ফাইল ছবি
অর্ণব আইচ: এসএসকেএম হাসপাতালে ভরতি হওয়ার জন্য অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। লাগে সুপারিশ। বৃদ্ধ দম্পতিকে এমনই বুঝিয়েছিলেন তাঁদেরই এক আত্মীয়, যিনি দক্ষিণ কলকাতায় নিজেকে একজন রাজনৈতিক নেতা বলেও পরিচয় দেন। ওই ব্যক্তি তাঁর বৃদ্ধ আত্মীয়কে ভরতি করানোর নাম করে বৃদ্ধার কাছ থেকে নেন দু’লাখ টাকা। তার বদলে হাতে দেন বেশ কিছু সুপারিশের চিঠি। স্বাস্থ্যকর্তা থেকে শুরু করে নামী চিকিৎসক, অনেকের সুপারিশের চিঠি একসঙ্গে দেখে সন্দেহ হয়েছিল এসএসকেএম হাসপাতালের সুপারের। খোঁজ নিয়ে তিনি জানতে পারেন, প্রত্যেকটি চিঠিই জাল। অভিযোগ, দু’লাখ টাকা নিয়ে দম্পতিকে প্রতারণা করেছেন ওই আত্মীয় তথা রাজনৈতিক নেতা। যদিও কোনও সুপারিশের প্রয়োজন হয়নি। এসএসকেএম হাসপাতালের সুপার নিজেই কার্ডিওলজি বিভাগে বৃদ্ধকে ভরতি করানোর ব্যবস্থা করেন। তিনি ভবানীপুর থানায় বিশ্বরূপ ঘোষ নামে বৃদ্ধ দম্পতির ওই আত্মীয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ প্রতারণা, জালিয়াতি ও ষড়যন্ত্রের মামলা শুরু করেছে অভিযুক্তর বিরুদ্ধে।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই দম্পতি রঞ্জন বসু ও তাঁর স্ত্রী সবিতা বসু দক্ষিণ কলকাতার রিজেন্ট পার্ক এলাকার পল্লিশ্রীর বাসিন্দা। রঞ্জনবাবু বিদ্যুৎ দপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিক। পায়ের সমস্যার জন্য তিনি বহুদিন ধরেই শয্যাশায়ী। এর মধ্যেই মাস দু’য়েক আগে তাঁর হৃদরোগের সমস্যা ধরা পড়ে। রঞ্জনবাবুর স্ত্রী সবিতা বসু জানিয়েছেন, তাঁরা দু’জনেই কলকাতা পুলিশের প্রকল্প ‘প্রণাম’-এর সদস্য। অসুস্থতার কথা শুনে ‘প্রণাম’-এর পক্ষে পুলিশের সহযোগিতায় প্রথমে রঞ্জনবাবুকে বাইপাসের কাছে একটি বেসরকারি হাসপাতালে দেখানো হয়। কিন্তু ওই হাসপাতালে চিকিৎসার খরচ অনেকটাই। যেহেতু তাঁর বাড়িতে আর বিশেষ কেউ নেই, তাই তিনি সরকারি হাসপাতালের ভিড় এড়িয়ে স্বামীকে ভরতি করানোর জন্য মুখ্যমন্ত্রীর অফিসে গিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর অফিস থেকে পাওয়া সুপারিশের চিঠি নিয়ে তিনি এনআরএস হাসপাতালে স্বামীকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান। প্রাথমিক চিকিৎসার পর ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, তাঁর স্বামীর পেসমেকার বসানোর প্রয়োজন। তার জন্য এসএসকেএম হাসপাতালের ব্যবস্থা আরও ভাল। তাই তিনি স্বামীকে এসএসকেএম হাসপাতালে ভরতি করানোর জন্য প্রস্তুতি নেন।
[ মাদক ইঞ্জেকশন দিয়ে খুন? অ্যাপোলোর নার্সের মৃত্যুতে ঘনীভূত রহস্য ]
তখনই ‘ত্রাতা’ হয়ে এসে পাশে দাঁড়ান তাঁদের সেই আত্মীয় বিশ্বরূপ ঘোষ। ওই ব্যক্তি নিজেকে দক্ষিণ কলকাতার যাদবপুর ও সন্তোষপুর এলাকায় নিজেকে রাজনৈতিক দলের নেতা ও প্রভাবশালী ব্যক্তি বলে দাবি করেন বলে অভিযোগ বৃদ্ধার। বিশ্বরূপ বলেন, রঞ্জনবাবুকে এসএসকেএম হাসপাতালে ভরতি করার ব্যবস্থা তিনিই করবেন। কিন্তু তার জন্য অনেকের সুপারিশ লাগবে। অভিযোগ, বৃদ্ধার কাছ থেকে তিন দফায় ওই ব্যক্তি মোট দু’লাখ টাকা নেন। ভরতি হওয়ার জন্যই ওই টাকা লাগবে বলে জানান। আবার পরে সরকার সেই টাকা ফেরতও দিয়ে দেবে বলে টোপ দেন। বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে হাসপাতালের কিছু বিল, ‘বেড অ্যালটমেন্ট’-এর মতো নথিও তাঁর হাতে দেওয়া হয়। এসএসকেএম হাসপাতালের ডিরেক্টর থেকে শুরু করে হাসপাতালেরই নামী অর্থোপেডিক সার্জন, কার্ডিওলজি বিভাগের চিকিৎসক, স্বাস্থ্যবিভাগের দুই কর্তা ও অন্য দুই সরকারি কর্তার নামে সুপারিশের চিঠি দেওয়া হয় সবিতা বসুকে। তিনি একটি অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করে ওই চিঠি ও নথিগুলি নিয়ে এসএসকেএম হাসপাতালে যান। অভিযুক্ত ব্যক্তি বৃদ্ধাকে বলেছিলেন, উডবার্ন ওয়ার্ডে তাঁর স্বামীকে ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি সেখানে নিয়ে গিয়ে নথিগুলি দেখানোয় সন্দেহ হয় চিকিৎসকদের। তাঁরা হাসপাতালের সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। এসএসকেএম হাসপাতালের সুপার অধ্যাপক ডা. রঘুনাথ মিশ্র ওই সুপারিশের চিঠি ও নথিগুলি পরীক্ষা করেই বুঝতে পারেন, সেগুলি জাল। সেগুলি তৈরি করার জন্য জাল সই ও জাল স্ট্যাম্পও ব্যবহার করা হয়েছে। সুপার সবিতা বসুর সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারেন, টাকা নিয়ে তাঁদের প্রতারণা করেছেন ওই আত্মীয়। তিনি সঙ্গে সঙ্গেই বৃদ্ধকে ভরতি করানোর ব্যবস্থা করেন। সুপার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সুপারের অভিযোগের ভিত্তিতে এই বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
[ সল্টলেকে হামলার শিকার দিলীপ ঘোষ, ভাঙল গাড়ির কাচ ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.