ছবি: প্রতীকী
অর্ণব আইচ: চিটফান্ড চক্রের পাণ্ডা চিকিৎসক! এক বছরের একটু বেশি সময় ধরে কলকাতার অন্তত বারোজন ‘আমানতকারী’ ডাক্তারকে প্রতারণার অভিযোগ উঠল তাঁর বিরুদ্ধে। অভিযোগ, প্রতারণা করা হয় ওড়িশার চিকিৎসকদের সঙ্গেও। ১২ কোটিরও বেশি টাকা প্রতারণার অভিযোগে কলকাতার চিকিৎসক ডা. উত্তমকুমার লেংকাকে গ্রেপ্তার করলেন পূর্ব কলকাতার প্রগতি ময়দান থানার পুলিশ আধিকারিকরা। মঙ্গলবার ওই চিকিৎসককে আলিপুর আদালতে তোলা হলে তাঁকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রগতি ময়দান থানা এলাকার মঠেশ্বরতলা রোডের একটি বহুতল আবাসনের বাসিন্দা এক চিকিৎসক সম্প্রতি এই ব্যাপারে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানান। তাঁর অভিযোগ অনুযায়ী, এই বছরের মাঝামাঝি ওই চিকিৎসকের সঙ্গে তাঁরই সহকর্মী চিকিৎসক ডা. উত্তমকুমার লেংকার যোগাযোগ হয়। অভিযুক্ত চিকিৎসক তাঁকে একটি চিটফান্ডে টাকা লগ্নি করতে বলেন। জানানো হয়, ওই চিটফান্ডে লগ্নি করলে প্রত্যেক মাসে মিলবে মোটা পরিমাণ সুদ। বছরের শেষে ওই চিকিৎসককে ৩৮ শতাংশ সুদ দেওয়া হবে বলেও টোপ দেওয়া হয়।
অভিযোগকারী চিকিৎসক ফাঁদে পা দেন। ‘বন্ধু’ চিকিৎসকের চিটফান্ডে লগ্নি করেন ২৭ লক্ষ টাকা। কিন্তু মাসিক সুদ না পাওয়ায় তাঁর সন্দেহ হয়। তিনি খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন যে, কলকাতার আরও কয়েকজন বিশিষ্ট চিকিৎসক ওই চিটফান্ডে লগ্নি করেছেন। কিন্তু কেউই টাকা পাননি। এই মাসেও তিনি পাওনা টাকা ফেরত চেয়ে ডা. উত্তমকুমার লেংকার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু অভিযুক্ত চিকিৎসক তাঁকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে থাকেন। এরপরই তিনি ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।
পুলিশ তদন্ত করে জানতে পেরেছে যে, ডা. লেংকা স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন থেকে এমডি পাস করেছেন। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের কাছেই রয়েছে তাঁর চেম্বার। এ ছাড়াও কলকাতার আশাপাশের কয়েকটি জেলায় রোগী দেখেন তিনি। চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে ওড়িশার ভুবনেশ্বরে কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে একটি চিটফান্ড সংস্থা খোলেন তিনি। নিজেই সেই চিটফান্ড সংস্থার নির্দেশক তথা কর্মকর্তা। যদিও তাঁর মূল লক্ষ্য ছিলেন সহকর্মী চিকিৎসকরা। নিজেকে স্বাস্থ্যমন্ত্রকের উচ্চপদে কর্মরত হিসাবে দেখিয়ে অভিযুক্ত চিকিৎসক বলতেন, একেবারে কিছু পরিমাণ টাকা লগ্নি করলে সুদ-সহ কখনও মাসিক ও কখনও বা তিন মাসে প্রচুর টাকা মিলবে। সেই টোপে পা দিয়ে কলকাতার অন্তত ১২ জন চিকিৎসক লগ্নি করেন। এ ছাড়াও ওড়িশারও কিছু চিকিৎসক লগ্নি করেন ওই চিটফান্ডে। প্রায় ১২ কোটি টাকা দেন চিকিৎসকরা। যদিও কেউ কোনও টাকা ফেরত পাননি বলে অভিযোগ। টাকার জন্য চাপ দেওয়া হলে তিনি ওড়িশায় চলে যেতেন লেংকা। তবে তাঁকে কলকাতা থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়। এদিন আদালতে সরকারি আইনজীবী জানান, আমানতকারীদের ওই টাকা শেয়ার বাজারে খাটানো হত। ধৃতর তরফে জামিনের আবেদন জানান আইনজীবী সুব্রত সর্দার, চন্দন খাটুয়া। ধৃত চিকিৎসককে জেরা করে কলকাতা ও ওড়িশার এই চক্রের অন্যদের সন্ধান চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.