ফাইল ছবি।
ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: সিপিএম নামেই তিতিবিরক্ত মানুষ! ৩৪ বছরের অভিজ্ঞতায় লাল পার্টি থেকে সমর্থন পুরোপুরি উঠে গিয়েছে। দলাদলি, ঝগড়ার জেরে বাম-কংগ্রেস জোট প্রত্যাখ্যাত। মানুষ হয় বিজেপিকে হারাতে তৃণমূলকে ভোট দিয়েছে, অথবা তৃণমূলকে হারাতে বিজেপিকে। চব্বিশের লোকসভা ভোট (2024 Lok Sabha Election) নিয়ে এই আত্মোপলব্ধি বাম শরিক দলগুলির। আগামী ১৪ জুন বামফ্রন্টের (Left Front) বৈঠক হওয়ার কথা। কমবেশি ভোট কমেছে শরিক-সহ বাম-কংগ্রেস সব দলেরই। কেন কোন পরিস্থিতিতে তা হল, ভোট নিয়ে দলের নেতৃত্বের ভাবনা আর বাস্তব চিত্র কী, তা নিয়ে চুলচেরা আলোচনা হতে পারে ফ্রন্টের সেই বৈঠকে।
প্রাথমিকভাবে যা সামনে এসেছে, তাতে খুব স্পষ্ট হয়েছে প্রত্যাখ্যানের ছবি। সেখানে একাধিক আলোচনায় উঠে এসেছে যে, বাস্তব পরিস্থিতি আঁচ করতেই পারেনি সিপিএম (CPM)। শরিক দলগুলো একযোগে প্রশ্ন তুলেছে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর সঙ্গে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের (Md. Selim) একান্তে নেওয়া সিদ্ধান্ত নিয়ে। শরিকদের ক্ষোভ, সবটা ওই দুজনের আলোচনায় ঠিক হয়েছে, বস্তব পরিস্থিতি কেউ আঁচ করেনি। সিপিআই, ফরওয়ার্ড ব্লক, আরএসপি – প্রত্যেকে সিপিএমকে কাঠগড়ায় তুলেছে। শরিকদের বক্তব্য, হাত ধরে অধীর চৌধুরী আর মহম্মদ সেলিম দাঁড়িয়ে পড়লেন। বহরমপুর থেকে কান্দি, লালগোলায় বড় বড় কাটআউট। ওই জোড়া মুখের ছবিই গোটা জেলায় বামেদের ভোট কমিয়ে দিয়েছে!
একই ছবি রাজ্যজুড়ে। একদা ফ্রন্টের বৃহত্তর শরিক এসইউসিআই-এর (SUCI) এক রাজ্য নেতার কথায়, “ট্রেনে-বাসে, গ্রামে গ্রামে মানুষের কাছে গিয়ে আমরা শুনেছি ‘আবার সিপিএম’! তাদের কোনওভাবেই ভোট দেওয়া যাবে না। এটা মানুষের উপলব্ধি। বাম শরিক দলগুলোর যে সেই উপলব্ধি অন্তত ভেট মিটে যাওয়ার পরও হল, তাই অনেক।” ফরওয়ার্ড ব্লকের এক নেতার বক্তব্য, “যা ভোট কমেছে তা ওই ছবি দেখেই। সিপিএমের নেতাদের হাত কেটে গলা কেটে খুন করেছে যে কংগ্রেস, তার নেতার সঙ্গে বড় বড় ছবি দিয়ে কাটআউট! ওই এলাকার মানুষ মেনে নেবে? দলের কর্মীদের গিয়ে সিপিএম নেতারা বলতে পেরেছেন মুর্শিদাবাদে কংগ্রেস সমর্থিত সিপিএম প্রার্থীকে ভোট দিন। বা বহরমপুরে কংগ্রেস নেতারা সিপিএমের বাড়িতে প্রচারে গিয়েছে?”
ভোটের হিসাব বলছে, ২০১৯-এ সিপিএম রাজ্যজুড়ে ভোট পেয়েছিল ৬.৩৪ শতাংশ। এবার তাদের মোট ভোট ৫.৬৭ শতাংশ। কংগ্রেস ২০১৯-এ ভোট পেয়েছিল ৫.৬৭ শতাংশ। ২০২৪-এ ভোট পেয়েছে ৪.৬৮ শতাংশ। ২০১৯-এ বাম-কংগ্রেসের জোট হয়নি। তাও তাদের প্রাপ্ত ভোট মিলিয়ে দাঁড়িয়েছিল ১২ শতাংশ। এবার তারা জোট করে পেয়েছে ১০.৩৫ শতাংশ। শরিক দলগুলোর মধ্যে ফরওয়ার্ড ব্লক ৩৯.৪৩ শতাংশ কম ভোট পেয়েছে। বারাসতে তাদের ভোট সব থেকে বেশি হয়। এবারও তাই। তারা এক লক্ষ ভোট পেয়েছে সেখানে।
সিপিআই ২০২২-এর পুরসভা আর ২০২৩-এর পঞ্চায়েত ভোটে পেয়েছিল ১২ শতাংশ ভোট। এবার তাদের ভোট নেমে এসেছে ৫.৭ শতাংশে। যা ২০২১-এর বিধানসভা ভোটের প্রায় সমান। সে সময় তারা পেয়েছিল ৫ শতাংশ ভোট। এক নেতার কথায়, “মানুষ বাম-কংগ্রেস জোটকে নিচ্ছে না। হয় বিজেপিকে হারাতে তৃণমূলকে, অথবা তৃণমূলকে হারাতে বিজেপিকে ভোট দিয়েছে। আর সিপিএম সম্পর্কে রিজারভেশন (সংকোচ) রয়ে গেছে।”
যেভাবে ভোট কমেছে তার কারণ হিসাবে বিভিন্ন দফায় শরিক দলের মধ্যে প্রার্থী দেওয়া নিয়ে একমত না হওয়ার অশান্তিকে দায়ী করছেন তাদের রাজ্য নেতৃত্ব। রাজ্য সম্পাদক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “পর্যালোচনায় আমাদের অনেক বিষয়ই উঠে এসেছে। সেগুলো নিয়ে ভাবতে হবে।” ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “বামেদের নিচু তলায় সংগঠন ঝুরঝুরে হয়ে গেছে। সেটা সকলকে বুঝতে হবে। আর তৃণমূল গরিব মানুষকে সরাসরি যে আর্থিক সুবিধা দিয়েছে, তার প্রভাব তো রয়েছেই।” আরএসপির রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক হতে পারে শনিবার। রাজ্য সম্পাদক তপন হোড় একবাক্যে স্বীকার করেছেন, “বাম-কংগ্রেস জোটকে বিজেপির বিকল্প হিসাবে মানুষ মেনে নেয়নি। আর বামেদের সাংগঠনিক শক্তিও অনেক কমেছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.