ফাইল চিত্র।
অর্ণব আইচ: আমার কথা না শুনলে প্রিয়জনের মৃত্যু হবে। ‘তান্ত্রিক বাবা’র কাছে এই কথা শুনেই ঘাবড়ে যেতেন বয়স্ক মহিলারা। আর উপায় জানিয়ে দিতেন খোদ ‘তান্ত্রিক গুরু’ই। গয়না ‘শোধন’ করলেই নাকি ফিরবে তাঁর ভাগ্য। শোধনের নামেই দুদিনে চারজন মহিলার কাছ থেকে সোনার গয়না হাতিয়ে নেয় ‘তান্ত্রিক গ্যাং’। লালবাজারের গোয়েন্দারা কলকাতা ও তার আশপাশের কয়েকটি জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে গ্রেপ্তার করলেন এই কেপমারি গ্যাংয়ের ১১ জনকে। এই কেপমাররা উত্তরাখণ্ডের উধোম সিং নগর এলাকার বাসিন্দা।
পুলিশ জানিয়েছে, দুদিন পর পর দক্ষিণ কলকাতার টালিগঞ্জ, ভবানীপুর, বেহালা ও পর্ণশ্রী এলাকায় চারটি ঘটনা ঘটে। এই গ্যাংয়ের সদস্যরা দুজন করে একেকটি বাইকে করে শহরে ঘুরে বেড়ায়। এদের মধ্যে একজন মাথা তান্ত্রিক সাজে। একজন সাজে শিষ্য। দূরে বাইক রেখে তারা ‘টার্গেট’ বানায় কোনও বয়স্কা মহিলাকে। হঠাৎই মহিলার সামনে গিয়ে সেই ‘তান্ত্রিক’ বলে, খুব তাড়াতাড়িই তাঁর এক পরিজনের মৃত্যু হবে। ওই গ্যাংয়েরই আরও দুই বা চার সদস্য দূর থেকে তাঁদের লক্ষ রাখে।
প্রবীণার সঙ্গে কথোপকথনের মধে্যই আলাদা আলাদাভাবে তারা এসে ‘তান্ত্রিক’কে প্রণাম করে বলে, ‘তান্ত্রিক’-এর আশীর্বাদে তাদের সব সমস্যা মিটে গিয়েছে। ফলে বয়স্কারা ওই ব্যক্তিকে বিশ্বাসও করে ফেলতেন। সেই সুযোগ নিয়ে ওই ‘তান্ত্রিক’ প্রবীণাকে বলত, তাঁর গয়না শোধন করলেই মিটবে যাবতীয় সমস্যা। প্রতে্যকটি ক্ষেত্রেই পরিজনের ‘মৃতু্য ঠেকাতে’ প্রবীণারা নিজেদের শরীর থেকে গয়না খুলে ‘তান্ত্রিক’কে দিয়েছেন। ওই ব্যক্তি শোধনের নামে একটি কাগজে সেই গয়নাগুলি মুড়িয়ে রাখে। তার শিষ্য মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য প্রবীণার সঙ্গে কথা বলে তাঁকে অন্যমনস্ক করে ফেলে।
ওই সময়ের মধে্যই কাগজের মোড়ক পালটে গয়না হাতিয়ে নেয় ব্যক্তিটি। বাড়ি ফিরে প্রবীণারা কাগজের মোড়ক খুলে দেখেন, ভিতরটা ফঁাকা। চারটি ঘটনার পর গোয়েন্দা পুলিশ সিসিটিভি দেখে বাইকের নম্বর দেখে দুষ্কৃতীদের ডেরায় পৌঁছয়। পর পর ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বেশিরভাগ বাইক শহরে এসে ভাড়া নিলেও একটি বাইক তারা উত্তরাখণ্ড থেকে নিয়ে এসেছে। তাদের জেরা করে এই হাতিয়ে নেওয়া গয়নাগুলি উদ্ধারের চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.