও উদ্ধারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.