সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ঘরদোর বলে কিছু নেই। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে দিন কাটে। কখনও কারও দোরে রাতের ঘুমটুকু সেরে নেওয়া। আর সেটাই কাল হয়ে উঠল দিল্লির ভবঘুরে যুবক সিকান্দরের। ‘চোর’ ভেবে পাড়ার বাসিন্দাদের বেদম প্রহার তাঁর জীবন কেড়ে নিল। আঘাতে আঘাতে জর্জরিত সিকান্দরকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া মাত্রই চিকিৎসকরা হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন। হলও তাই। কিছুক্ষণের মধ্যেই জীবনদীপ নিভে গেল ২২ বছরের যুবকের।
মহম্মদ আখলাক, পেহলু খান, রাকবর খান। সম্প্রতি সন্দেহের বশে গণপিটুনিতে মৃত্যুর ঘটনায় জাতীয় রাজনীতিতে তোলপাড় হয়েছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী এনিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলিকে কড়া হাতে হিংসা দমনের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু নির্দেশই সার। দেশের কোথাও না কোথাও প্রতিনিয়ত এমন হিংসা ছড়িয়ে পড়ছে। তার মধ্যে নজর কাড়ল রাজধানী দিল্লির এই ঘটনা। ২২ বছরের যুবক সিকান্দরের মাথার ওপর স্থায়ী কোনও আস্তানা ছিল না। সব অর্থেই তিনি ছিলেন ভবঘুরে। চলতি সপ্তাহে এভাবেই উত্তর পশ্চিম দিল্লির কোনও এক পাড়ায় ঢুকে পড়েছিলেন। খুঁজছিলেন একটু মাথা গোঁজার আশ্রয়। সেসময়ই পাড়ার লোকজনের সন্দেহ হয়, অচেনা যুবকটি বোধহয় চুরির ফন্দি ফিকির করছে। ব্যস, যেই না মনে হওয়া, অমনি কাজ শুরু। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, যুবককে ধরে নির্দয়ভাবে মারধর শুরু করেন কয়েকজন। নিজের কথা বলার একফোঁটা সুযোগও পাননি প্রহৃত যুবক। দীর্ঘ সময় ধরে মার খেয়ে তিনি যখন অচৈতন্যপ্রায়, তখনই অকুস্থল ছেড়ে চম্পট দেয় প্রহারকারীরা। অন্য কয়েকজন তাঁকে উদ্ধার করে স্থানীয় বিজেআরএম হাসপাতালে নিয়ে যান। ডাক্তাররা অবস্থা দেখেই বুঝেছিলেন, বাঁচানো কঠিন। সেই আশংকা সত্যি করে কিছুক্ষণের মধ্যে মৃত্যু হয় আহতের।
স্বামী বিবেকানন্দকে ভারতরত্ন দেওয়া হোক, দাবি বাবা রামদেবের
ঘটনার দিনকয়েক পর স্থানীয় থানায় একটি এফআইআর দায়ের হয়েছে। যার ভিত্তিতে পুলিশ তদন্তে নেমেছে। সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে শুরু হয়েছে তদন্ত। ডেপুটি কমিশনার একে লাল জানিয়েছেন, ‘প্রাথমিক পর্যায়ে সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে কয়েকজন সন্দেহভাজনকে ডেকে জেরা করা হয়েছে। মনে হয়, এর মধ্যে অনেকেই জড়িত ছিল। দ্রুতই কিনারা হবে বলে আশাবাদী আমরা। এধরনের ঘটনা দণ্ডনীয় অপরাধ। কাউকে রেয়াত করা হবে না।’ রাজধানীর বুকে এমন একটি ঘটনা ফের নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল। আইনমাফিক শাস্তি হয়তো পাবে দোষীরা। কিন্তু এই হিংসাত্মক প্রবণতা কি আদৌ আইনের বেড়াজালে আটকাবে? প্রশ্ন থাকছেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.