প্রতীকী ছবি।
ক্ষীরোদা ভট্টাচার্য: কত লোকের কত যে মুদ্রা দোষ তার খোঁজ কে রাখে! অনেকে দাঁত দিয়ে নখ কাটে। কেউ আবার পেনসিল খায়! কিন্তু রোজ মুঠো করে মাথার চুল ছিঁড়ে সোজা মুখে চালান? এর পরে গিলতে যতটা সময়! তার পর তা সোজা পেটে। এমন বদভ্যাসের কথা বড় একটা শোনা যায় না।
গত দশ বছর ধরে এই কাজটাই করেছে উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরের রীতা দাস। বছর ষোলোর কিশোরী। আর পাঁচটা মেয়ের মতো স্কুলে যায়। লেখাপড়া করে। বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করে। খেলে বেড়ায়। কিন্তু যেদিন থেকে বন্ধুরা জানল যে মাথার চুল খায়, এক এক করে সরে গেল সবাই।
দিন কয়েক আগে সেই মেয়েকে নিয়ে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের গ্যাস্ট্রো বিভাগের আউটডোরে হাজির রীতার বাবা-মা। আউটডোরের চিকিৎসককে জানানো হল মেয়ের পেট ক্রমশ ফুলছে। বার বার বমি হয়। খাওয়ার পরিমাণ কমে গিয়েছে। ডাক্তারবাবু দেখলেন। কয়েকটা ওষুধ দিলেন। নিয়ম করে খেয়ে দশদিন পর ফের আসতে বললেন।
দিন দশেক পর মেয়েকে নিয়ে ফের আর জি কর হাসপাতালে। উপসর্গ কমার বদলে আরও বাড়ল। কেমন যেন সংশয় হল ডাক্তারবাবুর। এমনটা তো হওয়ার কথা নয়। এবার এন্ডোস্কোপি করা হল। রিপোর্ট হাতে পেয়ে চক্ষু চড়কগাছ। মেয়ের পেটের মধ্যে শক্ত রোমশ কিছু দলা পাকিয়ে আটকে আছে। মেয়ের মায়ের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, গত দশ বছর ধরে মাথার চুল ছিঁড়ে খায়। আগে কম করত। যতদিন দিন যাচ্ছে সমস্যা বাড়ছে। সব শুনে হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে পাঠানো হল। ফের আরেকদফা পরীক্ষা। ষোল বছরের মেয়ে হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের ডাক্তারবাবুদের অকপটে সব বলেছে।
এক চিকিৎসক বলেন, “এটা একধরনের রোগ। তবে খুবই বিরল। রোগের নাম ট্রাইকোবেজোয়ার। এই ধরনের রোগী নিজের অজান্তে মাথার চুল ছিড়ে ফেলে। পরে খেয়ে নেয়। সমস্যা হল। চুল হজম হয় না। তাই পাকস্থলীতে জমা হয়। সঙ্গে পেটের থেকে নিঃসৃত বিভিন্ন রস। সব তালগোল মিলিয়ে পেটে জমা হয়।”
গত মঙ্গলবার সার্জারি বিভাগের ছয় চিকিৎসক প্রায় দেড় ঘণ্টা অপারেশন করে পেট থেকে দশ বছরের জমা চুল বের করেছেন। ওজন কম করে ১ কেজি ৭০০গ্রাম। অপারেশনের পর কিশোরী ভালো আছে। স্বস্তিতে সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.