অর্ণব আইচ: রসিকা জৈন আগরওয়ালের মৃত্যুর ঘটনায় প্রকাশ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য। প্রাক্তন প্রেমিকার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল স্বামী কুশলের। সেই কারণেই রসিকার সঙ্গে নিত্য অশান্তি হত তাঁর। ভ্যালেন্টাইনস ডে-তেও তুমুল ঝামেলা হয় ওই দম্পতির। পাশাপাশি অত্যাচারও চলত রসিকার উপর। ফলে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন বধূ।
বিয়ের এক বছর সাত দিনের মধ্যেই গত ১৬ ফেব্রুয়ারি শিল্পপতি কুশল আগরওয়ালের স্ত্রীর মৃত্যু হয়। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, চারতলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন ওই বধূ। মৃত রসিকার মা ও বাবার অভিযোগের আঙুল তাঁর জামাই ও শ্বশুরবাড়ির লোকেদের বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যেই দক্ষিণ কলকাতার আলিপুর থানায় রসিকার বাবা মহেন্দ্রকুমার জৈনের অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁর জামাই কুশল আগরওয়াল ও পরিবারের অন্যদের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা, বধূ অত্যাচার ও ষড়যন্ত্রের মামলা দায়ের করেছে। সেই তদন্তে উঠে এসেছে কুশলের প্রাক্তন প্রেমিকার তত্ত্ব।
রসিকার বাবা রাজা সন্তোষ রোডের বাসিন্দা ব্যবসায়ী মহেন্দ্রকুমার জৈন জানান, গত বছর ৯ ফেব্রুয়ারি তাঁর মেয়ে রসিকার সঙ্গে দেখাশোনা করে বিয়ে হয় কুশলের সঙ্গে। কিন্তু সংসার সুখের হয়নি। জৈন পরিবারের অভিযোগ, বিভিন্ন ধরনের নেশা করতেন কুশল। তাতে আপত্তি ছিল রসিকার। তাঁর উপর অত্যাচার চালাতেন জামাই। গত নভেম্বরে অশান্তি মিটমাট করার জন্য রসিকার মা, বাবা ও অন্যরা মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে যান। কিন্তু আগরওয়াল পরিবার তাঁদের ফিরিয়ে দেয়। অভিযোগ, এর পরও অত্যাচার থামেনি। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রসিকা তাঁর মা সঙ্গীতা জৈনের মোবাইলে একটি মেসেজ পাঠান। মেয়ে যে শ্বশুরবাড়ির অত্যাচার সহ্য করতে পারছেন না, সেই ইঙ্গিত মেসেজে ছিল। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মেয়ের শ্বশুরবাড়ির তরফ থেকে ফোন করে তাঁদের বলা হয় যে, দুপুর আড়াইটে নাগাদ রসিকা ডি এল খান রোডের বাড়ির চারতলা থেকে কোনওভাবে পড়ে গিয়েছেন। বাড়ির প্রত্যেকে হাসপাতালে ছুটে যান। চিকিৎসা চলাকালীন রাত ৯টা ৩৫ মিনিট নাগাদ হাসপাতালে রসিকার মৃত্যু হয়।
পরের দিন রসিকার বাবা নিউ আলিপুর (New Alipore) থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। জানান, তাঁর মেয়ের উপর দীর্ঘদিন ধরে অমানুষিক অত্যাচার করা হয়েছে। যার ফলে মেয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন। এরপরই পুলিশ কুশলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। কুশলের বাবা শিল্পপতি নরেশ আগরওয়াল জানান, ১৬ ফেব্রুয়ারি যখন ঘটনাটি ঘটে, তখন তিনি ও তাঁর ছেলে কেউই বাড়িতে ছিলেন না। পুলিশ এই ঘটনার তদন্ত করছে। তাঁদের পুলিশ, আইন ও আদালতের উপর ভরসা আছে। ছেলের উপর যে অভিযোগগুলি তোলা হচ্ছে, সেগুলি ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি ওই শিল্পপতির।
প্রাথমিক তদন্তের পর লালবাজার জানিয়েছে, এক মনোবিদের পরামর্শ নিচ্ছিলেন রসিকা। ওই মনোবিদকে পারিবারিক ব্যাপারে কিছু জানিয়েছেন কি না, তা জানতে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। বাড়ির যে সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া গিয়েছে, তাতে রসিকা ঝাঁপ দিয়েছেন, তার ইঙ্গিত মিলেছে। জৈন পরিবারের সঙ্গে পুলিশ কথা বলেছে। কিন্তু আগরওয়াল পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। তাঁরা গ্রেপ্তারি এড়াচ্ছেন, এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। রসিকার পরিবারের সূত্রের খবর, দক্ষিণ কলকাতার একটি নামী কলেজের মেধাবী ছাত্রী ছিলেন মৃত বধূ। বিবিএ পাস করার পর পারিবারিক ব্যবসাও দেখতে শুরু করেন তিনি। সিঙ্গাপুরের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। রাজ্যে তাঁদের মেয়ের শ্বশুরবাড়ির একাধিক হোটেল ও রিসর্ট রয়েছে। একটি সিমেন্ট কোম্পানির মালিক মেয়ের শ্বশুর। জৈন পরিবারের দাবি, মামলার ভিত্তিতে আগরওয়াল পরিবারের বিরুদ্ধে পুলিশ তাড়াতাড়ি আইনি ব্যবস্থা নিক। ঘটনাটির তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.