রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়: আগামী ২০ এপ্রিল, ২০১৯ দিনটা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে। ফিরোজ শাহ কোটলায় কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে সে দিন খেলতে নামবে দিল্লি ক্যাপিট্যালস। এবং একই দিনে ভারতীয় বোর্ড ওম্বুডসম্যান ডি কে জৈনের সামনে উপস্থিত হতে চলেছেন দিল্লি ক্যাপিটালস উপদেষ্টা। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা স্বার্থের সংঘাত প্রশ্নের যাবতীয় উত্তর নিয়ে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে।
সৌরভ কী করে একই সঙ্গে সিএবি প্রেসিডেন্ট এবং আইপিএলে দিল্লি ক্যাপিটালস উপদেষ্টা হিসেবে থাকতে পারেন, সেই অভিযোগ তুলে কিছু দিন আগে বোর্ড ওম্বুডসম্যানকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন শহরের তিন ‘ক্রিকেটভক্ত’। চিঠির বক্তব্যের সারমর্ম ছিল, দু’টো পদে একই সঙ্গে আছেন প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক, যা পরিষ্কার স্বার্থের সংঘাত। গত ১২ এপ্রিল ইডেনে কেকেআর বনাম দিল্লি ম্যাচে কী করে সৌরভ সিএবি প্রেসিডেন্ট হয়েও দিল্লি ডাগআউটে বসতে পারেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছিল চিঠিতে। কিন্তু সৌরভের পাল্টা জবাবের পর ব্যাপারটা অনেকটাই থিতিয়ে গিয়েছিল। ১২ এপ্রিলের ম্যাচে প্রাক্তন ভারত অধিনায়কের দিল্লি ডাগআউটে বসা নিয়ে সমস্যা হয়নি। কিন্তু মঙ্গলবার বিতর্কটা ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। যে দিন বোর্ড ওম্বুডসম্যান সৌরভ এবং তিন অভিযোগকারীকে চিঠি পাঠিয়ে আগামী ২০ এপ্রিলের শুনানিতে উপস্থিত থাকতে বললেন। একই দিনে সিওএ আবার পুরো প্রসঙ্গে বোর্ড ওম্বুডসম্যানকে বিদঘুটে একটা চিঠি পাঠিয়ে ব্যাপারটাকে জটিল করে তুলল।
সিওএ-র পাঠানো চিঠির সারমর্ম: সৌরভকে তাঁর দ্বৈত ভূমিকা পালন করতে দেওয়া যেতেই পারে, যদি তিনি সব কিছু খোলসা করতে পারেন। দেখাতে পারেন, তাঁর কোথাও কোনও সংঘাত নেই। সিওএ-র তরফ থেকে বোর্ড সিইও রাহুল জোহরি যে চিঠি ওম্বুডসম্যানকে পাঠিয়েছেন, তাতে দু’টো বিষয় টেনে আনা হয়েছে, যা পরিস্থিতি কিছুটা হলেও জটিল করছে। এক) বোর্ড গঠনতন্ত্রের ৩৮ (৪) নিয়মাবলী অনুযায়ী একজন পদাধিকারী আইপিএলের কোনও ফ্র্যাঞ্চাইজির ম্যানেজমেন্টে থাকতে পারবেন না। অতএব, সৌরভের ক্ষেত্রে স্বার্থের সংঘাত একেবারেই ঘটছে না, তা পুরোপুরি বলা যায় না।
দুই) সৌরভ আইপিএলে যেমন দিল্লি ক্যাপিটালস উপদেষ্টা, তেমন আবার বোর্ডের ক্রিকেট উপদেষ্টা কমিটির সদস্য। সেটাও খতিয়ে দেওয়া উচিত। সব শেষে জোহরি লিখেছেন যে, সিওএ-র মতে সৌরভ প্রত্যক্ষ স্বার্থের সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছেন কি না, নাকি পরোক্ষ ভাবে, সেটা দেখে নিন ওম্বুডসম্যান। আর যদি সৌরভ সব কিছু খোলসা করে দেন, তা হলে বিশাল ক্রিকেটীয় অভিজ্ঞতার কথা মাথায় রেখে তাঁকে দ্বৈত ভূমিকায় থাকতে দেওয়া উচিত।
যার পর দু’টো প্রশ্ন ওঠে বোর্ডমহলে। প্রথমত, ওম্বুডসম্যানকে পাঠানো সিওএ-র চিঠিতে আদতে কী বলতে চাওয়া হয়েছে? সৌরভকে কি তা হলে শর্তসাপেক্ষ মুক্তি প্রদানের কথা বলা হল? দ্বিতীয়ত, সৌরভ নিজে কী করবেন? ২০ এপ্রিল ওম্বুডসম্যানের সামনে উপস্থিত থাকবেন কি না। কারণ নিয়ম অনুযায়ী, সৌরভ চাইলে নাও হাজির হতে পারেন।
রাতের দিকে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে যোগাযোগ করে পাওয়া গেল না। কিন্তু তাঁর ঘনিষ্টমহল মারফত জানা গেল যে, তিনি আগামী ২০ এপ্রিল উপস্থিত থাকছেন ডি কে জৈনের সঙ্গে। এ তরফের সাফাই, বোর্ড গঠনতন্ত্রের ৩৮ (৪) ধারায় সর্বাগ্রে বলা আছে, কোনও প্লেয়ারও একসঙ্গে একাধিক দলের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে মহেন্দ্র সিং ধোনি থেকে বিরাট কোহলি, সবাই নাকি আটকে যাবেন। আর বোর্ডের ক্রিকেট উপদেষ্টা কমিটিতে থাকা নিয়ে এঁদের বক্তব্য হল, আদতে কমিটিটাই আর আছে কি না কেউ জানে না। আর থাকলেও সেটা নিষ্ক্রিয় অবস্থায়। যেখানে থাকা না থাকা সমান।
শোনা গেল, ২০ এপ্রিল শুনানিতে ক্রিকেট উপদেষ্টা কমিটিতে থাকা নিয়ে সমস্যা দেখা দিলে, সৌরভ নাকি বলে দেবেন যে তিনি সেটা ছেড়ে দিতে চান। বলা হল, ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর ভারতীয় হেড কোচ নির্বাচনে যে ভাবে অপমানিত হতে হয়েছিল ক্রিকেট উপদেষ্টা কমিটিকে, তার পর কোনও রকম নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় তারা আর থাকেনি। এমনকী মিতালি রাজ বনাম রমেশ পাওয়ার ধুন্ধুমারের পর ক্রিকেট উপদেষ্টা কমিটিকে বলা হয়েছিল, ভারতীয় মহিলা টিমের নতুন কোচ বাছতে। কমিটি সেই প্রস্তাব প্রত্যাখান করে। সৌরভ আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিল থেকে সরে গিয়েছেন। তাই তাঁর পক্ষে এমন গুরুত্বহীন একটা কমিটি ছাড়া ব্যাপারই নয়।
এ ছাড়াও বলা হল, সৌরভ যদি একই সঙ্গে ক্রিকেট উপদেষ্টা কমিটি আর আইপিএল টিমের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে স্বার্থের সংঘাতে জড়ান, তা হলে শচীন তেন্ডুলকর আর ভিভিএস লক্ষ্মণও একই সংঘাতে জড়িয়ে। শচীন মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের সঙ্গে জড়িয়ে। ভিভিএস সানরাইজার্স হায়দরাবাদের মেন্টর। এবং এঁরা দু’জনই বোর্ড বর্ণিত ‘জীবন্ত’ ক্রিকেট উপদেষ্টা কমিটির সদস্য। ঠিক সৌরভের মতোই। ঘুরেফিরে যা দাঁড়াচ্ছে, তাতে আগামী ২০ এপ্রিল, ২০১৯ নাটকীয় দিন হতে যাচ্ছে। এবং যার পাশে সে দিনেরই ক্রিস গেইল বনাম কাগিসো রাবাদা যুদ্ধ কোনও তুলনাতেই আসে না!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.