ছবি: প্রতীকী
অর্ণব আইচ: কখনও শিয়ালদহের হোটেল, আবার কখনও নিজের বাড়িতেই। বিবাহিত মেয়েকে যৌন ব্যবসায় নামিয়ে টাকা রোজগার শুরু করেছিলেন মা-বাবা। তাতে মদত ছিল শ্বশুরবাড়ির কয়েকজনেরও। বধূকে ধর্ষণের বেশ কিছু অশ্লীল ছবি ও ভিডিও-ও তুলে রেখেছিলেন তাঁরা। সেই ভিডিও প্রচার করার ভয় দেখিয়েই তরুণীকে ঘরে ঢুকিয়ে দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দিতেন মা, বাবা, বোন। ভিতর মেয়ের উপর যৌন নির্যাতন চালাত খদ্দেররা। আর্তনাদ করতেন মেয়ে। কিন্তু মেয়ের কান্না এতটুকুই স্পর্শ করেনি মা-বাবাকে। বাধ্য হয়ে বাবা-মা ও পরিবারের অন্যান্যদের বিরুদ্ধে পুলিশের দ্বারস্থ হন তরুণী। আড়াই মাসের চেষ্টায় তরুণীর বাবা-মাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, ২০১২ সালে বালিগঞ্জের পদ্মপুকুর এলাকার বাসিন্দা ওই যুবতীর সঙ্গে বিয়ে হয় ট্যাংরার বাসিন্দা এক যুবকের। দম্পতির একটি ৬ বছর বয়সের সন্তানও আছে। যুবতীর অভিযোগ, ২০১৫ সালে কেনাকাটা করানোর নাম করে এক আত্মীয়া তাঁকে শিয়ালদহের একটি হোটেলে নিয়ে যায়। একটি ঘরে ঢুকিয়ে তাঁকে পানীয়র মধ্যে মাদক মিশিয়ে খাওয়ানো হয়। তিনি অচেতন হয়ে গেলে ঘরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় খদ্দের। অভিযোগ, ওইদিনের ছবি তুলে রেখে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড ও স্বামীকে দেওয়া হবে বলে নির্যাতিতাকে ভয় দেখাতে শুরু করে অভিযুক্ত। এরপর ওই আত্মীয়ার কথাতেই মেয়েকে দেহ ব্যবসায় নামতে বাধ্য করেন বধূর বাবা-মা। বালিগঞ্জে নিজের বাপের বাড়িতে বহুবার যৌন নিগ্রহ করা হয় তাঁকে। হোটেলেও পাঠানো হয়েছে বহুবার। প্রতিবাদ করলেই জুটেছে ভিডিওগ্রাফি দেখিয়ে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি। চারবছর এভাবে ক্রমাগত নির্যাতন চলার পর একজনকে বিষয়টি জানান ওই বধূ। এরপরই ট্যাংরা থানায় অভিযোগ দায়েরের সিদ্ধান্ত।
পুলিশ আধিকারিকরাও বধূর অভিযোগ হাতে পেয়ে হকচকিয়ে যান। ধর্ষণ, পাচার, মাদকাচ্ছন্ন করা, শ্লীলতাহানি, ষড়যন্ত্র ও আইটি অ্যাক্টে প্রায় ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা শুরু করা হয়। ট্যাংরা থানার কাছ থেকে তদন্তভার নেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। যুবতী আদালতে গোপন জবানবন্দিও দেন। আড়াই মাস টানা তদন্ত চালানোর পর যুবতীর মা ও বাবাকে গ্রেপ্তার করেন তদন্তকারীরা। এখনও তরুণীর বোন-সহ অন্য অভিযুক্তরা পলাতক। পুলিশ সূত্রের খবর, মঙ্গলবার দুই অভিযুক্তকে শিয়ালদহ আদালতে তোলা হলে জামিনের বিরোধিতা করেন সরকারি আইনজীবী অরূপ চক্রবর্তী। জানা গিয়েছে, নির্যাতিতার বাবাকে জেল হেফাজত ও মাকে পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.