গৌতম ব্রহ্ম: একদিকে ক্যাম্পাইলো ব্যাকটর জেজুনি, অন্যদিকে সার্স-কোভ-২। কোভিড রোগীর শরীরে গুলেনবারি সিনড্রোম (Guillain-Barre syndrome) ! ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাসের জোড়া হামলায় কাহিল হয়ে পড়েছিলেন পঁচাত্তর বছরের বৃদ্ধ। ধীরে ধীরে অসাড় হয়ে পড়ছিল হাত-পা। শরীরের নিচ থেকে ওপরের দিকে এগিয়ে আসছিল সংক্রমণ। একটা সময় রোগীর রেসপিরেটরি মাংসপেশিতেও থাবা বসায় ব্যাকটেরিয়া। শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। এই সময়ই জানা যায়, রোগী কোভিড ‘পজিটিভ’-ও। আকাশ ভেঙে পড়ে পরিবারের মাথায়। ভয় পেয়ে যান ডাক্তারবাবুরাও। এতগুলি রোগকে সামলাবে কী করে পঁচাত্তরের শরীর? কিন্তু, সবকিছু হারিয়ে অবশেষে হল শাপমুক্তি।
গত ৯ জুন শ্বাসকষ্ট ও পেশীর দুর্বলতা নিয়ে ৭৫ বছরের ওই বৃদ্ধ মল্লিকবাজারের স্নায়ুরোগের হাসপাতালে আসেন। ডা. হৃষিকেশ কুমারের অধীনে শুরু হয় চিকিৎসা। ডায়াবেটিস ও হাইপেরটেনশনের সমস্যাও ছিল রোগীর। এদিকে বয়সও বেশি। ৭৫ বছর। তাই চিন্তায় পড়ে যান ডাক্তারবাবুরা।
এনসিএস (NCS) নামক স্নায়ুর পরীক্ষা এবং মস্তিষ্কের রস বিশ্লেষণ করে জানা যায়, বিরল গুলেনবারি সিনড্রোমে আক্রান্ত ওই বৃদ্ধ। শ্বাসকষ্ট বেশি থাকায় রোগীকে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়। এখন শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে কোনও রোগী ভরতি হলেই কোভিড পরীক্ষা হয়। ওনার ক্ষেত্রেও তা হয়েছিল। এদিকে রিপোর্ট পজিটিভ আসায় বাড়ির লোকের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। এতগুলো রোগকে ডাক্তারবাবুরা সামলাবেন কী করে? এই প্রশ্নও দানা বাঁধে মনে। অবশেষে সবার মিলিত চেষ্টায় সেরে উঠলেন ওই রোগী। গত ১৮ জুন সোয়াব পরীক্ষার রিপোর্ট ‘নেগেটিভ’ আসে।
যদিও লড়াইটা সহজ ছিল না। ওষুধের পাশাপাশি ফিজিক্যাল মেডিসিনও দেওয়া হচ্ছিল। হাসপাতালের রিহ্যাব টিম নিয়ম করে চেস্ট ফিজিওথেরাপি ও ব্রঙ্কিওল হাইজিন থেরাপি করাচ্ছিলেন রোগীকে। স্পাইরোমেট্রি দিয়ে ‘ব্রিদিং এক্সারসাইজ’-ও করানো হচ্ছিল নিয়মিত। এমনটাই জানালেন ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. সুপর্ণ গঙ্গোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার ওই রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন।
সুপর্ণবাবু জানালেন, ওই রোগী স্ট্রেচারে করে আসেন। টানা অক্সিজেন সাপোর্ট দিতে হয়েছিল। তার উপর কোভিডের খাঁড়া। সব মিলিয়ে কাজটা খুবই কঠিন ছিল। ব্রিদিং এক্সারসাইজের পর রোগীর পেশীর শক্তি বাড়াতে ‘মোটর রিলার্নিং প্রোগ্রাম’ নেওয়া হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.