Advertisement
Advertisement
বিরল রোগ

শরীর থেকে ক্রমাগত রক্তক্ষরণ, বেঁচে থাকার লড়াই বিরল রোগে আক্রান্ত খুদের

রাজ্যে এখনও পর্যন্ত মাত্র ১২জনের শরীরে এই রোগের অস্তিত্ব ধরা পড়েছে।

A 3-year-old child of kaikhali suffering from a rare disease
Published by: Tiyasha Sarkar
  • Posted:July 1, 2019 10:17 am
  • Updated:July 1, 2019 10:17 am  

কলহার মুখোপাধ্যায়: সারা রাজ্যে এখনও পর্যন্ত মাত্র ১২ জনের শরীরে এই রোগের অস্তিত্ব ধরা পড়েছে, এতটাই বিরল এই রক্তক্ষরণ জনিত অসুখ। কে জানত এই অভিশপ্ত রোগেরই শিকার হয়েছেন তিন বছরের মেয়েটি। খুদে এখন সকালে উঠেই প্রার্থনায় বসে। একটাই কথা, “আমাকে ভাল করে দাও ঠাকুর।” মেয়েটার বাবা-মা ও ঠাকুমা মন্দিরে সিধে চড়ান। পিরের দরগায় মানত রাখেন। গরিবের শেষ ভরসা ভগবানের কাছে নিত্য প্রার্থনা-“মেয়েটাকে ভাল করে দাও ঠাকুর।”

[আরও পড়ুন: এবার চুড়ির মধ্যে লুকিয়ে মাদক পাচার, ধৃত ১]

আর যাঁরা মেয়েটিকে ভাল করার দায়িত্ব নিয়ে প্রাণপাত করেছেন সেই চিকিৎসকরা কী বলেছেন?

Advertisement

চিকিৎসকদের বক্তব্য, বিরল রক্তরোগে আক্রান্ত সাড়ে তিন বছরের শিশুটির আয়ু সরু সুতোয় বাঁধা। বছর দশেক বয়স হলে সুতো ছিঁড়ে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা। গত একবছর ধরে মেয়েটির শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে অবিরত রক্তক্ষরণ হচ্ছে। হাসপাতালে ভরতি করে ক্রমাগত প্লাজমা দিয়ে তাকে সাময়িক সুস্থ করে তোলা হচ্ছে। দিনকয়েক বাদে আবার যেই কে সেই। মেয়েটি স্কুলে যায় না। তার দৌড়ঝাঁপ করা বারণ। তার ছ’বছরের দিদি পাশে খেলে বেড়ায়। মেয়েটি মায়ের কোলে বসে দেখে। আগে খেলতে চেয়ে বায়না করত। এখন বুঝে গিয়েছে, তার শরীর খারাপ। তাকে খেলতে নেই।

শখ করে ঠাকুমা নাম রেখেছিলেন আহেলি। পুরো নাম আহেলি রায়। তিনবছর পাঁচ মাস বয়স। যে রোগে সে আক্রান্ত সেটি খুব জটিল এবং বিরল একটি রোগ। অসুখটির নাম ভন উইলব্র‌্যান্ড ডিজিজ (ভিএইচডি)। আহেলির বাবা বিকাশ রায় জানিয়েছেন, মেয়ের নাক ও মূত্রনালি দিয়ে হঠাৎ হঠাৎ রক্তক্ষরণ হয়। এর কোনও ওষুধ এ দেশে মেলে না। বিদেশেও এর চিকিৎসা আছে কিনা তা নিয়ে কোনও স্পষ্ট ধারণা তাঁরা পাননি। একমাত্র চিকিৎসা, হাসপাতালে ভরতি করে রক্তের মাধ্যমে প্লাজমা দিয়ে যাওয়া। 

[ আরও পড়ুন: কলকাতায় চলন্ত বাসে লুকিয়ে মহিলার ছবি তোলার চেষ্টা, গ্রেপ্তার ১]

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রক্তক্ষরণের পরিমাণ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে। তবে আপাতত তা সামাল দেওয়া যাবে। তবে বিপদ অপেক্ষা করে রয়েছে। ঋতুস্রাবের বয়সে পা দিলেই চূড়ান্ত কামড় বসাবে উইলব্র‌্যান্ড ডিজিজ। স্রাবের মাধ্যমে ক্ষরিত হতে থাকা রক্ত থামানো এক কথায় অসম্ভব। আমাদের দেশ তো কোন ছাড় বিশ্বের কোথায়ই এর কোনও চিকিৎসা রয়েছে কিনা তা জানা নেই। তাহলে কি সাত বছরের মধ্যেই আহেলির জীবনের সুতোয় টান পড়া শুরু হয়ে যাবে। তবে কি আর মাত্র সাড়ে সাত বছর? প্রশ্নটা আসবে জানতেন আহেলির মা প্রিয়াঙ্কা। তবু শুনে ডুকরে উঠলেন। তাঁর বক্তব্য, চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখছেন না তাঁরা। এবং উল্লেখযোগ্য হল আহেলির পাশে এসে দাঁড়িয়েছে গোটা পাড়া। কৈখালির নারায়ণপুর এলাকার ১৯ নম্বর গলির বাসিন্দা রায় পরিবার। বাড়ির কাছেই থাকেন বিধাননগর পুরনিগমের ডেপুটি মেয়র তাপস চট্টোপাধ্যায়। তিনি মেয়েটির চিকিৎসার প্রায় সমস্ত দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন।

মাস দু’য়েক আগে লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে বেরিয়েছিলেন তাপসবাবু। সেখানে আহেলির অসুস্থতার কথা জানতে পারেন তিনি। দিল্লির এইমসে পাঠানো থেকে কলকাতায় তার প্লাজমা দেওয়ার ব্যবস্থা তিনি করছেন তো বটেই ভবিষ্যতেও করে যাবেন বলে আহেলির বাবা-মাকে জানিয়ে দিয়েছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, গরমে রাখা যাবে না শিশুটিকে। সেকথা শুনে একটি এয়ারকন্ডিশনার মেশিন কিনে দিয়েছেন তাপসবাবু।

[আরও পড়ুন: টার্গেট ২০২১-এর বিধানসভা, আট জেলার সভাপতি পদে বদল বিজেপির]

ডেপুটি মেয়রের উদ্যোগে রবিবার নারায়ণতলায় এক রক্তদান শিবিরেরও আয়োজন করা হয়েছিল। সেখান থেকে যা ডোনার কার্ড সংগৃহীত হবে তা শিশুটির প্রয়োজনে লাগবে। তাপস চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “শিশুটির চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনে যদি বিদেশ যেতে হয় তার জন্যও সাহায্য করতে প্রস্তুত তিনি।” এই অসুখের প্রসঙ্গে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের হেমাটোলজি বিভাগের প্রধান ডাক্তার প্রান্তর চক্রবর্তী বলেছেন, “এটি জন্মগত রক্তক্ষরণের অসুখ। বাড়াবাড়ি হলে প্রাণঘাতি হতে পারে। এদেশে সাধারণত রোগীকে ফ্রেশ ফ্রোজেন প্লাজমা দেওয়া হয়।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement