Advertisement
Advertisement

Breaking News

Coffee House

কফি হাউসের আড্ডায় টানা ২৬ হাজার দিন! সম্মানিত ‘প্রবীণতম কফিখোর’

বিরানব্বইতে এখনও তরতাজা, ইয়ংম্যান অমর মল্লিক।

A 92-year-old man has set a precedent by spending 26 thousand days at coffee house
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:September 7, 2024 12:10 pm
  • Updated:September 7, 2024 12:10 pm  

অভিরূপ দাস: নাম অমর মল্লিক, ছেলে দেবপ্রসাদ মল্লিক, নাতির নাম শাক‌্য মল্লিক, নাতির ছেলে কানহাইয়া… ফোর্থ জেনারেশন রানিং। কফি হাউসে তাঁর বন্ধুরা সব হাঁটু বয়সি। সমবয়স্করা যে চলে গিয়েছেন পৃথিবী ছেড়ে। বিরানব্বইতে এখনও তরতাজা, ইয়ংম‌্যান অমরবাবু। সম্প্রতি যাঁকে সম্মানিত করেছে কফি হাউস। ‘প্রবীণতম কফিখোর।’

কমবেশি একাত্তর বছর ধরে কফি হাউসে আসছেন অমরবাবু। উত্তর কলকাতার রতু সরকার লেনের ‘মতিলাল শীলের বাড়ি’-র বাসিন্দার ইচ্ছেতে মরচে পড়েনি। বয়সের ভারে ক্ষমতা একটু কমেছে। ‘‘আগে এ বাড়ি থেকে দশ মিনিটে হেঁটে কফি হাউসে পৌঁছে যেতাম। এখন আধ ঘণ্টা লাগে। জোরে হাঁটলে হঁাফ ধরে যায়।’’

Advertisement

[আরও পড়ুন: সবই সন্দীপের কৃপা! মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতায় এসে  রকেট গতিতে উত্থান ভেন্ডর বিপ্লবের]

ছিপছিপ বেতের মতো চেহারা। মাথায় সাদা পাটের মতো চুল। তবু ভোটার কার্ড না দেখলে বোঝার উপায় নেই বিরানব্বই বসন্ত তিনি পেরিয়ে এসেছেন। কফি হাউস নিয়ে তাঁর জাহাজপ্রমাণ অভিজ্ঞতা। ‘‘মুখোমুখি বসেছি মদ‌্যপ শক্তি চট্টোপাধ‌্যায়ের সঙ্গে।’’ সত্তরের দশকে নকশাল আন্দোলনের উত্তাল দিনগুলোর একটা ঘটনা এখনও ছবির মতো লেগে তাঁর মনে। ‘‘কফি হাউসের টেবিলে তখন কাচ দেওয়া থাকত। পুলিশের তাড়া খেয়ে একটি ছেলে ঢোকে…। এক হাতে ভোজালি। কফি অর্ডার দিয়ে ভোজালিটা বের করে টেবিলে পুঁততে গিয়ে… কাচ ছড়িয়ে একাকার।’’ সে সময় দেড় টাকায় এক পট কফি। সঙ্গে আলাদা করে দুধ।

সে সব দিন অতীত। আজন্ম মোহনবাগান ভক্ত অমর মল্লিক চিনতেন মাঠের সবকটা ঘাস।
পাড়ার ছোটরা তাঁর কাছে শুনতে চায় দেশ স্বাধীনের গল্প। দেশ যেবার স্বাধীন হল অমরবাবুর বয়স পনেরো। সে সব স্মৃতি এখনও তঁার মনে টাটকা। ‘‘সে এক হইহই ব‌্যাপার। আমি আমার জেঠতুতো দাদার সঙ্গে তুলো দিয়ে ভারতের ম‌্যাপ তৈরি করছিলাম। সে কী আনন্দ। ছাদে দেশের পতাকা ওড়ানো হয়েছিল।’’ সে অনুভূতি অন‌্য কোনও আনন্দের সঙ্গে মেলাতে পারেন না প্রবীণ অমরবাবু। বাবার কোলে চেপে নেতাজির বাড়িতেও গিয়েছেন বার দুয়েক। স্বামী বিবেকানন্দ শিকাগো থেকে ফিরে আসার পরে ছি ছি করেছিল সংস্কারবাদীরা। তখন কালাপানি পার হওয়াকে সহজ চোখে দেখতেন না অনেকেই। ‘‘আমার ঠাকুরদার মামা গোপাললাল শীল স্বামী বিবেকানন্দকে অনেকদিন রেখে দিয়েছিলেন চন্দননগরের বাড়িতে।’’ মণিমুক্তোর মতো এমন সব অভিজ্ঞতাকে বহন করে নিয়ে চলেন অমরবাবু।

[আরও পড়ুন: ‘মা, দাদুটা ভালো নয়’, ‘যৌন হেনস্তা’য় রক্তাক্ত হয়ে বাড়ি ফিরে অভিযোগ খুদের]

আনন্দের স্মৃতি যেমন রয়ে গিয়েছে। রয়েছে মন খারাপ করা কিছু নুড়িপাথরও। ‘‘রবীন্দ্রনাথের চলে যাওয়ার দিন কেঁদে ফেলেছিলাম। মরদেহ নিয়ে অমন শোভাযাত্রা আর হয়নি। সে ভিড়ের শেষ দেখা যাচ্ছিল না।’’ আর একটা গল্প সবাইকে বলেন অমরবাবু। বিরানব্বই বছরের জীবনে তেমন অভিজ্ঞতা আর হয়নি। দীর্ঘদিন বেঙ্গল ব‌্যাডমিন্টন অ‌্যাসোসিয়েশনের সহকারী সম্পাদক ছিলেন। তরুণ ব‌্যাডমিন্টন শিক্ষার্থীদের অনুশীলন চলত নেতাজি ইন্ডোরে। একবার আকাশছোঁয়া ইলেকট্রিক বিল এসেছিল। ‘‘সে সময়কার বাংলার ব‌্যাডমিন্টন অ‌্যাসোসিয়েশন ছোট্ট সংস্থা। অতগুলো টাকা বিল দেওয়া সম্ভব ছিল না।’’ দেখা করেছিলেন তৎকালীন মুখ‌্যমন্ত্রী জে‌্যাতি বসুর সঙ্গে। চৌত্রিশ বছর আগের ঘটনা মনে আছে নবতিপর অমরব‌াবুর। ‘‘আমার অনেক কথা শুনে জে‌্যাতিবাবু দুটো শব্দ খরচ করেছিলেন। ‘আচ্ছা… দেখছি’।’’ তার পর? পরের দিনই চিঠি আসে, দিতে হবে না ইলেকট্রিক বিল।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement