দীপালি সেন: বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন (অ্যাফিলিয়েশন) পেতে আবশ্যিকভাবে পূরণ করতে হবে এনসিটিই-র (NCTE) নির্ধারিত মানদণ্ড। তা নইলে এবছর কড়া অবস্থান গ্রহণ করেছে বাবাসাহেব আম্বেদকর এডুকেশন ইউনিভার্সিটি তথা রাজ্য বিএড (B.Ed) বিশ্ববিদ্যালয়। যার জেরে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সাপেক্ষে মোট ২৫৩ টি বেসরকারি বিএড কলেজের অনুমোদন বাতিল হয়ে গেল। কারণ, মানদণ্ড পূরণ না করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে অনুমোদন তথা স্বীকৃতির পুনর্নবীকরণ পেল না এই কলেজগুলি।
রাজ্যের বিএড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ৬২৪টি কলেজ রয়েছে। যার মধ্যে ৬০৩টি কলেজই বেসরকারি। যাদের অনুমোদন তথা স্বীকৃতির পুনর্নবীকরণের (Renew)জন্য আবেদন গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল এবছর ৫ আগস্ট থেকে। ৩১ জুলাইয়ের বিজ্ঞপ্তিতেই স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, কোন কোন মানদণ্ড পূরণ করা আবশ্যিক। গত ৩০ অক্টোবর অনুমোদন পুনর্নবীকরণের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য-সহ অনলাইনে আবেদনের শেষ দিন ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, এদিন সকাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন পেয়েছে ৩৫০টির মতো কলেজ। অর্থাৎ, বাকি প্রায় ২৫০টি বেসরকারি বিএড কলেজের ভবিষ্যৎ ছিল অনিশ্চিত। শুক্রবার তা স্পষ্ট হয়ে গেল। মোট ২৩২ কলেজের অনুমোদন বাতিল হল।
এতগুলি কলেজের অনুমোদন না পাওয়ার প্রভাব পড়বে বিএড, এমএড কোর্সের আসন সংখ্যার উপরও। গত বছর ৬২৪টি বিএড কলেজ মিলিয়ে প্রায় ৫৩ হাজার পড়ুয়া ভর্তি হয়েছিলেন। সেক্ষেত্রে আড়াইশো কলেজ অনুমোদন না পেলে বহুলাংশে কমবে আসন সংখ্যা। তবে, যে পড়ুয়ারা সংশ্লিষ্ট কলেজগুলিতে আগে থেকেই শিক্ষক প্রশিক্ষণের কোর্সগুলি করছে, তাঁদের উপর এর কোনও প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়ে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়।
অনুমোদন পুনর্নবীকরণের ক্ষেত্রে প্রথমেই ফায়ার সেফটি সার্টিফিকেট থাকা বাধ্যতামূলক। দ্বিতীয়ত, এনসিটি-র নিয়ম মেনে ছাত্র সংখ্যার বিচারে পর্যাপ্ত সংখ্যক শিক্ষক, তৃতীয়ত, শিক্ষকদের যথাযথভাবে বেতন দেওয়া (ডাইরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার)। তিনটি শর্ত পূরণের ক্ষেত্রেই বহু কলেজে বেনিয়ম নজরে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। ফায়ার সেফটি সার্টিফিকেট নেই। পর্যাপ্ত সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ করা হয়নি। আবার চাকরি খোয়ানো শিক্ষকের নামও রেখে দেওয়া হয়েছে শিক্ষকের তালিকায়। ব্যাঙ্কের মাধ্যমে শিক্ষকদের বেতন দেওয়া হচ্ছে না। বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে কলেজের তরফে ভুয়া সুবিধাভোগীও দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ। এই ধরনের বহু অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে জমা পড়াতেই কলেজগুলিতে এনসিটিই নির্ধারিত বিধি কার্যকর করতে তৎপর হয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যার উল্লেখও রয়েছে জুলাই মাসের বিজ্ঞপ্তিতে।
কিন্তু, এবছরই কেন এত কড়াকড়ি? বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এর আগে একাধিকবার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল কলেজগুলিকে। তারপরও নিয়মগুলি মানার ক্ষেত্রে কলেজ কর্তৃপক্ষের গড়িমসি নজরে আসতেই এবার কঠোর হতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। এর পরও বেশ কিছু কলেজের তরফে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ভুয়া নথি জমা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আবার অসৎ ব্যক্তিদের অর্থ দিয়ে অ্যাফিলিয়েশন পাইয়ে দেওয়ার টোপে পা দিয়েছেন অনেকে। এসবের কারণেই কলেজগুলির অনুমোদন বাতিল করা হল বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.