রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্য়ায়: আছে? হবে? একটা?
রেড রোড। রাজভবন। মহমেডান স্পোর্টিং মাঠ। সিএবি চত্বর। ইডেনকে কেন্দ্র করে কয়েক কিলোমিটার রেডিয়াসে যদি আপনি শনিবার উপস্থিত থেকে থাকেন, কানে নির্ঘাৎ উপরের তিনটে শব্দের একটা ঢুকেছে। ইডেনে আইপিএল বা আন্তর্জাতিক ম্যাচ ঘিরে শহরের উথালপাথাল আবেগ-উত্তেজনার লেখচিত্র, একদমই নতুন নয়। অতীতে হয়েছে। ভবিষ্যতেও অবশ্যম্ভাবী হবে। কিন্তু প্রতিটা ক্ষেত্রেই প্রেক্ষাপট অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তিন বছর আগের ইডেনে ভারত বনাম পাকিস্তানই হোক কিংবা সাত বছর আগে আইপিএলে কেকেআর বনাম সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় মহাযুদ্ধ- এমন গনগনে আবহ থাকলে লোকের উন্মাদের মতো ছুটে না আসাটাই অস্বাভাবিক। কিন্তু রবিবাসরীয় কেকেআর বনাম সিএসকে? ক্রিকেটীয় বিচারে আহামরি প্রেক্ষাপট মোটেও নয়। এমন নয় যে, আজ কেকেআর হারলে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যাবে। মহেন্দ্র সিং ধোনিও যে শেষবার ইডেনে আইপিএল ম্যাচ খেলতে নামছেন, সেটাও বলা যাবে না। আগামী বছরও যে সিএসকের হলুদ জার্সি পরে গটগট করে ইডেন ক্লাবহাউসে ঢুকবেন না, কে বলতে পারে? কিন্তু তারপরেও শনিবার গোটা দিন ধরে অভূতপূর্ব যেসব সব দৃশ্য তৈরি হয়, তার ব্যাখ্যা কোথায়?
সিএবি কর্তার গাড়ি দাঁড় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। গাড়ির কাচ নামিয়ে রবিবারের টিকিটের চাহিদাপত্র ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে! প্রাক্তন বাংলা পেসার সিএবি-র সোফায় বসে আছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। একটা টিকিটের আশায়। পরিচিত সাংবাদিক দেখলে ব্যাগ ঝেড়েঝুড়ে দেখছেন, সিএসকে ম্যাচের একটা টিকিটও কোথাও আত্মগোপন করে আছে কি না! কমপ্লিমেন্টারি টিকিটও টাকা দিয়ে কেনার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। হাজার-দেড় হাজার-আড়াই হাজার যত টাকা লাগে লাগুক, কোনও অসুবিধে নেই!
বলা বাহুল্য। কিন্তু তথ্যের খাতিরে এখানে বলে রাখা উচিত যে, রবিবার ইডেনে কেকেআর বনাম সিএসকে একটা টিকিটও পড়ে নেই। না, একটাও না। ছেষট্টি হাজারের ইডেনের ছেষট্টি হাজার টিকিটই নিঃশেষ হয়ে গিয়েছে। অথচ এবার আইপিএল সূচি ঘোষণার সময় কেউ ভাবতেই পারেনি ইডেনে মহেন্দ্রবাবুকে চর্মচক্ষে দর্শনের অভিলাষ শহরকে উন্মত্ততার এমন তুঙ্গে তুলে দেবে। বরং ভাবা হয়েছিল দিল্লির হয়ে সৌরভ গঙ্গোপাধ্য়ায়ের উপস্থিতিতেই বঙ্গভঙ্গ হবে। উলটে কলকাতা পুরো সমর্থন ঘরের ছেলের বদলে ঘরের টিমের প্রতি সমর্পণ করেছে। আশ্চর্যের হল, সেই একই ইডেন, আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে তার সমর্থনের রং ফের পালটাতে চলেছে! ওয়াকিবহাল মহলের কেউ কেউ বললেন, উপদেষ্টা সৌরভ যা পারেননি, কলকাতার জামাই মহেন্দ্র ধোনি সেটা রবিবার করতে চলেছেন। রবিবারের ইডেনকে সিএসকে-র ‘হোম’ করতে চলেছেন, ইডেন সমর্থনকে দু’ভাগ করে। পূর্বাঞ্চল ভঙ্গ!
প্রাক নববর্ষ আবহ, ছুটির রবিবার, বিকেল চারটেয় খেলা আর সর্বোপরি কাঁচাপাকা চুল-দাড়ির সাঁইত্রিশ বছরের লোকটার চলতি ফর্ম- কোথাও যেন আবেগের অত্যাশ্চর্য চতুর্ভুজ তৈরি করে দিয়েছে। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালে টিকিটের চাহিদার এতটা বাড়াবাড়ি ছিল না, রবিবারের সিএসকে ম্যাচ ঘিরে যতটা আছে। অথচ যাঁকে নিয়ে এত কিছু, সেই ধোনি শনিবার ইডেনে এলেনই না! সকালে তাঁর অ্যাকাডেমির উদ্বোধন অনুষ্ঠান ছিল সিএসকে টিম হোটেলে। ধোনি উপরেই বসে থাকলেন। ইমরান তাহিরকে পাঠিয়ে দিলেন অনুষ্ঠানে কথা বলতে। সন্ধের দিকে আবার শ্বশুরবাড়ি চলে গেলেন। কিন্তু ইডেন, তাঁর সমর্থককুল, স্বপ্নের মহানায়ক দর্শন- প্রতীক্ষায় ঠায় দাঁড়িয়ে থাকল। সিএসকে-র সঙ্গে থাকা কেউ কেউ গর্বিত ভাবে বলছিলেন, এটাই ব্র্যান্ড সিএসকে। আইপিএলের সবচেয়ে জনপ্রিয় টিম কারণ তারা সবচেয়ে গুছোনো।
যিনি আইপিএলে ক্লাব-প্রেমের গণ্ডি ছাপিয়ে বহুদিন উত্তীর্ণ, ভারতবর্ষের শহর নির্বিশেষে যাঁর সমর্থন থেকে চাহিদা সব স্বতন্ত্র, দেশের সর্বত্র যিনি এখন চলমান জাতীয়তাবাদ। যাঁকে ঘিরে আকাশছোঁয়া আবেগের পাশে আজ আর কোনও যুক্তি চলে না। মহেন্দ্র সিং ধোনি ছাড়া পারত সিএসকে রবিবার কলকাতাকে সম্ভাব্য দু’ভাগ করতে? ধুর, এবার সৌরভই পারেননি!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.