ফাইল ছবি
গৌতম ব্রহ্ম: ১২ ঘণ্টায় ২১ টি পেসমেকার! গড় হিসাবে ঘণ্টায় প্রায় দু’টো। সরকারি হাসপাতালে এহেন চমকপ্রদ পরিষেবার নমুনা রাখল কলকাতার পিজি (এসএসকেএম) হাসপাতাল। যা কি না সারা দেশের মধ্যেই নজির বলে মনে করছে চিকিৎসকমহল। কেউ আবার একধাপ এগিয়ে একে বিশ্বরেকর্ডও বলছেন। সাধারণত এ রাজ্যের এক-একটি মেডিক্যাল কলেজ মাসে গড়ে ৩০টি পেসমেকার বসায়। সেখানে একদিনে ২১ জনের শরীরে স্থায়ী পেসমেকার বসানো যে চাট্টিখানি কথা নয়, স্বাস্থ্যকর্তারা তা একবাক্যে মানছেন।
[আধারের সঙ্গে ভোটার কার্ডের সংযুক্তি বাধ্যতামূলক করতে চায় নির্বাচন কমিশন]
পিজি হাসপাতালের অধিকর্তা ডা. অজয় রায়ের দাবি, পূর্বাঞ্চলের কোনও সরকারি হাসপাতালের ঝুলিতে এমন রেকর্ড নেই বলেই মনে হয়। পিজি-র কার্ডিওলজি বিভাগ অবশ্য অন্য মেডিক্যাল কলেজের থেকে অনেক বেশি পেসমেকার বসায়। মাসে প্রায় ২০০টি। কিন্তু একদিনে ২১ টি পেসমেকার এই প্রথম। কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান ডা. শঙ্করচন্দ্র মণ্ডল জানালেন, ১০ ফেব্রুয়ারি ২১ টি পেসমেকার বসানো হয়েছে। ৬-৭ জন ডাক্তারের একটি টিম এই অসাধ্যসাধন করেছেন। রোগীদের মধ্যে ১২ জন পুরুষ ও ৯ জন মহিলা। গড় বয়স পঞ্চাশের আশপাশে। শঙ্করবাবু জানালেন, বাইরের কোনও হাসপাতালে পেসমেকার বসাতে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকার ধাক্কা। আর এখানে সবটাই বিনামূল্যে। স্টেন্ট বসাতেও কোনও টাকা লাগছে না। একজন রোগীর শরীরে ৩টি স্টেন্ট বসানো হয়েছে, এমন নজিরও রয়েছে। এই সব কারণেই সরকারি হাসপাতালে সবাই ভিড় করছে।
শুধু এ রাজ্যের মানুষ নয়, পিজি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে ভিনরাজ্য এমনকী ভিন দেশ থেকেও প্রচুর মানুষ আসছেন। এঁদের মধ্যে রোগীদের একটা বড় অংশ আসে কার্ডিওলজি বিভাগে। ফলে, বিশ্রাম নেই পিজির ক্যাথলাবের। সকাল আটটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত অপারেশন চলছে। কিন্তু একদিনে ২১ টি পেসমেকার বসানো সম্ভব হল কী করে? শঙ্করবাবু জানালেন, ১০ ফেব্রুয়ারি শনিবার ছিল। শনিবার অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি ও অ্যাঞ্জিওগ্রাম করার চাপটা একটু কম থাকে। তাছাড়া বিভিন্ন কারনে ‘ব্যাক লগ’ ছিল। তাই ওইদিন পেসমেকার বেশি করে বসানো হয়। ১০ ফেব্রুয়ারি ক্যাথল্যাবের তিনটি ওটিতেই পেসমেকার বসিয়েছেন ডাক্তারবাবুরা। বিশিষ্ট কার্ডিও-থোরাসিক সার্জন ডা. কুণাল সরকার জানালেন, “একদিনে একুশটা পেসমেকার বসানো চাট্টিখানি কথা নয়। অত্যন্ত কঠিন কাজ। তবে রেকর্ড কি না বলতে পারব না। খোঁজ নিতে হবে।”
[দু’বছরের অপেক্ষায় মিলল অনুলেখক, মাধ্যমিকে বসার সুযোগ জন্মান্ধ রশিদার]
একই বক্তব্য কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের কার্ডিও থোরাসিক সার্জন ডা. প্লাবন মুখোপাধ্যায়ের। তাঁর বক্তব্য, “একুশটা সত্যিই অনেক বড় সংখ্যা। অভাবনীয়।” বিশিষ্ট কার্ডিওলজিস্ট ডা. সুনীলবরণ রায় অবশ্য নিশ্চিত দেশে তো বটেই এটা বিশ্বরেকর্ড ও হতে পারে। তাঁর মত, একদিনে পাঁচ-ছ’টি পেসমেকার বসানোই অনেক। সেখানে একুশটি সত্যিই নজিরবিহীন। দেশ তো বযেই বিশ্বের কারও ঝুলিতে এমন রেকর্ড নেই বলেই মনে হয়। সাধারণত, একটি সিঙ্গল চেম্বার পেসমেকার বসাতে ৩০-৪০ মিনিট নেন ডাক্তারবাবুরা। ডুয়াল চেম্বার হলে সময়টা একটু বেশি লাগে। প্রায় ৪৫-৫০ মিনিট। ১০ ফেব্রুয়ারি ডাক্তারবাবুরা টানা কাজ করায় সংখ্যাটা একুশে পৌঁছেছে। খুশি রাজে্যর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা ডা. দেবাশিস ভট্টাচার্য। জানিয়েছেন, গর্ব করার মতো পারফরম্যান্স। কার্ডিওলজি বিভাগের গোটা টিমকে অভিনন্দন। বাকিরাও অনুপ্রেরণা পাক পিজি হাসপাতাল থেকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.