অর্ণব আইচ: এ যেন এক ‘বৈদুর্য্য রহস্য’। মন্দির থেকে পাচার কৃষ্ণের (Lord Krishna) সোনার বাঁশি আর মুকুট। বেশ কয়েক মাস ধরে অন্ধকারে থাকা লালবাজারের গোয়েন্দারা শেষ পর্যন্ত আলোর দিশা পেলেন মন্দিরের কর্মচারীকেই গ্রেপ্তার করে। প্রকাশ শাসমল নামের ওই কর্মচারীর দাবি, আসানসোলে পাচার হয়েছে কৃষ্ণের বাঁশি। সেখান থেকে ঝাড়খণ্ডে ওই বাঁশি আর মুকুট অ্যান্টিক কারবারীদের কাছে পাচার হয়েছে, এমন সম্ভাবনাও পুলিশ উড়িয়ে দিচ্ছে না।
পুলিশ জানিয়েছে, কয়েক মাস আগে মধ্য কলকাতার পোস্তা এলাকায় এই চুরির ঘটনাটি ঘটে। রাতের অন্ধকারে হানা দেয় দুষ্কৃতীরা। তাদের নজর ছিল কৃষ্ণের প্রতিমার সোনার মুকুট ও সোনার বাঁশির উপর। চুরির পরদিন সকালে পুরোহিত পুজো করতে এসে দেখে, উধাও হয়ে গিয়েছে ওই বাঁশি ও মুকুট। এই ব্যাপারে পোস্তা থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। আশপাশের সিসিটিভির ফুটেজ দেখে দুই দুষ্কৃতীর ফুটেজ পান পুলিশ আধিকারিকরা। কিন্তু তাদের শনাক্ত করা যায়নি।
সিসিটিভির ফুটেজের সূত্র ধরেই উত্তর ২৪ পরগনা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন জায়গায় খোঁজখবর নিতে শুরু করেন গোয়েন্দারা। প্রথম কয়েক মাস গোয়েন্দারা অন্ধকারেই ছিলেন। সমস্যা হচ্ছিল দুষ্কৃতীদের শনাক্ত করতে। শেষ পর্যন্ত দুষ্কৃতীদের কয়েকজন পরিচিত তাদের চালচলন দেখে চিনতে পারে। এক সপ্তাহের মধ্যেই প্রথমে জাহাঙ্গির নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে মন্দিরে চুরির কথা স্বীকার করে। ধৃতকে জেরা করে তার সঙ্গে আদিলকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
গোয়েন্দাদের জেরার মুখে জাহাঙ্গির ও আদিল দাবি করে যে, তাদের চুরির জন্য নিয়োগ করেছিল বিকাশ নামে এক ব্যক্তি। একটি সূত্র ধরে বিকাশের সঙ্গে পরিচয় হয় তাদের। দু’জনকেই বলা হয়, সোনার বাঁশি ও মুকুট অ্যান্টিক হিসেবে ভিনরাজ্যে বিক্রি করলে প্রচুর টাকা পাওয়া যাবে। সেই টাকার ভাগ দেওয়া হবে তাদের। তাদের আগাম কিছু টাকাও দেওয়া হয়। কিন্তু বিকাশের আসল পরিচয় দুই দুষ্কৃতী জানাতে পারেনি।
চুরির পদ্ধতি দেখে গোয়েন্দাদের সন্দেহ হয়, মন্দিরে খুবই যাতায়াত রয়েছে, এমন ব্যক্তি ছাড়া এই অপরাধ ঘটানো সহজ নয়। ধৃত জাহাঙ্গির ও আদিলকে জেরা করে বিকাশের চেহারার বিবরণ নেওয়া হয়। পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, ‘পোর্টেট পার্লে’ করিয়ে সেই ছবি মন্দির কর্তৃপক্ষকে দেখানোর পরই তাঁরা গোয়েন্দাদের জানান, এর সঙ্গে মিল রয়েছে মন্দিরেরই এক কর্মচারী প্রকাশের। কিন্তু প্রকাশের সন্ধান চালতে গিয়ে গোয়েন্দারা জানতে পারেন যে, ইতিমধ্যেই বেনিয়াপুকুর থানার একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে । প্রকাশ শাসমলকে দেখামাত্রই জাহাঙ্গির ও আদিল শনাক্ত করে।
জেরার মুখ প্রকাশ জানিয়েছে যে, কৃষ্ণর বাঁশি ও মুকুট পাচার হয়েছে আসানসোলে। সেখান থেকে সেগুলি ঝাড়খণ্ড বা বিহারে ফের পাচার হতে পারে। এই চুরির পিছনে অ্যান্টিক এজেন্টরা রয়েছে বলে ধারণা গোয়েন্দাদের। আসানসোল ও ভিনরাজ্যে তল্লাশি চালিয়ে কৃষ্ণর বাঁশি ও মুকুট উদ্ধারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.