ফাইল চিত্র।
নব্যেন্দু হাজরা: ট্রেন থেকে নেমে যাঁরা বামদিকে যেতেন, তাঁদের অনেকেই এখন ডানদিকে যান! রাজ্য রাজনীতির ট্রেন্ডের মতোই বদল এসেছে হাওড়ার লোকাল ট্রেনের যাত্রীদের। রসিকতা করে অনেকেই বলছেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যেমন বামেদের সমর্থকরা ডানপন্থী দলে এসে ভিড়েছেন, তেমনই গঙ্গার নীচ দিয়ে মেট্রো চালুর পর বামপন্থী যাত্রীরা এখন ডানপন্থী হয়েছেন। হাওড়া ময়দান-এসপ্ল্যানেড মেট্রো চালু হওয়ার দিন কুড়ি পার। হিসাব বলছে, গড়ে হাজার পঞ্চাশেক যাত্রী কমেছে বাসে। কম দূরত্বের বাসরুটের যাত্রীরা বাস ছেড়ে মেট্রো ধরছেন। কিন্তু কমেনি ফেরির যাত্রী।
মূলত, বিবদীবাগ, ধর্মতলা, পার্ক স্ট্রিটগামী লোকজনের একটা অংশ মেট্রোকে বেছেছেন। তাই হাওড়া স্টেশনে লোকাল থেকে নেমে বাদিকে বাস ধরতে না গিয়ে এখন ডানদিকে মেট্রো ধরতে ছুটছেন তাঁরা। কিন্তু যাঁরা ট্রেন থেকে নেমে সোজা এসে ফেরি ধরতেন! হাওড়া ময়দান-এসপ্ল্যানেড গঙ্গার নিচ দিয়ে মেট্রো চালুর দিন কুড়ি পরও এখনও ফেরির যাত্রী সেভাবে কমেনি। যেটা কমেছে, প্রত্যেক গরমে সেই যাত্রী এমনিতেই কমে বলে জানাচ্ছেন পরিবহণ দপ্তরের কর্তারা। পরিবহণ দপ্তর নিজেরা হাওড়া-শিপিং, হাওড়া-ফেয়ারলি ফেরি পরিচালনা করে। তাছাড়া হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতির পরিচালনায় হাওড়া থেকে আর্মেনিয়ান, চাঁদপাল, বাবুঘাট, কুঠিঘাট, বাগবাজার-সহ মোট ৮টি রুটে ফেরি চলাচল করে। ছুটির দিন বাদ দিয়ে এই সব রুটে গড়ে ৫০-৫৫ হাজার যাত্রী হয়।
পরিবহণ দপ্তরের এক কর্তার কথায়, সেই যাত্রী কিছুটা কমেছে ঠিকই। কিন্তু বাসে যে পরিমাণ কমেছে, সে তুলনায় কিছুই নয়। তাঁদের কথায়, হাওড়ায় ট্রেন থেকে নেমে মেট্রো ধরতে অনেকটা সময় ব্যয় করতে হচ্ছে যাত্রীদের। অনেকটা পথ হেঁটে গিয়ে তবে ট্রেন ধরা। সঙ্গে টিকিটের জন্য লাইন। কিন্তু ফেরিতে সে সমস্যা নেই। তাছাড়া মূলত স্ট্র্যান্ড রোডের ধারে যে সমস্ত অফিস রয়েছে, সেখানকার কর্মীরাই ফেরিতে চড়ে অফিস যাতায়াত করতেন। মেট্রো হওয়ায় তাঁদের কোনও সুবিধা হয়নি। কারণ হাওড়ার পর মহাকরণ স্টেশন। মানে বিবাদী বাগে নিয়ে নামাবে মেট্রো। সেক্ষেত্রে তাঁদের কোনও লাভ হবে না। উলটে হাঁটতে হবে। তাই মেট্রো চালু হলেও পুরনো অভ্যাস তাঁরা বদলাননি। ফেরিতে চড়েই যাতায়াত করছেন।
পাশাপাশি মেট্রোর ভাড়া যেখানে ১০ টাকা। সেখানে ফেরিতে গঙ্গাপার ৬ টাকায়। একইসঙ্গে কোনও ঝক্কি নেই। নয়া মেট্রোর দিক বুঝতে গিয়েই কার্যত হামাগুড়ি খাওয়ার জোগাড় হচ্ছে বহু যাত্রীর। ফলে তাঁরা মেট্রো এড়িয়েই চলছেন। যেকারণে মূলত যাত্রী কমেছে বাসে। সরকারির পাশাপাশি বেসরকারি বাসেও উল্লেখযোগ্যভাবে যাত্রী কমেছে। যেগুলো হাওড়া ময়দানের দিক থেকে এসপ্ল্যানেড বা পার্কস্ট্রিট পর্যন্ত আসে, সেগুলোর যাত্রীতে ভালোরকম প্রভাব পড়েছে। তবে বাসমালিকরা জানাচ্ছেন, এখনই তঁারা রুট বদলের কথা ভাবছেন না। আরও কিছুদিন যাত্রীসংখ্যা দেখতে চাইছেন মেট্রোয়। সারা বাংলা বাস-মিনিবাস সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাসের যাত্রী তো কমেইছে। এরপর ধর্মতলা-শিয়ালদহ জুড়ে গেলে আরও কমবে। তবে আমরা দেখব রুট বদলের বিষয়টি।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.