নব্যেন্দু হাজরা: রবিবার হাওড়া থেকে পার্কস্ট্রিট যাবেন বলে বাসে উঠেছিলেন বৈদ্যবাটির বাসিন্দা বিমল কর৷ কন্ডাক্টর ভাড়া চাইতেই ১০ টাকার কয়েন দেন তিনি৷ ভাড়া ছ’টাকা৷ কিন্তু কয়েন নিতে অস্বীকার করেন কন্ডাক্টর৷ বলেন, “১০ টাকার কয়েন অচল৷ মালিকরা নিতে চান না৷ পাম্পে তেল কিনতে গেলেও নেওয়া হয় না৷ তাই নেওয়া যাবে না৷ দেখুন না ব্যাগে কয়েন পড়ে রয়েছে৷ খুচরো দিন৷ না হলে ১০ টাকার নোট দিন৷” কিন্তু রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তো বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়ে দিয়েছে, ১০-এর কোনও কয়েন জাল নয়৷ বাসে শুরু বচসা৷ বাধ্য হয়ে এক যাত্রী কন্ডাক্টরের কাছে থাকা পাঁচটি ১০ টাকার কয়েন নিয়ে তাঁকে ৫০ টাকার একটি নোট দিলেন৷ কন্ডাক্টরের মুখে হাসি৷ ব্যাগে থাকা ১০-এর কয়েনের গতি হওয়ায়৷ যাত্রীরাও বলে উঠলেন, “দেখলেন তো ১০-এর কয়েন চলে কি না!
৫০০, ১০০০ টাকার নোটের পাশাপাশি ১০ টাকার কয়েন সমস্যায় জেরবার সাধারণ মানুষ৷ অনেকেরই অভ্যেস ছিল ১০ টাকার কয়েন জমিয়ে রাখার৷ এখন খুচরোর আকালে সেই টাকা বের করে বাজার কেউ করছেন, কেউ বা বাসে দিয়ে যাতায়াত করছেন৷ কিন্তু অধিকাংশ বাসেই নেওয়া হচ্ছে না এই কয়েন৷ এমনকি অনেক সরকারি বাসে, ট্রামেও কন্ডাক্টরকেও এই কয়েন নেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা প্রকাশ করতে দেখা যাচ্ছে৷ কিন্তু কেন এই বিভ্রান্তি৷ বাজার ঘুরে দেখা যাচ্ছে, দু’ধরনের ১০ টাকার কয়েন হাতে হাতে ঘুরছে সাধারণ মানুষের৷ প্রথম ধরনের কয়েনের একপাশে রুপোলি অংশের ঠিক মাঝ বরাবর ইংরেজি হরফে দশ লেখা আছে৷ সোনালি অংশে হিন্দি ও ইংরেজিতে রুপিয়ে ও রুপিস লেখা রয়েছে৷ দ্বিতীয় ধরনের দশের কয়েনে মাঝ বরাবর রয়েছে রুপি চিহ্ন৷ ঠিক তার নিচে রুপোলি ও সোনালি অংশ জুড়ে ইংরেজি হরফে লেখা রয়েছে দশ৷ হিন্দি ও ইংরেজিতে কিছুই লেখা নেই৷ প্রথম ধরনের কয়েনে, যেখানে দশ লেখা রয়েছে তার উপরে রয়েছে মোট ১৫টি দাগ৷ দ্বিতীয় ধরনের কয়েনে রুপি চিহ্নের উপর রয়েছে মোট দশটি দাগ৷ এই ধরনের কয়েনে রুপোলি অংশে মাঝ বরাবর রয়েছে অশোকস্তম্ভ৷ তার দু’পাশে হিন্দি ও ইংরেজিতে ভারত ও ইন্ডিয়া লেখা রয়েছে৷ প্রথম ধরনের কয়েনেও রুপোলি অংশের মাঝ বরাবর রয়েছে অশোকস্তম্ভ৷ তার ঠিক মাথায় সোনালি অংশে পাশাপাশি হিন্দি ও ইংরেজিতে ভারত ও ইন্ডিয়া লেখা রয়েছে৷
কয়েন দু’ধরনের হওয়ার জেরেই ছড়িয়েছে বিভ্রান্তি৷ হাটে-বাজারে, মুদির দোকান থেকে বাস, ট্রাম৷ সর্বত্রই কয়েন লেনদেনে হচ্ছে সমস্যা৷ বাসে রোজই কন্ডাক্টরদের সঙ্গে যাত্রীদের কার্যত খণ্ডযুদ্ধ বাধছে৷ নকল ১০ এর কয়েন বলে যা রটেছে তা যে সচল সেকথা রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানিয়ে দিয়েছে৷ তবু ঝঞ্ঝাট এড়ানো যাচ্ছে না৷ বাসমালিকদের দাবি, এই কয়েন নেওয়া যাবে না, এমন কোনও কথা তাঁরা কন্ডাক্টরদের জানাননি৷ তবে বাজারে যেহেতু জাল কয়েনের বিষয়টি রটেছে, তাই হয়তো তাঁরা নিচ্ছেন না৷ কোনও কয়েনই যে জাল নয়, সেটা আরও ভাল ভাবে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তরফে বিজ্ঞাপন দিয়ে জানানো উচিত৷ বাস-মিনিবাস সমন্বয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমরা কোনও নির্দেশ দিইনি৷ কারণ চালক, কন্ডাক্টররা নোটে আমাদের পেমেন্ট দেয়৷ ১০ টাকার কয়েনে নয়৷ তবে যে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছিল এই কয়েন নিয়ে তা কাটানো দরকার৷” পেট্রোলিয়াম ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক তুষার সেন বলেন, “পেট্রোল পাম্পে ১০ টাকার কয়েন নেওয়া হচ্ছে৷ আমরা এই কয়েন নেওয়া হবে না বলে কোনও নির্দেশিকা দিইনি৷ আর রিজার্ভ ব্যাঙ্কও জানিয়ে দিয়েছে ১০ টাকার কয়েন জাল নয়৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.