ছবি: প্রতীকী
অর্ণব আইচ: সেনাবাহিনীতে চাকরি করিয়ে দেওয়ার নাম করে টানা ন’বছর ধরে আর্থিক জালিয়াতি (Financial Fraud)। আর তাতেই কয়েক কোটি টাকা রোজগার করেছিল জালিয়াতি চক্রের মাথারা। সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কম্যান্ডের হেড কোয়ার্টার বেঙ্গল সাব এরিয়ার সেনা গোয়েন্দাদের সাহায্য নিয়ে কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে এই চক্রের আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করলেন পূর্ব কলকাতার প্রগতি ময়দান থানার আধিকারিকরা। মোট ধৃতের সংখ্যা বেড়ে হল পাঁচ। ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে সেনাবাহিনীর জাল রবার স্ট্যাম্প-সহ বেশ কিছু ভুয়ো নথিপত্র।
মূলত কলকাতায় (Kolkata) বসে বিভিন্ন রাজ্যের যুবকদের কাছ থেকে চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা হাতিয়ে নিত এই চক্রটি। বুধবার রাতে এই চক্রের এক পাণ্ডা রাজু প্যাটেল ও তার গাড়ির চালককে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছ থেকেই আরও তিনজনের সন্ধান পায় পুলিশ। প্রাথমিকভাবে পুলিশ জেনেছে, এই চক্রের সঙ্গে সেনা ও আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ানও জড়িত।
পুলিশ জানিয়েছে, নতুন করে ধৃত এই তিন ব্যক্তি হচ্ছে শেখ রোশন, সুমন কুমার ও মহম্মদ শানবাজ আলি ওরফে সানি। তাদের মধ্যে রোশন রাজাবাগানের মিঠা তালাও লেনের বাসিন্দা। সুমন কুমারের আসল বাড়ি বিহারের ভাগলপুর জেলার মালখানপুর এলাকায়। যদিও এখন দক্ষিণ কলকাতার বৈষ্ণবঘাটা পাটুলির ফ্ল্যাটে থাকে সে। সানি নিজেও ভাগলপুর জেলার ইশাকচক এলাকার বাসিন্দা। কলকাতায় সে থাকে পূর্ব কলকাতার উত্তর পঞ্চান্নগ্রামের ইস্ট তপসিয়া রোডে। হরিয়ানার বাসিন্দা তিন যুবককে সেনাবাহিনীতে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে তাদের কাছ থেকে সাড়ে দশ লক্ষ টাকা চায় এই চক্রটি। ওই যুবকদের পরিবার ৩ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত তাদের দেয়। সেনাবাহিনীর ভুয়া নিয়োগপত্র তাদের দেওয়া হয়। এরপর অভিযোগকারীদের দিয়ে ফাঁদ পেতে রাজুকে গ্রেফতার করা হয়। পাঁচজন ধৃতকে জেরা করে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পুলিশের হাতে এসেছে।
পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, ২০১৩ সাল থেকে এই চক্রটি সেনাবাহিনী পুলিশ ও বিভিন্ন আধা সামরিক বাহিনীতে চাকরি দেওয়ার নাম করে ভুয়ো নিয়োগপত্র দিয়ে টাকা তুলে আসছে। জালিয়াতির কয়েক কোটি টাকা দিয়ে তারা প্রত্যেকেই বিহার ও কলকাতায় জমি বাড়ি গাড়ি কিনেছে। তারা প্রত্যেকেই বিলাসবহুল জীবনযাপন করে। যদিও এই চক্র চালানোর জন্য তাদের সেনা ও বিভিন্ন বাহিনীর তথ্য জোগাড় করার প্রয়োজন হয়। সেই কারণে বিভিন্ন বাহিনীর গুটিকয়েক সদস্যকে মোটা টাকার লোভ দেখিয়ে নিজেদের দলে টানে তারা। তারাই বাহিনীর জাল নথিপত্র ও রবার স্ট্যাম্প তৈরি করতে সাহায্য করে। এমনকী, নিয়োগপত্রে যে পদের আধিকারিক সই করতে পারেন, তাঁর জাল সই জোগাড় করারও ব্যবস্থা করে তারা। জালিয়াতির সময় এই চক্রের কয়েকজন নিজেদের সেনাবাহিনী ও অন্যান্য বাহিনীর আধিকারিক বলে পরিচয় দিয়ে চাকরিপ্রার্থীদের বিশ্বাস অর্জন করে। একজন সেনাবাহিনীর কর্তার আচরণ বা তিনি কীভাবে কথা বলেন, সেই ব্যাপারে এই জালিয়াতির চক্রের সদস্যদের রীতিমতো প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে বলে খবর। এই চক্রের সঙ্গে আরও কয়েকজন জড়িত রয়েছে বলে পুলিশ আধিকারিকরা নিশ্চিত। তাঁদের সন্ধান চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.