শুভঙ্কর বসু: এবার রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) খোলা চিঠি লিখলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত প্রখ্যাত চিকিৎসক তথা কার্ডিওজিস্ট ডা. ইন্দ্রনীল বসুরায়। চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, “গোটা পৃথিবীতে ক্রমশই ভয়ংকর আকার নিচ্ছে কোভিড-১৯। এর ভবিষ্যৎ কী তা নিয়েও নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। তাই সতর্ক থাকতে হবে প্রত্যেককে।”
তাঁর কথায়, আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন রাষ্ট্র যারা আর্থিক ও চিকিৎসা পরিকাঠামোগতভাবে ভারতের থেকে অনেক এগিয়ে তারাও এই ভাইরাসে কাবু হয়েছে। এটি হল সর্বকালের সবচেয়ে ভয়ংকর সংক্রমণ যা সমগ্র মানব সমাজ প্রথমবারের জন্য সম্মুখীন হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতবর্ষ এই বিপদের বাইরে নয়। এই পরিস্থিতিতে সঠিক পরিকল্পনাই বাঁচার একমাত্র উপায় হতে পারে। চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী কে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেছেন, “মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মহাশয়া আমি কোভিড নিয়ে কাজ করছি এবং আপনাকে এটা জানাতে বাধ্য হচ্ছি যে এটি হল সর্বকালের সবচেয়ে ভয়ংকর সংক্রমণ যা সমগ্র মানব সমাজ প্রথমবারের জন্য সম্মুখীন হয়েছে। কারণ, চিন উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই সংক্রমণ ছড়িয়েছে। তারা নিজেদের দেশের মধ্যে ভাইরাসের উৎসস্থল ইউহান প্রদেশ ও নিজেদের দেশের মধ্যে সমস্ত উড়ান চলাচল বন্ধ রাখলেও ইচ্ছে করেই তাদের দেশ থেকে আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল বন্ধ করেনি। এবং নিজেদের দেশে একাধিক ব্যবস্থা নেওয়ার পর এই ভাইরাসকে গোটা পৃথিবীতে ছড়াতে দিয়ে অতিমারির পরিস্থিতি তৈরি করেছে। ফলত এটা পরিষ্কার যে এই সমস্যায় আপনি এবং আপনার সরকারের কোনও ভূমিকা নেই। গোটা বিশ্বে সমস্যার সম্মুখীন। তাই অবিলম্বে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করে এই মারন ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয় করতে হবে।
তিনি বলেন, এটা মনে রাখতে হবে এই ভাই রাসের সংক্রমণে গোটা বিশ্বে হাজার হাজার মানুষ মারা গিয়েছেন। এমনকি মৃত্যু অব্যাহত রয়েছে। এটাও বুঝতে হবে যে এই সংক্রমণে শুধু বয়স্ক ব্যক্তিরাই মারা যাচ্ছেন এমনটা নয়, অনেক কম বয়সীরাও কোভিড সংক্রমণে মারা গিয়েছেন যাদের কোনও শারীরিক সমস্যা কোনও দিন ছিল না। ইউরোপ-আমেরিকায় এটা ঘটেছে। এই পরিস্থিতিতে সংক্রমণ এড়াতে তৎক্ষণাৎ চিহ্নিতকরণ ও পৃথকীকরণ প্রয়োজন। নচেৎ তা দাবানলের মতো ছড়াবে ওসব ছারখার করে দেবে।”
চিঠিতে তিনি আরও মনে করিয়ে দিয়ে বলেছেন,” কোন অজ্ঞাত কারণে ভারত পশ্চিমবঙ্গে ইউরোপ-আমেরিকার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি ঠিকই কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে যে তা হবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়? আর তেমনটা হলে পশ্চিমবঙ্গের মতো ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকায় তা হবে যথেষ্ট চিন্তার কারণ। তাছাড়া আপনি ভাল করেই জানেন গোটা ভারত ও বিশেষত পশ্চিমবঙ্গে সংক্রমণের হার উত্তরোত্তর বাড়ছে। এটা হতেই পারে ভাগ্যক্রমে ভারতে ভাইরাসের চরিত্র বা ধরণ ভিন্ন হওয়ায় এখনো তা মারাত্মক আকার ধারণ করেনি। কিন্তু সেটা আত্মতুষ্টির জায়গা হতে পারে না। সঠিক পদক্ষেপের অভাবে পরবর্তীতে যদি এটি মারাত্মক আকার ধারণ করে তখন আক্ষেপের শেষ থাকবে না।”
চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, “এই পরিস্থিতিতে আমি মনে করি যেহেতু ভয়ংকর এই সংক্রমণের কোন সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি এখনও উদ্ভাবন করা যায়নি তাই সঠিক তথ্য সংগ্রহ ও তা প্রকাশ করা এবং যথাসম্ভব সামাজিক দূরত্ব বিধি ও লকডাউনই এর হাত থেকে নিষ্কৃতি একমাত্র উপায় হতে পারে। না হলে করোনা ভাইরাস অনিবার্যভাবে ধ্বংসাত্মক আকার নিতে বাধ্য। আর যেটা আপনি কখনই চাইবেন না। এছাড়াও আমার মনে হয়, করোনা চিকিৎসার জন্য কলকাতায় মাত্র দুটি হাসপাতাল যথেষ্ট নয়। বরং রাজ্যের প্রতিটি হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখা জরুরি। আমার আপনার কাছে অনুরোধ পরিস্থিতির গুরুত্ব বিচার করে অবিলম্বে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। যাতে এই কিলিং মেশিনকে অবিলম্বে থামানো যায়।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.