ছবি: প্রতীকী
কলহার মুখোপাধ্যায়, বিধাননগর: “আমি অমুক ব্যাংকের ম্যানেজার বলছি, আপনার অ্যাকাউন্টের ভ্যালিডিটি শেষ হয়ে গিয়েছে। অবিলম্বে আপডেট করাতে হবে।” এই বলে ওই ব্যক্তির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত যাবতীয় ডিটেলস সমেত ওটিপি হাতিয়ে নিয়ে নিমেষে সব টাকা ফাঁকা করে দেওয়ার ঘটনা ভুরিভুরি ঘটছে বিভিন্ন জায়গায়। প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও এই জালিয়াতি চক্রে জড়িত কেউ না কেউ পুলিশের জালে ধরা পড়ছে। টাকা ট্রান্সফার হচ্ছে যে অ্যাকাউন্টে তার সূত্র ধরে জালিয়াতদের হদিস পেয়ে যাচ্ছে পুলিশ। এই সূত্র-মুখ বন্ধ করে ধরা পড়ার হাত থেকে বাঁচতে এবার অন্য পন্থা ধরেছে প্রতারকরা।
নিজেদের কোনও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট (Bank Account) ব্যবহার না করে থার্ড পার্টির সাহায্য নিচ্ছে তারা। এই থার্ড পার্টি বা তৃতীয় পক্ষের কাজ হল বিভিন্ন গরিব মানুষকে ভুল বুঝিয়ে তাঁদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত নথিপত্র নিয়ে নেওয়া। সেই অ্যাকাউন্ট ডিটেইলস থার্ড পার্টি তুলে দেয় মূল জালিয়াতদের (Fraud) হাতে। প্রতারণার টাকা সেই গরীব মানুষগুলোর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে দেয় জালিয়াতরা। আর নিজেরা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। এ রকমই একটি থার্ড পার্টির সন্ধান মিলল নিউটাউনে।
বৃহস্পতিবার এই চক্রের তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদের মূল পাণ্ডার নাম মায়াঙ্ক দিদওয়ানি। তার আসল বাড়ি রাজস্থানে। তার দুই শাগরেদ অভিজিৎ সরকার ও শ্যামসুন্দর বিশ্বাস বাগুইহাটিতে একটি অফিস খুলে এই চত্বরে প্রতারণার কাজকারবার চালাত। তিনজনকেই এদিন নিউটাউন বাস স্ট্যান্ড থেকে ধরেছে পুলিশ। এদের কাছ থেকে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া পনেরোটি এটিএম কার্ড বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। মোবাইলের গোটা দশেক সিম কার্ড এদের কাছে পেয়েছে নিউটাউন থানা।
সরকারি প্রকল্পের টাকা পাইয়ে দেওয়ার টোপ দিয়ে রাজারহাট ও জ্যাংড়া গ্রামীণ অঞ্চলের কয়েকজন গরিব মানুষকে এটিএম কার্ড দিয়ে যাওয়ার জন্য এরা এদিন নিউটাউন বাস স্ট্যান্ডে ডেকেছিল। সামান্য টাকার বিনিময় কার্ড, পিন নম্বর এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ডিটেলস তাদের হাতে তুলে দিয়ে যাচ্ছিলেন অনেকে। পুলিশ সূত্র মারফত খবর পেয়ে বাস স্ট্যান্ড থেকে এদেরকে বমাল গ্রেফতার করে। নিউটাউন থানায় জিজ্ঞাসাবাদের জবাবে ধৃতরা অপরাধ কবুল করে নেয় বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
থার্ড পার্টি মায়াঙ্ক, অভিজিৎ ও শ্যামসুন্দর এটিএম কার্ড এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ডিটেলস মূল জালিয়াত চক্রের কাছে পৌঁছে দিত। তার বিনিময় অ্যাকাউন্ট পিছু মোটা টাকা পেত তারা। ব্যাংক সাইবার প্রতারণার ঘটনায় এই থার্ড পার্টির গুরুত্ব ক্রমশ বাড়ছে বলে তদন্তকারীরা মনে করছেন। থার্ড পার্টি থাকার ফলে প্রতারিত ব্যক্তির টাকা ঢুকছে অপর এক প্রতারিতের অ্যাকাউন্টে। মাঝখানে প্রতারকরা থাকছে আড়ালে। তাদের টিকিও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এই তৃতীয় চক্রের কয়েকজন ধরা পড়ে যাওয়ায় জালিয়াতির মূল চক্রের খোঁজ পেতে সুবিধা হবে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.