ছবি: প্রতীকী
অর্ণব আইচ: প্রোমোটিং বিবাদের জেরে এক মহিলার রহস্যমৃত্যু। দক্ষিণ শহরতলির হরিদেবপুর থানা এলাকার পূর্বপাড়া রোডে ঘটেছে এই ঘটনাটি। সোমবার ভোররাতে তাঁকে বাড়ির কাছেই পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরিবারের দাবি, মহিলাকে অ্যাসিড খাইয়ে ‘খুন’ করা হয়েছে। হরিদেবপুর থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। মহিলার স্বামীর অভিযোগের ভিত্তিতে খুনের অভিযোগে সমীর চক্রবর্তী, কিশোরকুমার গুপ্তা ও ডা. নকুলচন্দ্র শী নামে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ময়নাতদন্তের পর চিকিৎসকরা পুলিশকে জানিয়েছেন, অ্যাসিডজাতীয় কিছু খেয়ে লক্ষ্মীদেবী সাউ (৪৫) নামে ওই মহিলার মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু তাঁকে জোর করে খাইয়ে খুন করা হয়েছে, এমন কোনও প্রমাণ মেলেনি। অ্যাসিড তাঁর মুখ থেকে পাকস্থলী পর্যন্ত গিয়েছে। যে প্রত্যঙ্গ দিয়ে অ্যাসিড গিয়েছে, সেগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েই তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর শরীরে এমন কোনও চিহ্ন মেলেনি যাতে প্রমাণিত হয় যে, তাঁর উপর জোর খাটানো হয়েছে। ফলে তিনি অ্যাসিড খেয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন, এমন সম্ভাবনাই রয়েছে। সোমবার এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে হরিদেবপুরের পূর্বপাড়ায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশকে আটকে বাধা দেওয়া হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রত্যেকদিন ভোরে প্রাতঃভ্রমণে বের হতেন লক্ষ্মীদেবী সাউ। এদিন ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ এক প্রতিবেশী মহিলার ছেলে উত্তম সাউকে ফোন করে বলেন, তাঁর মা বাড়ির সামনে পড়ে রয়েছেন। তাঁরা বাইরে এসে মহিলাকে পড়ে থাকতে দেখেন। যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন তিনি। তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। তদন্তে পুলিশ জেনেছে, পাঁচ কাঠা একটি জমির মালিক সমীর চক্রবর্তী ২৭০ বর্গফুট জমি পিন্টু সাউকে বিক্রি করেন। প্রায় ২২ বছর আগে পিন্টু জমিটি বিক্রি করেন বীরেন্দ্র ও লক্ষ্মীদেবীকে। জমির সামনের অংশে দম্পতি একটি দোকান খোলেন। পিছনে দু’টি ঘর ও বাথরুম তৈরি করে থাকতে শুরু করেন। বছর সাতেক আগে সমীরবাবু ওই জমির উপর প্রোমোটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। লক্ষ্মীদেবীর পরিবারকে ফ্ল্যাট দিতে চাইলেও তাঁরা দোকানের জন্য জায়গার দাবি করেন। প্রোমোটিং ঘিরে বিবাদের জেরে ওই জায়গাটি বাদ দিয়েই বহুতল তৈরি হয়। কিন্তু সাউ পরিবারের সঙ্গে ফ্ল্যাটের বাসিন্দা সমীরবাবু, কিশোরকুমার গুপ্তা ও ডাক্তারবাবুর সঙ্গে ময়লা ফেলা নিয়ে গোলমাল হত প্রায়ই। সাউ পরিবার বাথরুমের দেওয়াল সারাতে গেলে বহুতলের বাসিন্দারা বাধা দেন।
পুলিশ ও পুরসভার কাছে অভিযোগ, পালটা অভিযোগ হয়। শেষে বহুতলের পাঁচিল থেকে এক ফুট বাদ দিয়ে বাথরুমের দেওয়াল তৈরি হয়। ফের দোকান সারাই ঘিরেও গোলমাল বাধে। মিটমাটের জন্য রবিবার সাউ পরিবারের সঙ্গে বহুতলের বাসিন্দাদের বৈঠক বসে। লক্ষ্মীদেবী সাউ একটি চুক্তিতে সই করেন। কিন্তু মহিলার ছেলে উত্তম বাড়ি ফেরার পর মা ও ছেলের মধ্যে সই করা নিয়েই বচসা শুরু হয়। ঘটনার বিবরণ জানতে এলাকার একটি সিসিটিভি পরীক্ষা করা হচ্ছে। আশপাশ থেকে অ্যাসিডের বোতল মেলেনি। সেই ক্ষেত্রে তিনি বাড়ির ভিতরে অ্যাসিড খেয়ে বাইরে বেরিয়ে পড়েন না কি বাইরেই খেয়েছিলেন সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.