সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ফ্যাশন ট্রেন্ড অনুযায়ী দাড়ি রেখেছিলেন এক হিন্দু যুবক। আর তাতেই যেন কাল হল তাঁর। তিনি জানতেন না এক ব্রাহ্মণ পরিবারের মেয়ের সঙ্গে ঘোরাফেরা করতে গেলে দাড়ি রাখা চলে না। এমনই ‘অপরাধে’ নীতিপুলিশদের রোষের শিকার ওই যুবক। একমুখ ভরতি দাড়ি নিয়ে কেন ব্রাহ্মণ পরিবারের মেয়ের সঙ্গে ঘুরছেন তিনি, সেই প্রশ্ন তুলে মারধরও করা হয় ওই তরুণ-তরুণীকে। নাগেরবাজার থানার পুলিশের বিরুদ্ধে উঠল নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ।
গত শনিবার নাগেরবাজারের পানশালাতে গিয়েছিলেন জয়দীপ সেন এবং মৈত্রেয়ী গঙ্গোপাধ্যায়। সেখানে মদ্যপান করে বেরোতে বেশ খানিকটা রাত হয়ে যায় তাঁদের। এরপর ওই পানশালার কাছেই একটি গলিতে দাঁড়িয়ে ধূমপান করছিলেন দু’জনে। অভিযোগ, এমন সময় তাঁদের এক বৃদ্ধ গালিগালাজ করেন। তা শুনে গলি থেকে বেরিয়ে আসছিলেন জয়দীপ। তাতেও গালিগালাজ কমেনি। ধৈর্য রাখতে না পেরে ওই বৃদ্ধকে উদ্দেশ্য করে গালিগালাজ করেন মৈত্রেয়ীও। তাতে অশান্তি আরও বাড়তে থাকে। অভিযোগ, ওই বৃদ্ধ মৈত্রেয়ীকে মারধর করতে শুরু করেন। বাঁচাতে যান জয়দীপ। ইতিমধ্যে এলাকার বেশ কয়েকজন জড়ো হয়ে যায় ঘটনাস্থলে। তাঁদের ঘিরে ধরে স্থানীয়রা। নাম-ঠিকানা জিজ্ঞাসা করে তাঁদের। তরুণীর অভিযোগ, জয়দীপের মুখে দাড়ি দেখে তাঁকে মুসলমান বলে ভাবে স্থানীয়রা। মুসলমান হয়ে কীভাবে ব্রাহ্মণের মেয়ের সঙ্গে প্রেম করতে পারেন একজন, সেই প্রশ্ন করতে থাকেন তারা। অশান্তি চলাকালীন পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। তরুণ-তরুণীকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
প্রথমে জয়দীপ-মৈত্রেয়ী ভেবেছিলেন পুলিশ হয়তো তাঁদের কথা শুনবেন। কিন্তু থানায় পৌঁছনোর পরেই তাঁদের ভুল ভাঙে। অভিযোগ, নাগেরবাজারের ওই বাসিন্দাদের মতোই পুলিশও তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতে শুরু করে। খবর দেওয়া হয় তরুণ-তরুণীর বাড়িতেও। পরিজনেরাও থানায় জড়ো হয়ে যান। মৈত্রেয়ীর দাবি, ৬০০ টাকার বিনিময়ে তাঁদের থানা থেকে ছাড়তে রাজি হয় পুলিশ। তবে ওই তরুণী চেয়েছিলেন নাগেরবাজারের ওই ‘মাতব্বর’দের পালটা অভিযোগ দায়ের করবেন। তবে সেই অভিযোগ জমা নিতে পুলিশ অস্বীকার করে বলে অভিযোগ মৈত্রেয়ীর। বাধ্য হয়ে থানা থেকে সেই রাতের মতো বাড়ি ফিরে আসেন তাঁরা। বাড়ি ফিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেন আক্রান্তরা। জয়দীপের অভিযোগ, এরপর তাঁদের দু’জনকে থানায় ডেকে পাঠান দমদম থানার আইসি। ওই পুলিশ আধিকারিকের কাছে বুধবার রাতে অভিযোগ দায়ের করেন তাঁরা।
জয়দীপ-মৈত্রেয়ীর দাবি অভিযোগ দায়ের করেও যেন বিপাকে পড়েছেন তাঁরা। কারণ, প্রায়শই সোশ্যাল মিডিয়ায় ধর্ষণ এবং খুনের হুমকি পাচ্ছেন মৈত্রেয়ী। মারধরের ঘটনায় জড়িত সঞ্জীব সাহা নামে এক ব্যক্তি সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে ট্যাগ করে মানসিকভাবে হেনস্তা করছে বলেই অভিযোগ তরুণ-তরুণীর। যদিও পুলিশের দাবি, তদন্ত করে গোটা ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। খুব তাড়াতাড়ি অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.