কলহার মুখোপাধ্যায়: রানির মতো ছিলেন প্রাসাদে। অতিথি আপ্যায়ণে ভোজন পর্বটা সারা হতো তাঁর পরামর্শমতো। আবার কনভেন্ট স্কুলের ‘ম্যাডাম’ হিসেবেও জনপ্রিয়তা কম ছিল না। কিন্তু লকডাউনের দিনগুলোয় এহেন রাজকীয় জীবনের মোড় ঘুরে গিয়েছে একেবারে উলটোদিকে। এখন ফুটপাথে দিন কাটাতে হচ্ছে। আরও অনেকের সঙ্গে পাতে পড়ছে ত্রাণের খাবার। দীর্ঘমেয়াদি লকডাউন ত্রিপুরার কনভেন্ট শিক্ষিকা মানসী রায় এবং তাঁর পরিবারকে এভাবেই এনে ফেলেছে কলকাতার ফুটপাথে। তবে তাঁর এই কাহিনিতে আলোও আছে। দুর্দশাগ্রস্ত মানসীদেবী ও তাঁর পরিবারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন আরেক সহৃদয় মহিলা। তুলে দিয়েছেন টাকা।
আগরতলার মাস্টারপাড়ার বাসিন্দা বছর পঞ্চাশের মানসীদেবী। সেখানকার একটি কনভেন্ট স্কুলে পড়াতেন। অসুস্থ ছোট ছেলে অভিজ্ঞানের পড়াশোনায় সাহায্য করবেন বলে বছর পাঁচ আগে ছেড়ে দেন শিক্ষকতা। পারিবারিক কেটারিং ও ডেকরেটিংয়ের ব্যবসা সামলাতেন। সবই চলছিল স্বাভাবিক ছন্দে। হঠাৎ অভিজ্ঞানের গলায় টিউমার ধরা পড়ে। চিকিৎসার জন্য মানসীদেবীকে আসতে হয় কলকাতায়। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি তাঁরা সপরিবারে অর্থাৎ মানসীদেবী, স্বামী গোপালচন্দ্র রায় এবং তিন ছেলে আসেন কলকাতায়। এক বেসরকারি হাসপাতালে অভিজ্ঞানকে ভরতি করানো হয়। পরে সরকারি হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলে। ২৯ মার্চ কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে ফেরার কথা ছিল তাঁদের। কিন্তু লকডাউনে বাধা পড়ল ফেরায়।
প্রথম দুটো দিন শিয়ালদহ স্টেশনে কাটিয়েছিলেন ৫ জন। সেখান থেকে লাগেজ খোয়া যায়। সহযাত্রীদের কথা শুনে চলে আসেন কলকাতা স্টেশনে। ব্যাস, সেই থেকে স্টেশন এবং স্টেশন লাগোয়া ফুটপাথই ঠিকানা। হাতে কিছু টাকা ছিল। করোনা আবহে তার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করেছেন মানসী দেবী। সেই টাকায় মাস্ক কিনে শ্যামবাজার এলাকায় বিক্রি করছেন। কিনেছেন একটি স্টোভ। ফুটপাথে বসে চাল-ডাল ফুটিয়ে দিনের বেলার খাবারটুকুর ব্যবস্থা করছেন। রাতে ত্রাণের ভরসা।
আগরতলার একাধিক অনুষ্ঠানে মানসীদেবীর কেটারিংয়ের রান্না খেতে মানুষের পাত পড়ে। বর্তমানে কলকাতা স্টেশনে বাকি বিশজনের সঙ্গে বসে ত্রাণের খাবার খেতে হচ্ছে। মুখ ফুটে আরেকবার ভাত চাইতে লজ্জা হয়। তাই কোনোদিনই পেট ঠিকমতো ভরে না এঁদের কারোরই। তবে এমন দুর্দিনে মানসী রায়ের পাশে দাঁড়িয়েছেন শুভা দেববর্মণ। ঢাকুরিয়ার বাসিন্দা, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা তাঁদের জন্য৫০০০টাকা পাঠিয়েছেন। তাতে কিছুটা সুরাহা হয়ত মিলবে, কিন্তু বাড়ি ফেরা যাবে কি? এই সংশয় অহর্নিশ তাড়া করে ফিরছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.