অর্ণব আইচ: কলকাতার সাইবার অপরাধীর কবলে পড়ে শেষ বয়সের সম্বল প্রায় ৮৬ হাজার ডলার খোয়ান ৯১ বছর বয়সের বৃদ্ধ। এই মানসিক আঘাত সহ্য করতে না পরে শেষপর্যন্ত অবসাদে আত্মঘাতী হন। এই আত্মহত্যার তদন্তে নেমে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই তথ্যটি জানতে পারে। এফবিআইয়ের তদন্ত উঠে আসে কলকাতার নাম। ইন্টারপোলের মাধ্যমে কলকাতা পুলিশকে ১১ জনের সন্দেহ তালিকা দেওয়া হয়।
তাদের মধ্যে বেনিয়াপুকুরের শিজান আলি হায়দার নামে এক যুবককে শনাক্ত করেন লালবাজারের সাইবার থানার আধিকারিকরা। অপরাধ স্বীকার করেছে ধৃত যুবক। বুধবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে তাকে ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। মার্কিন নাগরিকের মৃত্যুর ঘটনায় এই শহরের সাইবার অপরাধী অভিযুক্ত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে লালবাজারের গোয়েন্দাকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন মার্কিন দূতাবাসের আধিকারিকরাও।
পুলিশ জানিয়েছে, শিজান নামে ওই যুবক মাস খানের আগে তার শিকার হিসাবে বেছে নেয় আমেরিকার বাসিন্দা ৯১ বছরের ওই বৃদ্ধকে। সে তাঁকে ‘টেক্সট নাউ’ নামে একটি স্পুফিং অ্যাপ ব্যবহার করে ফোন করে। ওই অ্যাপের মাধ্যমে নিজের মোবাইল নম্বর গোপন রাখতে পারেন একজন। যুবক বৃদ্ধকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সফটওয়্যার বিক্রির প্রস্তাব দেয়, যেটি তাঁর কাজে লাগবে। সফটওয়্যারটির দাম খুব বেশি নয়। কিন্তু অনলাইনেই ডেসিমেল বা দশমিকের কারচুপি করে সে। বৃদ্ধকে এমনভাবে বোঝায় যে, তিনি তাকে বিশ্বাস করেন। সফটওয়্যার বিক্রির নামে দামের কারচুপি করেই সে বৃদ্ধর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে হাতিয়ে ৮৫ হাজার ৭৮৬ ডলার। ভারতীয় টাকায় তার মূল্য ৭১ লাখ টাকার কম নয়। কিন্তু স্পুফিং অ্যাপ হওয়ার কারণে যুবকের হদিশও পাননি বৃদ্ধ।
একসঙ্গে এতগুলি টাকা খুইয়ে তিনি মানসিক অবসাদে ভেঙে পড়েন। শেষ পর্যন্ত আত্মঘাতী হন ওই একাকী বৃদ্ধ। মার্কিন পুলিশ তাঁর দেহটি উদ্ধার করে। তদন্ত নামতে এই সাইবার জালিয়াতির বিষয়টি জানতে পারে মার্কিন পুলিশ। তদন্ত নামে এফবিআই। স্পুফিং অ্যাপ হওয়া সত্ত্বেও কলকাতা থেকে যে ফোন এসেছিল, মার্কিন গোয়েন্দারা তা বুঝতে পারেন। ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো তথা ইন্টারপোলের মাধ্যমে ১১ জনের নম্বর কলকাতা পুলিশকে পাঠানো হয়। এই ব্যাপারে লালবাজারের সাইবার থানা মামলা দায়ের করে।
গোয়েন্দারা তদন্ত শুরু করে ‘টেক্সট নাউ’ অ্যাপ ব্যবহার করে সম্প্রতি কলকাতা থেকে যারা মার্কিন মুলুকে ফোন করেছে, এমন তিনজনকে শনাক্ত করেন। এবার দিনক্ষণ ও সময়ের সূত্র ধরে যে ব্যক্তি ওই বৃদ্ধ মার্কিন নাগরিককে ফোন করেছিল, তাকে চিহ্নিত করা হয়। মঙ্গলবার রাতে গোয়েন্দারা ফাঁদ পেতে তপসিয়ার কুষ্টিয়া রোডের একটি কাফের ভিতর থেকে শিজানকে গ্রেপ্তার করেন। কলকাতার একটি নামী কলেজ থেকে বি কম পাস ওই যুবক ভুয়া কল সেন্টারে কাজ করে সাইবার জালিয়াতিতে হাত পাকায় বলে সে দাবি করেছে। তাকে জেরা করে এই ধরনের জালিয়াতির ব্যাপারে আরও তথ্য জানার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.