নব্যেন্দু হাজরা: পনেরো বছরের পুরনো ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক গাড়ি ৬ মাসের মধ্যে বাতিলের নির্দেশ ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুনালের (National Green Tribunal)। কলকাতা, হাওড়া সহ গোটা রাজ্যের ক্ষেত্রে নির্দেশ কার্যকর করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি দূষণ নিয়ন্ত্রণে গণপরিবহণের ক্ষেত্রে বিএস-৪ (BS IV)-এর নিচের গাড়ি বাতিলের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। গ্রিন ট্রাইবুনালের নির্দেশ, আগামীদিনে শুধুমাত্র বিএস-৪ আর বিএস—৬ গাড়ি কলকাতা ও হাওড়ায় চলবে। পাশাপাশি মাইক বাজানোর ক্ষেত্রে ‘শব্দ দূষণ রুখতে সাউন্ড লিমিটার’, বসানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে গ্রিন ট্রাইবুনালের তরফে। সেক্ষেত্রে পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় রেখে অ্যাকশন প্ল্যান তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে।
উল্লেখ্য, এর আগেও পুরনো বাণিজ্যিক গাড়ি (Commercial Vehicles) বন্ধের ক্ষেত্রে নির্দেশ ছিল গ্রিন ট্রাইবুনালের। তা ধীরে ধীরে কার্যকর করার পদ্ধতিও শুরু করেছে পরিবহণ দপ্তর। ‘বৃদ্ধ’ গাড়ির মালিকদের কাছে চিঠি পাঠানো হচ্ছে তা বাতিলের জন্য। কিন্তু সেই কাজে এখনও গতি আসেনি। ফলে গ্রিন ট্রাইবুনালের এই নির্দেশ দ্রুত কার্যকর কীভাবে সম্ভব তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পরিবহণ দপ্তরের কর্তারা। চিন্তায় ব্যক্তিগত গাড়ির মালিকরাও। কারণ এতদিন শুধুমাত্র বাণিজ্যিক গাড়ি বাতিলের কথা থাকলেও এবার কোপ পড়তে চলেছে ১৫ বছরের পুরনো ব্যক্তিগত গাড়িতেও।
গ্রিন ট্রাইবুনালের নির্দেশ সম্পর্কে পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত জানান, ২০০৮ সালে তাঁর করা এক মামলার প্রেক্ষিতে কলকাতা হাই কোর্ট এই নির্দেশ দিয়েছিল। মাঝে ১৪ বছর কেটে গিয়েছে। এবারে গ্রিন ট্রাইবুনালের রায়ে দুটো বিষয় হয়েছে। একটা নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। আর হাই কোর্টের নির্দেশ ছিল শুধু বাণিজ্যিক গাড়ির ক্ষেত্রে, এবারে অবশ্য বাণিজ্যিকের সঙ্গে ১৫ বছরের পুরনো ব্যক্তিগত গাড়ি বাতিলেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে দূষণ কমাতে ডিজেলের গাড়ি বদলে যত বেশি সম্ভব সিএনজি বা বিদ্যুতিক গাড়ি ব্যবহার বাড়াতে হবে বলেই এদিন জানানো হয়েছে।
পরিবহণ দপ্তরসূত্রে খবর, শুধু কলকাতা এবং হাওড়াতেই ১০ লক্ষের কাছাকাছি ১৫ বছরের পুরনো ব্যক্তিগত এবং বাণিজ্যিক গাড়ি রয়েছে। মাত্র ছ’মাসে সেই গাড়ি বাতিল কতটা সম্ভব তা নিয়ে চিন্তায় দপ্তরের কর্তারা। কারণ মাসখানেক ধরে গাড়ির মালিকদের চিঠি পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তাতে মাত্র কুড়ি—পঁচিশ হাজার মাত্র চিঠি পৌঁছেছে। এই অল্প সময়ে বিশাল কর্মকাণ্ড শেষ করা বেশ কঠিন বলেই তাই মনে করছেন তাঁরা। গ্রিন ট্রাইবুনালের এই নির্দেশে অবশ্য বেকায়দায় পরিবহণ শিল্পে যুক্ত ব্যবসায়ীরা। বাসমালিকদের কথায়, এমনিই ব্যবসা অলাভজনক হয়ে গিয়েছে। এরপর পুরনো গাড়ি বাতিল হয়ে গেলে কেউ আর নতুন গাড়ি নামাবে না। একই সুর ট্যাক্সি মালিকদের গলাতেও। কারণ শহরে যে পরিমাণ ট্যাক্সি চলে তার অধিকাংশেরই বয়স ১৫ বছর পার করে গিয়েছে। ফলে সেগুলো সব যদি বাতিল করা হয়, তবে তো আর ট্যাক্সিই থাকবে না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.