ছবি: প্রতীকী
শুভঙ্কর বোস: একজন চুরাশি বছরের বৃদ্ধ কি বীর্যবান! অর্থাৎ তিনি কি এতটাই যৌনক্ষমতা সম্পন্ন যে কোনও নারীকে সন্তানসম্ভবা করতে সক্ষম? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে এবার কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ এক অশীতপর বৃদ্ধের ছেলে পেশায় চিকিৎসক বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু কোন ঘটনার প্রেক্ষিতে হঠাৎ এমন প্রশ্ন নিয়ে আদালতে হাজির তিনি?
জানা গিয়েছে, ঘটনার সূত্রপাত বেশ কয়েক মাস আগে। বিশ্বজিৎবাবুর বাবা বছর চুরাশির বৃদ্ধ জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মাটিগাড়া থানায় পকসো আইনে মামলা করেন এক ব্যক্তি। যিনি একসময় তাঁদের বাড়ির ভাড়াটে ছিলেন। অভিযোগে ওই ব্যক্তি জানান, জয়ন্তবাবুর বাড়িতে ভাড়া থাকাকালীন যৌন নির্যাতনের কারণে তাঁর ১৪ বছরের নাবালিকা মেয়ে সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়েছে। এরপর যথারীতি অভিযোগের ভিত্তিতে বৃদ্ধকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আপাতত তিনি কারাবাস করছেন।
এরপরই, ঘটনার সুরাহা চেয়ে কলকাতা হাই কোর্টে জামিনের আবেদন জানান জয়ন্তবাবু। তিনি দাবি করেন, ভাড়াটে সমস্যার জেরে তাঁকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে। কোনও অঙ্কেই তাঁর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ খাটে না। আদালতে তিনি দাবি করেন, বহু আগেই তিনি যৌনশক্তি হারিয়েছেন। বর্তমানে বেশিরভাগ সময় শয্যাশায়ী হয়েই তার দিন কাটে। হাঁটাচলায়ও প্রবল সমস্যা রয়েছে। তাছাড়া তিনি ব্লাড সুগারের ক্রনিক রোগী। এছাড়াও তার দেহের ওজন বর্তমানে ৪০ কেজি। ফলে কোনওভাবেই তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ খাটে না। যদিও সরকারি আইনজীবী পালটা জানান, বৃদ্ধ পুরোপুরি যৌনক্ষমতা সম্পন্ন এবং ওই নাবালিকার বয়ান অনুযায়ী এই ঘটনায় বৃদ্ধের প্রত্যক্ষ যোগ রয়েছে। অতঃপর জয়ন্তবাবুর জামিন নাকচ হয়ে যায়।
কিন্তু স্পার্ম কাউন্ট ও মেডিকেল টেস্ট ছাড়া কিসের ভিত্তিতে এমন দাবি সরকার পক্ষের? এই অভিযোগে এবার বাবার পোটেন্সি টেস্ট, ও নাবালিকার গর্ভস্থ সন্তানের ডিএনএ সংক্রান্ত তথ্য-সহ পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল রিপোর্ট তলব করে হাই কোর্টে রিট মামলা দায়ের করেন জয়ন্ত বাবুর ছেলে বিশ্বজিৎ। বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের এজলাসে মামলার শুনানিতে তার আইনজীবী, রাজদীপ মজুমদার ও ময়ূখ মুখোপাধ্যায় দাবি করেন, ভাড়াটিয়া উচ্ছেদের কারণেই জয়ন্তবাবুকে এই মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, স্পার্ম কাউন্ট করে কোনওরকম পোটেন্সি টেস্ট ও নাবালিকার গর্ভস্থ সন্তানের ডিএনএ রিপোর্ট ছাড়াই এই মামলায় অভিযুক্ত দেখিয়ে তার মক্কেলের বাবাকে এখনও আটক রাখা হয়েছে। তাই অবিলম্বে তাঁর পোটেন্সি টেস্ট ও ফিটাসের ডিএনএ রিপোর্ট প্রকাশ করা হোক।
যদিও সরকার পক্ষের আইনজীবী সাবির আহমেদ পাল্টা সওয়ালে বলেন, ওই বৃদ্ধ পুরোপুরি যৌন ক্ষমতা সম্পন্ন। সেই সংক্রান্ত একটি রিপোর্টও রয়েছে। আপাতত ডিএনএ পরীক্ষার জন্য তাঁর রক্তের নমুনা নেওয়া হয়েছে। রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। এরপরই বিচারপতি তালুকদার নির্দেশ দেন, সরকারপক্ষকে অবিলম্বে বৃদ্ধের পোটেন্সি টেস্ট ও বিধি মেনে নাবালিকার গর্ভস্থ সন্তানের ডিএনএ সংক্রান্ত তথ্য সহ পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল রিপোর্ট পেশ করতে হবে। তার ভিত্তিতে মামলার ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.