গৌতম ব্রহ্ম: ভুয়া কাগজপত্র নিয়ে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি হতে এসে ধরা পড়ল ভিনরাজ্যের দুই ছাত্রী৷ দু’জনেই রাজস্থানের বাসিন্দা৷
ঘটনাস্থল কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল৷ এমবিবিএস কোর্সে ভর্তির কাউন্সেলিং চলছিল৷ সেখানেই যোগ দিতে আসে ওই দুই ছাত্রী৷ সঙ্গে ছিলেন দু’জনেরই বাবা৷ কাউন্সেলিংয়ের সময় ওই দুই ছাত্রীর কাগজপত্র পরীক্ষা করে চমকে যান আরজি করের আধিকারিকরা৷ দেখেন, মার্কশিট, হস্টেল অ্যালটমেন্ট, সিট অ্যালটমেন্ট-সহ সবই জাল কাগজপত্র৷ সঙ্গে সঙ্গেই টালা থানার পুলিশকে খবর দেওয়া হয়৷ তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, সাড়ে ২২ লক্ষ টাকার বিনিময়ে কলকাতার একটি ‘এজেন্সি’ এই কাগজপত্র তৈরি করে দিয়েছে৷ দু’জন ছাত্রীকেই টালা থানা আটক করেছে৷ জালিয়াতির কথা স্বীকার করে নিয়েছেন ডিসি (নর্থ) শুভঙ্কর সিনহা৷ জানিয়েছেন, রাজস্থানের দুই ছাত্রী ভুয়া কাগজপত্র নিয়ে ভর্তি হতে এসেছিল৷ ভুয়া কাগজপত্রগুলি সব আটক করা হয়েছে৷ কিন্তু ছাত্রীদের গ্রেফতার করা হয়নি৷
এই ঘটনায় চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্যকর্তারা৷ রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা (শিক্ষা) ডা. সুশান্ত বন্দ্যেপাধ্যায় জানিয়েছেন, জাল কাগজপত্র নিয়ে আরজি করে ভর্তি হতে এসেছিল দুজন ছাত্রী৷ দু’জনকেই পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে৷ কলেজ সূত্রের খবর, ওই দুই অভিযুক্ত ছাত্রীর নাম শুভাঙ্গিনী ও প্রাচী জৈন৷
ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছে আরজি কর কর্তৃপক্ষও৷ কলেজের অধ্যক্ষ ডা. শুদ্ধোদন বটব্যাল বলেন, “ভর্তি হতে গেলে মার্কশিট, ব়্যাঙ্ক কার্ড-সহ একাধিক কাগজপত্র দরকার৷ সবই জাল করেছিল ওই দু’জন৷ এমনকী হস্টেল ও সিট অ্যালটমেন্টের জাল কাগজও তৈরি করেছিল৷” জেরার মুখে দুই ছাত্রী জানিয়েছে, ফোনে কলকাতার এক ব্যক্তির সঙ্গে তাদের যোগাযোগ হয়৷ ওই ব্যক্তি নিজেকে আরজি করের আধিকারিক পরিচয় দিয়ে ভর্তির প্রতিশ্রুতি দেয়৷ সেই কথায় বিশ্বাস করে ওই দুই ছাত্রী ওই ব্যক্তির একটি অ্যাকাউন্টে ৫০ হাজার টাকা জমা করে৷ কথা ছিল, ভর্তির পর ২২ লক্ষ টাকা করে দেবে ছাত্রীরা৷ জানা গিয়েছে, ওই অ্যাকাউন্টটি ভুবনেশ্বরের৷
গত বছর বাঁকুড়া সম্মিলনী কলেজে ঝাড়খণ্ডের একটি ছাত্র জাল কাগজপত্র নিয়ে ভর্তি হতে এসে ধরা পড়ে৷ সেবার বাঁকুড়ার ডিন-সহ দু’জন আধিকারিকের সই ও স্ট্যাম্প জাল করেছিল ওই ছাত্র৷ এবারও প্রায় সেই পথেই হেঁটেছিল রাজস্থানের দুই ছাত্রী৷ যদিও একাধিক প্রশ্নের উত্তর মেলেনি৷ শুধু জানা গিয়েছে, ওই দুই ছাত্রীর একজন ‘নিট’-এর মেধাতালিকায় নিচের দিকে জায়গা পেয়েছিল৷
আন্দামান, নাগাল্যান্ড, মণিপুর-সহ বেশ কয়েকটি প্রান্তিক রাজ্য ছাড়া সর্বত্রই অনলাইন কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে ডাক্তারিতে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা হয়৷ এই রাজ্যগুলির ছাত্রছাত্রীদের ‘অফলাইন কাউন্সেলিং’-এর সুযোগ রয়েছে৷ রাজস্থান অবশ্য এই তালিকায় পড়ছে না৷ জানা গিয়েছে, রাজ্য জয়েন্টের মাধ্যমে এ রাজ্যের সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ৮৫ শতাংশ আসনে ছাত্র ভর্তি নেয়৷ ১৫ শতাংশ আসনে ‘নিট’-এর মেধাতালিকায় থাকা ছাত্রছাত্রীরা ভর্তি হয়৷ চলতি বছরে এদিন ছিল রাজ্য জয়েন্টের মাধ্যমে ভর্তির শেষ দিন৷ ‘নিট কোয়ালিফাই’ করা ছাত্রাছাত্রীদের জন্য অনলাইন কাউন্সেলিংয়ের শেষ তারিখ ২০ সেপ্টেম্বর৷ সব ছাত্রছাত্রীকেই ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভর্তি করতে হবে, এটাই আদালতের সিদ্ধান্ত৷ জানা গিয়েছে, এদিন ওই দুই ছাত্রী ব্যাঙ্ক ড্রাফট ও ‘অরিজিনাল’ কাগজপত্র নিয়ে ভর্তি হতে এসেছিল৷ সমস্ত ভুয়া কাগজপত্র মেলের মাধ্যমে ওই ব্যক্তির থেকে ছাত্রীরা পেয়েছিল৷ শুদ্ধোদনবাবু বলেন, “কাগজপত্র দেখেই আমাদের সন্দেহ হয়েছিল৷ তাই ডেকে পাঠিয়েছিলাম৷ কাউকে ধরতে গেলে তো প্রমাণ চাই৷”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.