সুব্রত বিশ্বাস: রেলের সম্পত্তি চুরি, যাত্রীদের নিরাপত্তা, টিকিট দালাল ধরা নিয়েই ব্যস্ত থাকেন ওঁরা। উপরন্তু বদলির চাকরি। পরিবারের উপর নজর দেওয়াটাই কঠিন হয়ে পড়ে। এত কিছু সত্বেও একেবারে সফল পরিবারের কর্তার ‘তকমা’ জুটে গেল পূর্ব রেলের ১৬ জন আরপিএফ কর্মীর। সন্তানের কৃতিত্বের জন্যই তাঁদের এই সফলতা বলে স্বীকার করে নিয়েছেন প্রত্যেকেই।
কৃতী ১৬ জন পড়ুয়া এবার প্রধানমন্ত্রী স্কলারশিপ যোজনার অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। এরা প্রত্যেকেই সর্বভারতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষায় সফল হয়েছেন। ১৬ জনের আটজন ছাত্র ও আট ছাত্রী। ছাত্রদের মাসিক আড়াই হাজার ও ছাত্রীদের তিন হাজার টাকা করে বৃত্তি দেওয়া হবে। কৃতীদের প্রত্যেকেই রাজ্যের স্কুলগুলি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পাশ করেছেন দু’এক বছরের মধ্যে। সাক্ষীকুমারী চৌবে সর্বভারতীয় এমবিবিএস এর প্রবেশিকা পরীক্ষায় সফল হয়েছেন। লিলুয়া অগ্রসেনের প্রাক্তনী আইএসসিতে ৮৫ শতাংশ নম্বর পেয়েছিলেন। বাবা বিনোদকুমার চৌবে পূর্ব রেলের সদর দপ্তরের আরপিএফ কর্মী। মেয়ের কৃতিত্বে খুশি হলেও ‘সবটাই মেয়ের প্রচেষ্টা’ বলে জানিয়েছেন। তবে পরিবারের পক্ষ পড়াশোনার জন্য সব রকমের সহযোগিতা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে।
বর্ধমান ইস্ট ওয়েস্ট মডেল স্কুলের কৃতী ছাত্র রূপম রায়ের বাবাও আরপিএফ কর্মী। বর্ধমান পোস্টের এএসআই বিশ্বরূপ রায়। রূপম তারাতলার ইন্ডিয়ান মেরিন ইউনিভারসিটির এখন পড়ুয়া। ছেলে যে পড়াশোনোয় ভাল তা জানতেন তিনি। দ্বাদশ শ্রেণিতে প্রাপ্তনম্বর ছিল ৮৮.২৫ শতাংশ। বিশ্বরূপবাবু অকপটে স্বীকার করে নেন, ছেলের পাশাপাশি বাবা-মায়ের প্রচেষ্টাও ছিল একই পর্যায়ে। সন্তানের সফলতায় গাইড লাইনও বাতলে দিতেন বাবা। বহরমপুর আরপিএফ পোস্টে কর্মরত সুজিত সরকারের মেয়ে শ্রেয়া কম্পিউটার অ্যাপলিকেশনে প্রবেশিকাতে সফলতার জন্য পাচ্ছেন এই স্কলারশিপ। বালিগঞ্জ শিক্ষাসদন থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ৯২ শতাংশ নম্বর পেয়েছিলেন। সুজিতবাবু মনে করেন, মেয়ের পাশাপাশি সফলতার জন্য পারিবারিক পরিবেশ থেকে শুরু করে স্কুলের পরিবেশ সবটাই কাজে এসেছে। অপরাধীদের পিছু ছোটাটা কর্মজীবনে প্রয়োজনীয় বিষয় হলেও সন্তানের সাফল্যটা সব চেয়ে জরুরি। ফলে সেদিকেও লক্ষ্য রেখে চলতে হয়েছে।
সর্বভারতীয় প্রবেশিকায় ১৬ জন কৃতীর মধ্যে এমবিবিএস, বি টেক (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং), বিএইচএম, কম্পিউটার সায়েন্স, ইনফরমেশন টেকনোলজি, এলএলবি, বিএড, ইসিই, বিফার্মার মতো কোর্স রয়েছে। পূর্ব রেলের আরপিএফ আইজি পরম শিব বলেন, “সন্তানদের এই সফলতায় বিভাগ গর্বিত। আমরা তাদের কৃতিত্বে সম্মান জানাব। এবছর শুধু পূর্ব রেলে ১৬জন আরপিএফ কর্মীর সন্তানরা এই প্রবেশিকায় সফল হয়ে স্কলারশিপ পাচ্ছেন। গত বছর ছিল চারজন। আগামী দিনে আরও বেশি সফলতা আসবে বলে আশা রাখছি।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.