Advertisement
Advertisement
Operation

জন্ম থেকেই শিরদাঁড়া ‘S’ অক্ষরের মতো! জটিল অস্ত্রোপচারে নাবালিকাকে সুস্থ করল কলকাতার হাসপাতাল

চিকিৎসকদের ভূমিকায় আপ্লুত নাবালিকার মা।

A Kolkata hospital cured the minor with rare surgery | Sangbad Pratidin
Published by: Tiyasha Sarkar
  • Posted:November 24, 2020 8:17 pm
  • Updated:November 24, 2020 8:23 pm  

অভিরূপ দাস: জন্মানো ইস্তক পৃথিবীকে সোজা দেখা হয়নি তার। কারণ, পিঠটাই বেঁকেছিল। ইংরেজি ‘এস’ অক্ষরের মতো। আসছে জন্মদিনের আগেই মায়ের কাছে গিফট চেয়েছিল শ্রীদিত্যা (নাম পরিবর্তিত)। সবকিছু সোজা দেখতে চাই। বছর এগারোর মেয়ের জন্য এ হাসপাতাল থেকে সে হাসপাতাল ছুটছিলেন মৃন্ময়ী। কোভিড আবহে অবশেষে জটিল অস্ত্রোপচার করে নাবালিকার ‘সোজা পৃথিবী’ দেখার ইচ্ছে পূরণ করল ইন্সটিটিউট অফ নিউরো সায়েন্স (Institute of Neurosciences Kolkata)।

বিরল নয় স্কোলিওসিস (Scoliosis)। তবে অত্যন্ত জটিল এর অস্ত্রোপচার। যে কারণে ১০০ জনের মধ্যে ৮০ জন ভয়েই অপারেশন করান না। চিকিৎসকের কথায়, ঝুঁকি রয়েছে বিস্তর। অস্ত্রোপচারে মেরুদণ্ডে একাধিক স্ক্রু লাগাতে হয়। সে সময় খেয়াল রাখতে হয় যেন পিঠের নার্ভগুলো কোনওভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। তাহলে সারাজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যেতে পারে রোগী। এজন্য অস্ত্রোপচারের আগে ইন্ট্রা অপারেটিভ নিউরো মনিটরিং করে দেখে নেওয়া আবশ্যিক। ট্রামে, বাসে হামেশাই দু’একজন কুঁজো মানুষ দেখা যায়। সমীক্ষা বলছে, প্রতি চল্লিশজন মহিলার মধ্যে একজনের মেরুদণ্ড অল্প হলেও বাঁকা থাকে। চিকিৎসকের নিগুঢ় পর্যবেক্ষণেই তা ধরা পরে। চিকিৎসকের কথায়, লোকজন ভয়েই অস্ত্রোপচার করান না। মেরুদণ্ড সামান্য বাঁকা থাকলে কোনও সমস্যা হয় না। কিন্তু যখন তা ধনুকের মতো বেঁকে যায় তখনই সমস্যার শুরু। যেমনটা হয়েছিল শ্রীদিত্যার। মেরুদণ্ডের শল্যচিকিৎসক ডা. অনিন্দ্য বসুর কথায়, শিড়দাঁড়া যখন অত্যধিক বেঁকে যায় তখন ফুসফুস তার স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারায়। ফুসফুসের কাজ ব্যহত হলে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমতে থাকে।

Advertisement

The Kolkata hospital cured the minor with rare surgery

[আরও পড়ুন: করোনা কালে বড়দিন-বর্ষবরণে কীভাবে মানা হবে দূরত্ববিধি? পরিকল্পনা শুরু কলকাতা পুলিশের]

১ মার্চ জন্মদিন শ্রীদিত্যার। মেয়ের জেদ মেনে কোভিড আবহে কীভাবে তার আগে তাকে সোজা করা যায় সেটাই ছিল চ্যালেঞ্জ। অনেকেই শ্রীদিত্যার মাকে পরামর্শ দেন এ রাজ্যে ওই অস্ত্রোপচারের ঝুঁকি প্রচুর। আদতে মেরুদণ্ডের আশপাশে অনেক নার্ভ। তা ক্ষতিগ্রস্ত হলে বিকলাঙ্গ হয়ে যেতে পারে রোগী। কোয়েম্বাটুর কিম্বা বেঙ্গালুরুতে চলে যান। করোনা কালে ভিনরাজ্যে গিয়ে অস্ত্রোপচারের সাহস পাচ্ছিলেন না মৃন্ময়ী। মেয়েকে নিয়ে মল্লিক বাজারের এই হাসপাতালেই আসেন। ঠিক ছিল পুজোর আগে অস্ত্রোপচার হবে। এদিকে পিছু ছাড়ছিল না কোভিড। আচমকাই কোভিড পজিটিভ হন শ্রীদিত্যার মা। ফের ১৪ দিনের অপেক্ষা। অবশেষে ৪ নভেম্বর অস্ত্রোপচার। সাড়ে তিন ঘণ্টার জটিল অস্ত্রোপচারের নাম স্কোলিওসিস কারেকশন সার্জারি। এর দুটি ভাগ। প্রথম ভাগে মেরুদণ্ডে অত্যন্ত সাবধানতার সঙ্গে স্ক্রু এঁটে দেওয়া হয়। এরপর রড লাগিয়ে ধীরে ধীরে সোজা করা হয় মেরুদণ্ড। আপাতত একদম সোজা শ্রীদিত্যা। এই অস্ত্রোপচারের ডা. বসুর সঙ্গে ছিলেন ডা. ক্রিস্টোফার জারবার এবং ডা. ডিম্পল সাহ।

স্কোলিওসিসের শিকড় রয়েছে জিনের ভিতর। পারিবারিক ইতিহাস থাকলে এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। সাধারণত পুরুষদের থেকে মহিলাদের মধ্যেই স্কোলিওসিস দেখা যায় বেশি। অর্থো স্পাইন সার্জন ডা. অনিন্দ্য বসুর কথায়, সাধারণত জন্ম থেকেই এ অসুখ দেখা যায়। অনেকক্ষেত্রে ১১ থেকে ১৪ বছরের মধ্যেই সর্বোচ্চ বেঁকে যায় মেরুদণ্ড। শ্রীদিত্যার মায়ের কথায়, “যখন ও ছোট ছিল আমি কিন্তু এতটা খেয়াল করিনি। গত দেড় দু’বছরেই লক্ষ্য করি মেরুদণ্ডটা সাংঘাতিক বেঁকে যাচ্ছে।”

[আরও পড়ুন: নারদা মামলায় ফিরহাদ, মদন, প্রসূনকে নোটিস ইডির, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ তৃণমূলের]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement