ফাইল ছবি
অভিরূপ দাস: অল্প বিদ্যা ভয়ংকরী! উনিশ বছরের ছেলের কাণ্ড দেখে এমনটাই বলছেন সকলে। থার্মোমিটার ভেঙে পারদ বের করতেন। তারপর তা ভরে নিতেন ইঞ্জেকশনে (Injection)। শেষমেশ হাতে, পেটে ঢুকিয়ে দিতেন সূচ। এভাবেই শরীরে পারদ ঢুকিয়েছেন রানাঘাটের ছেলেটি। তার আর জেরে মৃত্যুমুখে পড়েন তিনি।
বিদঘুটে বললেও কম বলা হয়। ইন্টারনেট ঘেঁটে এমন আজগুবি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গিয়েই মৃত্যুর মুখে পড়েছিলেন যুবক। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ইএনটি (ENT) বিভাগের চিকিৎসকদের চেষ্টায় নতুন জীবন পেলেন বুধবার। বছর উনিশের ওই ছেলের বাড়ি নদিয়ার রানাঘাটে (Ranaghat)। চণ্ডীগড়ে কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে গিয়েছিলেন। থাকতেন বাড়িভাড়া করে। পারদ কি আদৌ স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর? কয়েক মাস গুগল ঘেঁটে এসব নিয়ে পড়তে শুরু করেছিলেন। ইন্টারনেটে আর্টিকেলে পড়েন, পারদ স্বাস্থ্যের অনিষ্ট করে না। তারপরেই মাথায় জাগে অদ্ভুত চিন্তা।
থার্মোমিটার ভেঙে বের করেন পারদ। তা ইঞ্জেকশনে টেনে নিয়ে হাতে, গলায়, পেটে প্রবেশ করিয়ে দেন সুচ ফুঁটিয়ে। এর কিছুদিন বাদেই বা হাত, গলা, তলপেট ফুলতে শুরু করে। যেন পেল্লায় কোনও ফোঁড়া ত্বক ফেটে বেরিয়ে আসতে চাইছে। ক্রমশ ক্লান্ত হতে থাকে শরীর। জ্বর আসত ঘনঘন। খবর পেয়েই চণ্ডীগড়ে (Chandigarh) ছুটে যান অভিভাবকরা। অসুস্থ ছেলেকে নদিয়ায় নিয়ে আসেন। কিন্তু ছেলে যে এমন কাণ্ড করেছে, তা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি তাঁরা। মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন ছেলেটিও।
নদিয়ায় বেসরকারি হাসপাতালে আল্ট্রাসোনোগ্রাফি (USG) হয় যুবককে। সেখানেই দেখা যায় বিজাতীয় কিছু ঢুকে রয়েছে ওই ফোলা জায়গাগুলোতে। সেখানেই রহস্যের উদঘাটন। উনিশ বছরের ছেলেটি স্বীকার করেন, ‘‘পারদ ঢুকিয়েছি শরীরে।’’ ১৫ ফেব্রুয়ারি তাকে নিয়ে আসা হয় কলকাতা মেডিক্যাল (Calcutta Medical College) কলেজে। সিটি স্ক্যান হয় তাঁর। ১৯ তারিখ তাঁর শরীরে ‘ইন সিটু ড্রেন রিমুভাল’ পদ্ধতি করা হয়। তাও কমছিল না সমস্যা। দ্রুত তাঁকে রেফার করা হয় ইএনটি বিভাগে।
দেখা যায়, শ্বাসনালির কাছে আটকে পারদের দলা। যে কারণেই মিটছে না শারীরিক সমস্যা। বুধবার গলার কাছটা কেটে সেই পারদ বের করা হয়। ইএনটি বিভাগের চিকিৎসক অ্যাসোসিয়েট প্রফেশর ডা. দীপ্তাংশু মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, পারদটা ছিল থায়রয়েড (Thyroid) গ্ল্যান্ডের কাছে। বের করতে দেরি হলে পুরো থাইরয়েড কার্টিলেজটা গলিয়ে দিতে পারত। সময়মতো পারদ বের না করলে হতে পারত নিউমোনিয়াও।
৪৫ মিনিটের অস্ত্রোপচারে ইএনটি বিভাগের অপারেশন টিমে ছিলেন ডা. সৌমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, ডা. দীপ্তাংশু মুখোপাধ্যায়, ডা. হরিশ বালসুব্রহ্মণ্যম, ডা. প্রদ্যুম্ন কুণ্ডু। অ্যানাস্থেশিয়া টিমের দায়িত্বে ছিলেন ডা. দেবাবহ্নি বড়ুয়া। যে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে গলা কেটে পারদ বের করা হল তার নাম, এক্সপোলেরেশন অফ আউন্ড আন্ডার জেনারেল অ্যানাস্থেশিয়া। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আপাতত কিশোরের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। তবে আগামী কয়েকদিন কড়া পর্যবেক্ষণে থাকবেন তিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.