গৌতম ব্রহ্ম: বছর ঘুরে যায় ফরেনসিক রিপোর্ট হাতে আসতে। হোঁচট খায় তদন্ত। দীর্ঘসূত্রিতা কমাতে এবার তাই দশটি মেডিক্যাল কলেজে ‘মিনি ফরেন্সিক ল্যাবরেটরি’ তৈরির সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য। স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে।
হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ বা মর্গে এই ল্যাবরেটরি তৈরি হবে। অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় দেহকোষের সেরোলজিক্যাল পরীক্ষা হবে এখানে। সাপের কামড় বা বিষের ছোবলে মৃত ব্যক্তির ভিসেরা পরীক্ষা তো বটেই, যৌন হেনস্তা বা ধর্ষণের ঘটনায় প্রয়োজনে নির্যাতিতার মেডিক্যাল টেস্টও হবে। বিষের ছোবলে অসুস্থ হয়ে পড়া ব্যক্তির পরীক্ষাও করবে এই ল্যাব। তা সে আত্মহত্যার চেষ্টা হোক বা খুনের চেষ্টা। জেনে দেবে বিষের প্রকৃতি, বিষের পরিমাণও। এর ফলে তদন্তের পাশাপাশি চিকিৎসারও সুবিধা হবে। দাবি চিকিৎসকদের।
[ পদপিষ্টের পর এবার চালের বস্তায় চাপা পড়ার আশঙ্কা, আতঙ্কে যাত্রীরা ]
আগস্টের শেষে নবান্নে প্রথম বৈঠক হয়। তাতে রাজীব কুমার, হরিকৃষ্ণ কুসুমাকারের মতো পুলিশকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা. শুদ্ধোদন বটব্যাল, ‘পয়জন সেন্টার’-এর প্রধান ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সোমনাথ দাস ও এনআরএস মেডিক্যালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. তাপস বোস। এই মিনি ফরেনসিক সেন্টারের দায়িত্বে থাকবেন ফরেনসিক বিভাগের এক অধ্যাপক। সেন্টার পিছু দু’জন টেকনিক্যাল কর্মী নিয়োগ করা হবে। বসানো হবে একাধিক মেশিন। ‘অটোমেটেড টিসু্য অ্যানাইলাইজার’, ‘ভর্টেক্স মিক্সার’, ‘বেঞ্চ টপ সেন্ট্রিফিউজ’, ‘পিএইচ মিটার’, ইউভি স্পেকট্রো ফটোমিটার ইত্যাদি। এমনটাই জানালেন আরজিকরের অধ্যক্ষ তথা বিশিষ্ট ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ডা. শুদ্ধোদন বটব্যাল। তাঁর মত, “মিনি ল্যাব হলে রাজে্যর ফরেনসিক মানচিত্র বদলে যাবে। অটোপসির ক্ষেত্রে সাবালক হবে পুলিশ।”
এখন রাজ্যে বছরে গড়ে প্রায় ৩০ হাজার ‘মেডিকোলিগ্যাল অটোপসি’ করা হয়। এই বিপুল পরিমাণ পরীক্ষা হয় স্টেট ফরেনসিক ল্যাবে। একটি মাত্র ল্যাবরেটরির পক্ষে এই বিপুল চাপ সামলানো কার্যত অসম্ভব। ফলে, বছর ঘুরে যায় ল্যাবরেটরির রিপোর্ট থানায় পৌঁছতে। ততদিনে হয়তো বদলি হয়ে গিয়েছেন তদন্তকারী অফিসার বা ‘আইও’। ফরেনসিক সুবিধার অপ্রতুলতার কারণে বহু ক্ষেত্রেই বিচারপর্বও বিলম্বিত হয়। মিনি ফরেনসিক ল্যাব তৈরি হলে এই সমস্যা মিটবে বলেই মনে করছেন স্বরাষ্ট্র ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্তারা। জানা গিয়েছে, এক-একটি ল্যাব তৈরিতে আনুমানিক খরচ প্রায় ১৮ লক্ষ টাকা। ফরেনসিকের স্ট্যান্ডার্ড প্রোটোকল মেনে এখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলবে। তবে, প্রতিটি ক্ষেত্রেই দু’টি করে নমুনা সংগ্রহ করা হবে। একটি নমুনা আগের মতো স্টেট ফরেনসিক ল্যাবে যাবে। ল্যাবের জায়গা চিহ্নিতকরণের কাজ শেষ হয়েছে। মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ও ফরেনসিক বিভাগের অধ্যাপকরা রিপোর্ট তৈরি করছেন। কোন কোন ‘কেস’ ল্যাবে আসবে তা পুলিশ ঠিক করবে। তবে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলবে ল্যাবের ডিরেক্টরের পদে আসীন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞের নির্দেশিকা মেনে।
[ ঠান্ডা হাওয়ার হাত ধরে শীতের আমেজ বঙ্গে, থাকছে বৃষ্টির ভ্রুকুটিও ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.