ছবি: প্রতীকী
কলহার মুখোপাধ্যায়, বিধাননগর: প্রবল ডায়েরিয়া নিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে গেলেন সল্টলেক সেক্টর সি এর বাসিন্দা এক বৃদ্ধা। সে হাসপাতাল গায়ে জ্বর রয়েছে বলে পাঠালো এক সরকারি হাসপাতালে। সেই হাসপাতাল কিছুই হয়নি বলে বাড়িতে ফেরত পাঠালো। আবাসনের বাসিন্দারা বললেন, হাসপাতাল ঘুরে করোনা নিয়ে যে ফেরেননি, তার গ্যারান্টি কে দেবে? আবার অন্ধ্রপ্রদেশে কর্মরত এক যুবক। লকডাউন ঘোষণার পর বাড়ির টানে পাঁচটি লরি বদলে কোনরকমে সল্টলেকের বাড়িতে ফিরলেন। বাসিন্দারা বললেন, প্রবেশ নিষেধ। শেষে বিধাননগর পুরো নিগমের স্বাস্থ্য বিভাগ রাজারহাট কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে পাঠালো যুবককে। করোনা আতঙ্ক। তা থেকে তৈরি হওয়া অতি সচেতনতা। এবং তাকে কেন্দ্র করে অতি সক্রিয়তার একের পর এক ঘটনা চমকে দিচ্ছে অভিজাত এই উপনগরীকে। আর প্রশ্ন উঠছে, মানুষ অসুস্থ হলে করবেনটা কি?
সোমবার সেক্টর থ্রি’র ওই বৃদ্ধা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি সেই আবাসনের এক বাসিন্দার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সেই বাসিন্দার বক্তব্য, তিনি বেসরকারি এক হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্সকে খবর দেন। কিন্তু সেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চূড়ান্ত দুর্ব্যবহার করেন তাঁর সঙ্গে। শেষ পর্যন্ত হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স এসে রোগীকে নিয়ে গেলেও, কিছুক্ষণ পর ফের জানানো হয়, তাঁকে ভরতি নেওয়া হবে না। হাসপাতালের বাইরে বের করে দেওয়া হচ্ছে নিয়ে চলে যান। এর কিছুক্ষণ পরেই আবাসনের ওই বাসিন্দার কাছে বৃদ্ধার এক আত্মীয়ার ফের ফোন আসে। আত্মীয়ার কথায়, বৃদ্ধাকে আগের হাসপাতাল থেকে রেফার করে কলকাতার এক সরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। সেখানেও তাঁর চিকিৎসা করেননি ডাক্তারবাবুরা।
উলটে তাঁর কিছু হয়নি, শুধু পেট খারাপ হয়েছে বলে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। বাধ্য হয়ে বৃদ্ধা সেই সরকারি হাসপাতালের বাইরে অপেক্ষা করেন বাড়ি ফেরার জন্য। এরপরে বৃদ্ধা তাঁর আত্মীয়া এবং কলকাতা পুলিশের সহযোগিতায় অ্যাম্বুল্যান্সে করে সল্টলেকের বাড়িতে ফেরেন। মানবিকতার কথা ভেবে স্বামী এবং মেয়েহারা বৃদ্ধাকে আবাসনে ঢুকতে কেউ বাধা দেয়নি। কিন্তু এখন তাঁদের অনেকেই সংশয় প্রকাশ করে বলছে, “ওনার জ্বর এবং পেট খারাপ ছিল। তাঁর মধ্যে উনি যে দুটি হাসপাতালে গিয়েছিলেন, সেখানেও প্রচুর করোনা রোগী রয়েছেন। এই অবস্থায় তাঁর কিছু হয়নি এই গ্যারান্টি কে দেবে?” এই নিয়ে এখন সরগরম সেই আবাসন।
সার্বিক পরিস্থিতির কথা বিচার করে বিধাননগর পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের মেয়র পারিষদ প্রণয় রাযের বক্তব্য, “করোনা নিয়ে সকলেই আতঙ্কিত। তবে মানুষের মানবিক হওয়াটাও অত্যন্ত প্রয়োজন। কোথাও সংশয় তৈরি হলে কাউন্সিলরের মাধ্যমে পুরসভার সঙ্গে যোগাযোগ করুক। প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।” বিধাননগর কমিশনারেটের প্রবীণদের সাহায্যার্থে তৈরি সাঁঝবাতি প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত এক পুলিশকর্তাও বলেন, “তাঁদের কাছে এবিষয়ে কোনও খবর আসেনি। তবে পরবর্তী সময়ে আসলে অবশ্যই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তবে সল্টলেকের বাসিন্দাদের প্রশ্ন, করোনা নয়, যদি সাধারণ কোনও সমস্যা হয় তাহলে রোগীরা প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া হাসপাতালে গেলে এভাবেই ফিরে আসতে হবে?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.