অভিরূপ দাস: কিচ্ছু দেখতে পায় না। তারাই দান করল নয়ন। হাট্টাকাট্টা সুস্থ সবল ব্যক্তি যখন অঙ্গদান করতে দোনামোনা করেন সেখানে দৃষ্টিহীনের অঙ্গদানের বিরল নজির শহর কলকাতায়। ঝকঝকে নীল আকাশ, আদিগন্ত বিস্তৃত সবুজ, সমুদ্রের জলরাশি। কিছুই দেখেনি তারা। এমনই পনেরো দৃষ্টিহীন মরণোত্তর অঙ্গদানে অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়ার নজির খুব বেশি নেই। মৃত্যুর পর তাঁদের কিডনি, লিভার, হার্ট তো বটেই, চোখের মাধ্যমে নতুন করে পৃথিবা দেখতে পাবে অন্য কেউ।
যা শুনে হতচকিত অনেকেই। কিডনি, লিভার, হার্ট, ফুসফুস, সব ঠিক আছে। তাই বলে দৃষ্টিহীনের চক্ষুদান! চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সমরেশ পণ্ডিত জানিয়েছেন, দৃষ্টিহীনদের চোখদান করতে কোনও বাঁধা নেই। চিকিৎসকের ব্যাখায়, অধিকাংশ দৃষ্টিহীনের দেখার ক্ষমতা হারানোর কারণ গ্লুকোমা, কিংবা রেটিনার বিভিন্ন অসুখ। এর মধ্যে রয়েছে ডায়াবেটিক ম্যাকুলার এডিমা কিম্বা এজ-রিলেটেড ম্যাকুলার ডিজেনারেশন। এসবের কারণে দৃষ্টিশক্তি হারান সিংহভাগ। এঁদের রেটিনা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কর্ণিয়া ঠিক থাকে। চক্ষুদান প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করা হয় এই কর্ণিয়া। তাই দৃষ্টিহীনদেরও কর্ণিয়া দান করতে কোনও সমস্যা নেই।
বুধবার কলকাতা প্রেসক্লাবে ১৫ জন দৃষ্টিহীন-সহ ৩৫ জন বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তি মরণোত্তর অঙ্গদানের অঙ্গীকার পত্রে সই করেন। সব মিলিয়ে এদিন মরণোত্তর দেহদানে অঙ্গীকার বদ্ধ হয়েছেন ১২৫ জন। এদিন অভিনেতা দেবশঙ্কর হালদারও মরণোত্তর দেহদানে অঙ্গীকার বদ্ধ হয়েছেন। মৃত্যুর পর দেহদানের ইচ্ছাপত্রে সই করেছেন সঙ্গীতজ্ঞ পন্ডিত মল্লার ঘোষ। মরণোত্তর দেহদান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে গণদর্পণ।
তাদেরই উদ্যোগে এদিনের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিল এনআইপি এবং হৃদয়পুর অনুভব ওয়েলফেয়ার সোসাইটি নামে আরও দুই সংস্থা। জীবন পার করে দেহ শেষ হয় চিতায় বা কবরে, এমন ভাবেই কি একেবারে ফুরিয়ে যাওয়ার কথা তার? ছাই হয়ে অথবা মাটিতে মিশে গিয়ে? মরণোত্তর দেহদান বিষয়ক সংস্থা গণদর্পণের পক্ষ থেকে শ্যামল চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, নিজের অঙ্গ দিয়ে মৃতদেহ ফের জ্বেলে যেতে পারে আলো।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.