ফাইল ছবি
ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: ৪৮ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে টানা অনশনে কিছুটা অসুস্থ কলকাতা মেডিক্য়াল কলেজের অনশনরত তিন পড়ুয়া। একদিনে খাওয়া-দাওয়া নেই তাঁদের, অন্যদিকে উত্তেজনার পারদ চড়ছে, দুইয়ের জেরে ক্রমাগত রক্তচাপ ওঠানামা করছে পড়ুয়াদের। তবে সবসময় তাঁদের দেখভালের জন্য় তৈরি রয়েছেন অধ্য়াপক চিকিৎসকরা। শনিবার সকালে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দেখা করলে গিয়েছিলেন মেডিক্যাল কলেজের এমএসভিপি অঞ্জন অধিকারী। অনশন প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়ে তিনি বলেন, “তোরা আমাদের ছেলের মতো। এবার আন্দোলনটা তুলে নে।” কিন্তু তাতেও চিঁড়ে ভেজেনি। উলটে বোঝাতে গেলে অধ্যাপকদের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয় আন্দোলনকারীদের।
নিজেদের দাবিতে অনড় আন্দোলনকারীরা। বৃহস্পতিবার সকাল এগারোটা থেকে শুরু হয়েছিল, আজ অর্থাৎ শনিবার সকাল বারোটায় ৪৯ ঘন্টায় পড়ছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রদের অনশন। অধ্যক্ষর কাছে তাদের দাবি একটাই, পূর্ব ঘোষিত ২২ ডিসেম্বরে ছাত্র সংসদের নির্বাচন করতে হবে। নিজেদের দাবি সাধারণ রোগীর কাছে তুলে ধরতে লিফলেট বিলি শুরু করেছে পড়ুয়ারা। যাতে সাধারণ মানুষের কাছে ভুল বার্তা না যায়।
আন্দোলকারীদের সমব্যথী, তাঁদের প্রতি সহানুভূতিশীল হলেও ভোটের দাবি মানছে না মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। অধ্যক্ষ ইন্দ্রনীল বিশ্বাস জানিয়েছেন, “নির্বাচন ঘোষণা করার ক্ষমতা আমার হাতে নেই। সম্পূর্ণ বিষয়টাই স্বাস্থ্যভবনের নিয়ন্ত্রণাধীন। তবে ছাত্রদের প্রতি তাঁর আশ্বাস, ওই তারিখে না হলেও নির্বাচন হবে। অনশন থেকে সড়ে এসো।” অনশনরত দ্বিতীয় বর্ষের ঋতম, প্রত্যুষ, ফাইনাল ইয়ারের রণবীর, তৃতীয় বর্ষের সাবিৎ, কৌশিকরা জানিয়েছেন, অনশন তুলে নেওয়ার প্রশ্ন নেই।
উল্লেখ্য, ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে সোমবার দুপুর থেকে ঘেরাও করা হয়েছিল অধ্যক্ষ-সহ একাধিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধানদের। মঙ্গলবার কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসা পরিষেবায় বিঘ্নিত হয়। তা আরও বাড়ে মেডিক্যাল কলেজের সেন্ট্রাল ল্যাবরেটরি বন্ধ থাকায়। এখানেই সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রোপচারের আগে রক্ত পরীক্ষা হয়। সে বিভাগ বন্ধ থাকায় ফাঁপড়ে পড়েন একাধিক রোগীর পরিবার। জটিল অপারেশন না করিয়েই ফিরে যেতে হয় অনেককে। আন্দোলনরত ছাত্ররা জানিয়েছেন, কোনওভাবে রোগী পরিষেবা বন্ধ করা আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল না। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র আন্দোলনের মুখ অনীকেত করের দাবি, “আমরা নির্বাচনের দাবিতে অধ্যক্ষকে ঘেরাও করেছিলাম। তার সঙ্গে সেন্ট্রাল ল্যাবরেটরি বন্ধ থাকার সম্পর্ক নেই। কিছু লোক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে বদনাম করতে চাইছে। তারাই এ কাজ করেছে।” সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি তৈরি করে অধ্যক্ষ ইন্দ্রনীল বিশ্বাস জানিয়েছেন, কে বা কারা কোনও নোটিশ ছাড়াও সেন্ট্রাল ল্যাবরেটরি বন্ধ করেছিল? তা খুঁজতেই সাত সদস্যর তদন্ত কমিটি তৈরি করা হয়েছে। ল্যাব বন্ধ থাকার ফলে কতজন রোগী বিপাকে পড়েছেন তাও খোঁজা হবে। সোমবারের মধ্যে রিপোর্ট দিতে হবে সাত সদস্যের কমিটিকে।
এছাড়াও ঘেরাও চলাকালীন শিক্ষক-চিকিৎসকদের একাংশের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। সেটাও খতিয়ে দেখতে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অধ্যক্ষ জানিয়েছেন, “আমরা প্রতিমুহূর্তের ঘটনাক্রম স্বাস্থ্যভবনকে জানাচ্ছি। আমাদের প্রবীণ অধ্যাপকরা রোজই ছাত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। আশা করছি ছাত্র শিক্ষকের আলোচনা থেকেই সমস্যারই সমাধান হবে।” এদিকে আন্দোলনরত ছাত্রদের দাবি, “কলেজ কাউন্সিলে আমাদের কোনও সদস্য নেই। যেখানে আমাদের সদস্য নেই সেই কাউন্সিলের বৈঠককে আমরা মান্যতা দিচ্ছি না।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.