সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কোভিশিল্ড (Covishield) প্রয়োগ চলছে, পাশাপাশি করোনা টিকা নিয়ে সংশয়-বিতর্কেরও অন্ত নেই। এহেন অনিশ্চিত আবহে রাজ্যে (West Bengal) পা রাখতে চলেছে কোভ্যাক্সিন (Covaxin)। ভারত বায়োটেক এবং আইসিএমআরের তৈরি এই নতুন কোভিড প্রতিষেধকের আগমনীতে রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশের কপালে চিন্তার ভাঁজ।
স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে খবর, আজ শুক্রবার দমদম বিমানবন্দরে এসে নামবে প্রায় ১ লাখ ১২ হাজার কোভ্যাক্সিনের ডোজ। আপাতত নতুন ভ্যাকসিনের ঠাঁই হবে বাগবাজারে, স্বাস্থ্য দপ্তরের সেন্ট্রাল স্টোর্সে। ইতিমধ্যে রাজ্যে এসেছে প্রায় ১৪ লাখ কোভিশিল্ডের ডোজ। যা দিয়ে রাজ্যের সাড়ে ছ’লাখ স্বাস্থ্যকর্মীদের দুই ডোজ টিকাকরণ সম্পূর্ণ করা যাবে। কিন্তু সেই প্রক্রিয়ার মধ্যে নতুন ভ্যাকসিন কাদের দেওয়া হবে, তা নিয়ে খানিক বিভ্রান্তি দানা বেঁধেছে স্বাস্থ্য ভবনের অন্দরে।
কেন? মূল কারণ দুটো। প্রথমত, করোনার টিকা নিতেই স্বাস্থ্যকর্মীদের একাংশের মধ্যে অনীহা। কোনও দিনই টার্গেট পূরণ হচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, কোভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা নিয়ে মেডিক্যাল জার্নালে তেমন উল্লেখযোগ্য কোনও নিবন্ধ প্রকাশিত হয়নি। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা. অজয় চক্রবর্তীর কথায়, “কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন যথেষ্ট আছে। নতুন ভ্যাকসিন কাদের দেওয়া হবে, স্বাস্থ্যমন্ত্রকের নির্দেশ পেলে ঠিক হবে।” আজ শুক্রবার রাজ্যে ৪০০টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টিকাকরণ হবে।
এদিকে বৃহস্পতিবার দুর্গাপুর পুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে করোনা টিকাকরণের পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় তিনজন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। শুরু হয় কাঁপুনি, শ্বাসকষ্ট। তাঁদের দ্রুত নিকটবর্তী হাসপাতালের আইসিইউয়ে ভর্তি করে চিকিৎসা হয়। কিছুক্ষণ বাদে অবস্থা স্বাভাবিক হয়। এর জেরে কিছুক্ষণ টিকাকরণ বন্ধ থাকে। দফতরের তথ্য অনুযায়ী, এদিন রাজ্যের ৯১টি কেন্দ্রে করোনা টিকা নিয়েছেন প্রায় ৭২০০ জন। দেশের শীর্ষ স্বাস্থ্য সংস্থা আইসিএমআরের নয়া নির্দেশ অনুযায়ী, এদিন থেকে প্রতিটি টিকাকেন্দ্রের সব তথ্য প্ৰতি তিন ঘণ্টা অন্তর স্বাস্থ্য মন্ত্রককে জানাতে হবে। স্বাস্থ্য কর্তাদের বক্তব্য, টিকাকরণের কাজ কতটা দ্রুত হচ্ছে, সে বিষয়ে সার্বিক তথ্য সংগ্ৰহ করতেই এই পদক্ষেপ। এদিকে এদিন থেকে রাজ্যের সব কেন্দ্রীয় সংস্থার হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মীদেরও টিকাদান শুরু করল রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর। তবে বি আর সিং হাসপাতাল, খড়গপুর রেল হাসপাতাল, আদ্রা, চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ ওয়ার্কস-সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের কর্মীরাই টিকা দিচ্ছেন।
স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, এক কেন্দ্রে একশোর বেশি টিকাকরণ হবে না। এক জন বাড়তি হলেও আলাদা কেন্দ্র করতে হবে। সংশ্লিষ্ট নোডাল মেডিক্যাল অফিসার তিন ঘণ্টা অন্তর টিকা সংক্রান্ত সব তথ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে ই-মেল করবেন। একই সময়ে সেই তথ্য জানানো হবে আইসিএমআর এবং রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরকে। আগামী ২৩ এবং ২৬ জানুয়ারি ছুটির দিন। রবিবারও ছুটি। এই সপ্তাহে তাই তিনদিন টিকাকরণ সম্ভব নয়। রাজ্যের সাড়ে ছ’ লাখ স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকা দেওয়ার কাজে গতি আনতে আরও অন্তত দশটি বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমকে টিকা বুথের আওতায় আনছে স্বাস্থ্যভবন।
এরপরে প্রায় ১১ লাখ ফ্রন্টলাইন কর্মীদের ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ শুরু করবে স্বাস্থ্য দপ্তর। নতুন বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিংহোম থেকে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেন, এমন চিকিৎসকরাও টিকা পাবেন। উল্লেখ্য, তিন সপ্তাহ আগে পুলিশ, বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর, পুরসভাগুলির কাছে সাফাইকর্মীদের তালিকা চেয়েছিল স্বাস্থ্য দপ্তর। সেই তালিকাও তৈরি। স্বাস্থ্যকর্মীদের পর ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কারদের টিকাকরণ শুরু হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.