ফাইল ছবি
কৃষ্ণকুমার দাস: নয়ের দশকে উচ্ছেদ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম ভরকেন্দ্র দক্ষিণ কলকাতার গোবিন্দপুর (Gobindapur) রেল কলোনি এবার করোনার গোষ্ঠী সংক্রমণের শিরোনামে। গোবিন্দপুর বসতিতে একসঙ্গে ২৩ জনের কোভিড সংক্রমণ ধরা পড়ায় উদ্বেগ বেড়েছে রাজ্য সরকারের। বুধবার বিকেলেই তড়িঘড়ি পুলিশ পাঠিয়ে এলাকা সিল করে দেওয়া হয়েছে। ওই বসতিতে গোষ্ঠী সংক্রমণ হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য আধিকারিকরা।
বসতি লাগোয়া গোলপার্ক হাউজিং কো-অপারেটিভে পাঁচ-ছয়জন সম্পন্ন গৃহস্থেরও করোনা রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। তবে তাঁদের অধিকাংশই উপসর্গহীন নয়তো মৃদু উপসর্গের হওয়ায় বাড়িতে হোম আইসোলেশনে রয়েছেন। উচ্চবিত্তদের এই নামী আবাসনে টলিউডের প্রখ্যাত পরিচালক, অভিনেত্রীর মতো বিশিষ্টরাও বসবাস করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আজ, বৃহস্পতিবার ওই সংক্রমিত বসতির সন্দেহভাজন সমস্ত বাসিন্দার লালারস পরীক্ষা করতে বিশেষ মেডিক্যাল টিম পাঠাচ্ছে পুরসভা। স্বাস্থ্য দপ্তর কনটেনমেন্ট জোন করে ঘোষণার পর বসতিতে শুরু হয়েছে জীবাণুমুক্ত করার বিশেষ অভিযান। কিন্তু গোবিন্দপুর বসতিতে গোষ্ঠী সংক্রমণের খবরে উদ্বেগ ছড়িয়েছে লেক গার্ডেন্স, যোধপুর পার্ক, গলফগ্রিন, সেলিমপুর, ঢাকুরিয়া ও পোদ্দারনগরেও। কারণ, এই বস্তির বাসিন্দারা অনেকেই এই সমস্ত এলাকায় নানা ধরনের পরিষেবা, জীবিকা ও পেশার সঙ্গে যুক্ত।
লকডাউনে (Lockdown) প্রথম আড়াই মাস এখানে স্থানীয় কাউন্সিলর রতন দে কমিউনিট কিচেন করে গোবিন্দপুরের বাসিন্দাদের রান্না খাবার খাইয়েছেন। কিন্তু আনলক হতেই বাসিন্দারা জীবিকার টানে বেরিয়ে পড়েন। সিকিউরিটি গার্ড, দোকানের কর্মচারি, ফ্ল্যাটে পরিচারিকার কাজে যাওয়া মানুষ মারফত এই বসতিতে করোনা সংক্রমণ হয়েছে বলে মনে করছেন ৯৫ পল্লি ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বিজয় দত্ত। পাশের মোল্লাহাটি বসতির মতো এখানেও বেশ কিছু ট্যাক্সি ড্রাইভার থাকেন। তাঁরা আক্রান্ত হলে গোটা শহরে বাড়বে সংক্রমণের আশঙ্কা। স্বাস্থ্য দপ্তরের তথ্য, গোবিন্দপুরের ১১/২, ১২/৩২, ৪০এ, ৪৬, ৪৯এ, ৫২, ৬৬ এ ঠিকানার বাড়িগুলিতে করোনা রোগীর সংখ্যা বেশি। পাশের রহিম ওস্তাগর রোডেও নতুন করে একাধিক করোনা আক্রান্ত অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভরতি হয়েছেন। এর মধ্যে কয়েকটি ঘরে আবার সপরিবারে করোনার ছোবলের শিকার হয়েছেন। আরও বেশ কয়েকটি পরিবারের সদস্যরা প্রবল জ্বর ও সর্দি-কাশিতে ভুগছেন। সেই রোগীদের চিহ্নিত করতে এদিন ৯৩ ওয়ার্ডের স্বাস্থ্যকর্মীরা পিপিই কিট পরেই বসতির ঘরে ঘরে থার্মাল গান ও পালস অক্সিমিটার দিয়ে পরীক্ষা করে অসুস্থদের তালিকা তৈরি করেছেন।
বস্তুত উপসর্গহীন বসতিবাসীই শহরে প্রবল ভীতির কারণ হয়ে উঠেছে। কারণ, এই তাঁরা বিভিন্ন বাড়িতে নানা ধরনের পরিষেবামূলক কাজের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত। গোবিন্দপুর বস্তিতে গোষ্ঠী সংক্রমণের খবরে উদ্বিগ্ন স্থানীয় বিদায়ী কাউন্সিলর তথা পুরসভার প্রশাসক রতন দে জানান, “হিসাব করে দেখেছি, ছয়-সাতটি বাড়িতেই একাধিক বাসিন্দার শরীরে গত কয়েকদিনে হু-হু করে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। স্বাস্থ্যদপ্তর বসতিতে গোষ্ঠী সংক্রমণ মনে করছে। এলাকা সিল করে অন্য বাসিন্দাদের আর্সেনিকা অ্যালবামা বা হাইড্রক্সি ক্লোরোকুইন খাওয়ানো শুরু হয়েছে।” উত্তরের বেলগাছিয়ায় ১৩ বা বাগবাজারের বসতিতে ১৬ জন করোনা আক্রান্ত হওয়ার পরই পুরসভা পরিস্থিতি হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছিল। কিন্তু দক্ষিণের গোবিন্দপুরে বস্তিতে এখনও পর্যন্ত ২৩ জন সংক্রমিত হওয়ায় উদ্বেগ ছড়িয়েছে স্বাস্থ্যভবনেও। বস্তিতে এমন প্রবল সংক্রমণের জন্য মাস্ক না পরাকে দায়ী করেছেন কলকাতা পুরসভার মুখ্য প্রশাসক ও পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তাঁর কথায়, “সামাজিক দূরত্ব না মানলে, মাস্ক না পরলে ২৩ কেন, আরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হবেন।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.