স্টাফ রিপোর্টার: চূড়ান্ত উনিশের ব্রিগেডের প্রস্তুতি। আজ দুপুরের আগেই চলে আসবেন দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা। আর যাঁরা শুনবেন নেতৃত্বের বার্তা, তাঁরা চলে আসতে শুরু করেছেন। মহানগর প্রায় পুরোটাই মানুষের ভিড়ে চলে যাবে, এমনটাই মনে করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তবে মানুষের যাতে কোনওরকম অসুবিধা না হয় বা তেমনভাবে সমস্যায় না পড়তে হয়, সে ব্যাপারে নজর রাখবেন নেতারা। আগেই পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে খবর, উনিশের ব্রিগেডে ৫০ লাখ মানুষের সমাগম হতে চলেছে। তা ধরে নিয়েই এগোচ্ছে পুলিশ ও প্রশাসন। যেহেতু প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, বর্তমান ও প্রাক্তন বহু মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন, তাই নিরাপত্তা ও প্রোটোকলে জোর দেওয়া হয়েছে। তাঁদের জন্য ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা। বিমানবন্দর থেকে ব্রিগেড পর্যন্ত পথে ভিন দলের নেতৃত্বের কাটআউট রাখা হয়েছে। ১৯ জানুয়ারি ব্রিগেডে ঢোকার ৭টি প্রবেশ পথ থাকছে। দু’দিন আগে থাকতেই দূরদূরান্তের জেলা থেকে লোক আসতে শুরু করেছেন। বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যেই নির্দিষ্ট জায়গা লোকে ভরে গিয়েছে। উত্তরের বিধাননগর সেন্ট্রাল পার্ক, দক্ষিণের গীতাঞ্জলী স্টেডিয়াম, উত্তীর্ণ ও ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেনু মোটামুটি একই। ভাত, ডাল, কুমড়ো-আলুর তরকারি এবং ডিমের ঝোল মূলত। সেন্ট্রাল পার্কে তৈরি করা হয়েছে ৩০টি অস্থায়ী শৌচালয়, এসে পৌঁছেছে ৫৫টি বায়ো টয়লেটও। স্নানের জন্য ১২টি জলের কল। এখানেই আড়াই লক্ষের বেশি মানুষের খাওয়ার ব্যবস্থা থাকছে। দায়িত্বে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুজিত বসু। কসবার গীতাঞ্জলী স্টেডিয়ামে মূলত মুর্শিদাবাদ ও মালদহের মানুষ থাকছেন। সেই সব জায়গায় সিসিটিভি ছাড়াও পুলিশের নজরদারি থাকছে। শুক্রবার ভোরের দার্জিলিং মেল, পদাতিক এক্সপ্রেস বা গৌড় এক্সপ্রেস-সহ উত্তরবঙ্গের ট্রেনে চেপে কাতারে কাতারে লোক নামবেন হাওড়া, শিয়ালদহ স্টেশনে। রাতেই উত্তরবঙ্গের সব স্টেশন থেকে এঁরা ট্রেনে চেপেছেন। সেই মানুষগুলোর জন্য বিভিন্ন ধর্মশালার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
[ কড়েয়ার কর্নেল রোডে বহুতলে মধুচক্রের পর্দাফাঁস, গ্রেপ্তার ১১ ]
কোন জেলা থেকে কত বেশি লোক আসবে, সে নিয়ে একটা ঠান্ডা প্রতিযোগিতাও রয়েছে তৃণমূলের নেতৃত্বের। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা নেতৃত্বের টার্গেট নয়-দশ লক্ষ লোক। উত্তর ২৪ পরগনার নেতৃত্বের দাবি, অন্তত ছ’লক্ষ লোক আসবেন সেই জেলা থেকে। একই ভাবে তৃণমূলের হুগলি জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্তর দাবি, তাঁরা ১০ লক্ষের বেশি মানুষের কাছে ব্রিগেড যাওয়ার বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন। হাওড়ার দায়িত্বে থাকা সমবায়মন্ত্রী অরূপ রায় মনে করছেন, শনিবার অন্তত তিন-চার লক্ষ লোক মানুষ এই ছোট জেলা থেকে যাবেন ব্রিগেডে। জঙ্গলমহলের বিভিন্ন জায়গায় এদিনই বিশাল মিছিল বের হয়। জঙ্গলমহলের পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরলিয়া তো রয়েছেই, পূর্ব মেদিনীপুর থেকে এবারের ব্রিগেডেও কয়েক লক্ষ মানুষ আসবেন। বর্ধমানও কম যাবে না। প্রতিটি ক্ষেত্রে মিছিল করে স্টেশন থেকে লোক আসবেন। বুধবার থেকেই হাওড়া, শিয়ালদহ স্টেশনে স্বেচ্ছাসেবকরা শিবির করে রয়েছেন।
ব্রিগেডে জলের ট্যাঙ্ক ছাড়া আর কোনও খাবারের দোকান থাকছে না। আগুন জ্বেলে রান্নাও করা যাবে না। খাবার দোকান থাকবে রাস্তার ওপারে। এদিকে, ভোর চারটে থেকে শহরে ট্রাক ঢোকানো হবে না। ভিক্টোরিয়া চত্বরে পার্কিং নিষেধাজ্ঞা করা হচ্ছে। সভা চলাকালীন কলকাতা পুলিশের প্রায় সাড়ে ৮ হাজার বাহিনী মোতায়েন থাকবে। সভাস্থলে থাকবেন ১৮ জন ডিসি, ২৯ জন এসি-সহ বিশাল পুলিশবাহিনী। মঞ্চের বাইরে সাদা পোশাকে থাকবেন কমপক্ষে ১০০০ পুলিশকর্মী। ড্রোনের মাধ্যমেও চলবে নজরদারি। কোন মিছিল কোন প্রবেশ পথ দিয়ে ঢুকবে, তা নির্ধারিত করে দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি, গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য নির্ধারিত করে দেওয়া হচ্ছে স্থান। প্রতিটি জেলার জন্য আলাদা পার্কিং ব্যবস্থা করা হয়েছে। উত্তর কলকাতার দিক থেকে আসা সব গাড়িকে পার্ক করা হবে গণেশ চন্দ্র অ্যাভিনিউতে। দক্ষিণ কলকাতার দিক থেকে আসা গাড়িগুড়ির জন্য নির্ধারিত পার্কিং লট খিদিরপুর ও হাজরা মোড়। হাওড়া থেকে আসা গাড়িগুলির জন্য কোণা এক্সপ্রেসওয়েতে থাকছে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। সেদিন ভিভিআইপি ছাড়া ছোট গাড়িতে কাউকে ব্রিগেডে আসতে বারণ করা হয়েছে। মূল মঞ্চে থাকবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব ও জাতীয়স্তরের নেতানেত্রীরা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে মঞ্চে থাকবেন তার একদিকে থাকছে সাংস্কৃতিক মঞ্চ ও তৃণমূল কংগ্রেসের অন্য রাজ্যের সাংগঠনিক নেতাদের জন্য দু’টি মঞ্চ। দলের মন্ত্রী ও সাংসদরা থাকবেন পৃথক একটি মঞ্চে। এছাড়াও, তৃণমূলের বিধায়করা বসবেন অন্য মঞ্চে।
[ ‘বিজেপি ১২৫-এ থেমে যাবে’, ব্রিগেড পরিদর্শন করে হুঁশিয়ারি মমতার ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.