গোবিন্দ রায়: সারাদিন আইনের কচকচানি আর কাগজ-কলমের ঘষঘষানির বাইরে বেরিয়ে আদালতের এক কর্মী যে প্রতিভার পরিচয় দিলেন, তা দেখে অবাক স্বয়ং বিচারপতি। তাঁরই এজলাসের কর্মী (কোর্ট নং – ৪) যে সম্প্রতি শখের ফটোগ্রাফি করে জাতীয় স্তরে শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা পেয়েছেন, তা জানতেনই না কলকাতা হাই কোর্টের (Calcutta HC) বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন। ভরা এজলাসে আদালত কর্মী দেবদত্ত চক্রবর্তীর কথা বলেন এক আইনজীবী। আর তাতেই একেবারে বিস্মিত বিচারপতি। জানালেন, “আমাদের মধ্যে বসে আছেন এমন বহুরূপী প্রতিভাবান মানুষ! এ তো জানাই ছিল না।”
দেবদত্ত চক্রবর্তী পেশায় আদালত কর্মী। নেশায় একজন ফটোগ্রাফার (Photographer)। সময়-সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়েন ছবির খোঁজে। সেই নেশাই যে তাঁকে শ্রেষ্ঠত্বের শিখরে পৌঁছে দেবেন, তা কখনওই ভাবেননি কলকাতা হাই কোর্টের ৪ নং এজলাসের কোর্ট কো-অর্ডিনেটর দেবদত্ত। তাঁর ক্যামেরার লেন্সে বহু ছবিই জীবন্ত হয়ে ফুটে উঠেছে। যা বহু মানুষের প্রশংসাও কুড়িয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি ফুড ফটোগ্রাফিতে তাঁর তোলা কাবাবের ছবি শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা পেয়েছে।
‘পিংক লেডি ফুড ফটোগ্রাফার’ প্রতিযোগিতায় পৃথিবীর ৬০ টি দেশ থেকে প্রায় ১০০০ প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেছিলেন। তার মধ্যে দেবদত্তর এই ছবিটি সেরার তকমা কেড়ে নিয়েছে। ছবিটিতে একজন কাশ্মীরের শ্রীনগরে (Srinagar) ফুটপাতের খাবার বিক্রেতাকে দেখা যাচ্ছে কাবাব তৈরি করতে। দেখা যাচ্ছে, তিনি যখন কাবাব তৈরি করছেন চারকোলের ধোঁয়ায় বিশেষত্ব পায়। সেখানে একটি বিশেষ আলোর আবহ তৈরি করেছে। তাই শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা পেয়েছে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞরা।
হাই কোর্টের ৪ নম্বর এজলাসে চলছিল তখন ডিএ (DA) মামলার শুনানি চলছে। ভিড়ে ঠাসা এজলাসে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় বিচারপতির উদ্দেশে বলেন, “আমাদের মধ্যে থেকে একজন জাতীয় পুরস্কার এনেছেন, আপনি কি সেটা জানেন?” অবাক হয়ে বিচারপতি ট্যান্ডন জিজ্ঞাসা করেন, “তিনি কে?” জানতে পারেন, বিচারপতির আসনের সামনেই রোজ বসে যিনি কোর্ট কো-অর্ডিনেটরের কাজ করেন, সেই দেবদত্ত চক্রবর্তীই জাতীয় পুরস্কার বিজয়ী। তা শুনে আর চুপ করে থাকতে পারেননি স্বয়ং বিচারপতি। ভরা এজলাসেই তাঁর তোলা ছবি দেখতে চাইলেন। তাঁর তোলা ছবি দেখে রীতিমতো স্তম্ভিত হলেন বিচারক।
দেবদত্ত চক্রবর্তী জানালেন, নিজেকে একটা গণ্ডির মধ্যে ধরে রাখতে চান না, তাই এই ছবি তোলার শখ। একবার হাই কোর্টের তৎকালীন বিচারপতি নিশীথা মাত্রেও তাঁর এই প্রতিভার জন্য তাঁকে ছুটি দিয়েছিলেন। দেবদত্ত বাবু জানান, “রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলের মতো বড় মাপের মানুষ আমার কথা তুলে ধরলেন, আমার প্রশংসা করলেন সেই মুহূর্তে আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলাম। পরে বিচারপতির প্রশংসা শুনে আমি বাকরুদ্ধ। আগামী দিন এরকম সাফল্য আরোপ ফিরে আসুক এটাই চাই।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.