ফাইল ছবি।
অর্ণব আইচ: নেই কোনও চুক্তিপত্র। মেলেনি কোনও নথি। শুধু ‘পরিচিত’ হওয়ার কারণেই গত কয়েক বছর ধরে অকাতরে টাকা ‘বিলিয়েছেন’ হুগলির যুবনেতা কুন্তল ঘোষ। আর সেই টাকা যেমন ব্যবসায়ী সোমা চক্রবর্তী বা অভিনেতা বনি সেনগুপ্তর মতো ব্যক্তিত্বদের কাছে গিয়েছে, তেমনই পৌঁছেছে হুগলির তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছেও। কীভাবে কোনও নথি বা চুক্তিপত্র ছাড়াই টলিউডের অভিনেতা-অভিনেত্রী অথবা ঘনিষ্ঠদের কখনও ঋণ আবার কখনও বা বিভিন্ন ইভেন্টের কাজের জন্য টাকা দিতেন, তা নিয়েই প্রশ্ন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের। যদিও ইডি আধিকারিকদের দাবি, একেকজনকে ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকা দিয়ে নিয়োগ দুর্নীতির কালো টাকা সাদা করেছেন কুন্তল ঘোষ। মোট কতজনকে এভাবে ঋণ বা অন্যান্য কারণ দেখিয়ে কুন্তল টাকা দিয়েছেন, তা নিয়ে চলছে ইডির তদন্ত। ইডির ধারণা, এই টাকার পরিমাণ কয়েক কোটি। এই টাকা ‘বিলি’র তালিকায় টলিউডের আরও অন্তত যে ৬ জন অভিনেতা-অভিনেত্রী রয়েছেন বলে সন্দেহ, তাঁদের ইডি জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে। টাকা লেনদেনের ব্যাপারে শুক্রবার নিউ টাউনের ব্যবসায়ী সোমা চক্রবর্তীকে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা পর বাইরে বেরিয়ে এসে তিনি জানান, ২০১৮ সালের পর কুন্তলের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ নেই।
কুন্তলের মাধ্যমে যে বনির সঙ্গেও পরিচয় হয়, তা স্বীকার করেছেন নিউ টাউনের ব্যবসায়ী সোমা। নিউ টাউনের একটি শপিং মলের নেল পার্লারের জন্য কুন্তল ঘোষের কাছ থেকে সোমা ৫০ লাখ টাকা নেন। ওই পার্লারের উদ্বোধনের জন্য বনি সেনগুপ্তর ঘনিষ্ঠ বান্ধবী কৌশানী মুখোপাধ্যায়কে বলা হয়েছিল। ‘উপযুক্ত পারিশ্রমিক’ নিয়েই কুন্তলের কথায় কৌশানী নিউ টাউনে গিয়ে ওই পার্লার উদ্বোধন করেন। তবে কুন্তলের সঙ্গে পরিচয় না হলেই ভাল হত বলে আক্ষেপ সোমার। কুন্তলের ৫০ লাখ টাকা সোমার অ্যাকাউন্ট থেকে গিয়েছে অন্যান্য একাধিক অ্যাকাউন্টে। সোমার দাবি, ওই টাকা ব্যবসার কাজের জন্যই তিনি বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে পাঠিয়েছেন। যদিও এই দাবি ইডি যাচাই করছে।
এদিকে, টলিউডের অভিনেতা বনি সেনগুপ্তর গাড়ি ঘিরে রয়ে গিয়েছে রহস্য। বনি তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে কিছু তথ্য ইডিকে দিলেও তাঁর যে গাড়িটি আলোচনার মূলে, এবার তার নথিপত্র তলব করল ইডি। সেইমতো গাড়ির নথিপত্র নিয়ে অভিনেতা বনিকে আগামী মঙ্গলবার সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সের দফতরে হাজিরার নির্দেশ দিয়েছে ইডি। বৃহস্পতিবারই বনি ইডি আধিকারিকদের জানান, ২০১৭ সালে কুন্তল ঘোষ তাঁকে সিনেমার জন্য অফার দেন। তার জন্য আগাম টাকা দিতে চান কুন্তল। বনি সেনগুপ্ত সরাসরি টাকা না নিয়ে একটি বিলাসবহুল গাড়ি আগাম পারিশ্রমিক হিসাবে নেন। সরাসরি ওই টাকা শোরুমে মেটান কুন্তল। ওই গাড়িটির মালিক যে কয়েক বছরের জন্য বনি ছিলেন, তা তিনি স্বীকার করেছেন। বছর চারেক ব্যবহার করার পর তিনি এজেন্ট মারফত গাড়িটি বিক্রি করে দেন। বনি যে গাড়িটি বিক্রি করেছিলেন, সেই নথিই চেয়েছেন ইডি আধিকারিকরা। সেই নথির সূত্র ধরে গাড়িটির কাছে পৌঁছতে চাইছেন গোয়েন্দারা। তদন্তের খাতিরে গাড়িটি আটক করা হতে পারে বলে জানিয়েছে ইডি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.