Advertisement
Advertisement
You tuber

কেউ হেরে যায়, কেউ হারবে জেনেও লড়ে… বিবেক-শ্রীজানার ভালোবাসার গল্প বেঁচে থাকুক ঘরে ঘরে

শ্রীজানা ও বিবেকের পরিবার বয়ে বেড়াবেন শূন্যতা।

You Tuber Bibek Pangeni and Srijana Subedi love story
Published by: Kishore Ghosh
  • Posted:December 24, 2024 8:50 pm
  • Updated:December 24, 2024 8:57 pm  

শুভদীপ রায়: ‘কেউ হেরে যায় কেউ পড়ে, কেউ হারবে জেনেও লড়ে, হাজার চেষ্টা করলেও জিতবে না সবাই…’

কোনও এক ডিসেম্বরের সন্ধ্যা। এককের মঞ্চে গিটার হাতে রূপম ইসলাম, উদাত্ত কন্ঠে ‘আমি যাই’। হাততালি নেই, কোলাহল নেই, দর্শকাসনে প্রায় প্রত্যেকের চোখের কোণে জল। চেষ্টা করলেও আটকানো যাচ্ছে না। ফিরে ফিরে আসছে সেইসব স্মৃতি, যেখানে চেষ্টা করা হয়েছিল হার নিশ্চিত জেনেও। আর এই ডিসেম্বরে সোশাল মিডিয়ার ফিডে বারবার ফিরে আসছে একটা পোস্ট। দুজনের ছবি, দম্পতি। সদ্য মৃত স্বামীর বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছেন স্ত্রী। কান্না আছে, শব্দ নেই। মৃত্যুর শান্ত হাহাকার স্পষ্ট। এই ছবিও যেন একই কথা বলছে। হার নিশ্চিত জেনেও চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার কথা।

Advertisement

আসলে, জীবন একটা অনুভূতি। কারও কাছে তা ছোট গল্প। চটপটে আনন্দ আছে, কিন্তু আমেজ নেই। মুহূর্ত যাপনে সবকিছু বিলিয়ে দিতে হয়। যা কিছু ঠিক, আরামের, সেটুকু ছেঁকে নেওয়া। আর কিছু প্রয়োজন নেই। শেষের পাতায় হিসেব মিলে গেলেই হল। কিন্তু যারা জীবনকে ছোট গল্প ভাবে না? ধারাবাহিক উপন্যাস তাঁদের বড্ড প্রিয়। পরতে পরতে রোমাঞ্চ নেই, একঘেয়েমিতে ভরা, তবে আমেজ রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি সেই জীবনকে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করা যায়। সবকিছু যে ছবির মতো সুন্দর, তা নয়। ছোটগল্পের চাকচিক্য হাজার খুঁজলেও মিলবে না, কিন্তু ভালোবাসা মিলতেই পারে, থুড়ি ভালোবাসা মিলবেই। আর সেই টানে প্রাণ ঢেলেছিলেন শ্রীজানা। সোশাল দুনিয়া বর্তমানে তাঁর চর্চায় মেতেছে। তবে রূপ বা গুণের নয়, ভালোবাসার। অসুস্থ স্বামীকে আগলে রাখার চেষ্টায় বছরের পর বছর কাটিয়েছেন এই ইনফ্লুয়েন্সর। তাঁদের জীবনের সেই অধ্যায়ের সাক্ষী থেকেছে নেটদুনিয়া।

গল্পের শুরু বছর দশেক আগে। মূল দুই চরিত্রে শ্রীজানা ও বিবেক। স্কুল জীবনের প্রেম গড়িয়েছিল ছাঁদনাতলা অবধি। এরপর দুজুনেই চলে যান ভিনদেশে। পড়াশোনা আর কাজ দুই-ই চলত আমেরিকায়। তবে নেটদুনিয়ায় তাঁরা আদ্যপান্ত এদেশের মানুষ। নেপালের বাসিন্দা হলেও ভারতে তাঁদের চর্চা বরাবরের। এর মাঝে বিবেকের ব্রেন টিউমার ধরা পড়ে। অল্প কয়েকদিনে বদলে যায় সব হিসাব। স্রেফ বদলায় না বিবেক-শ্রীজানার ভালোবাসা। স্বামীর অসুস্থতা যত বাড়তে থাকে, ততই শক্ত খুঁটির মতো সম্পর্ক আগলে রাখতে শুরু করেন শ্রীজানা। জানতেন হার নিশ্চিত তবু আশা ছাড়েননি। বাঁচার, বাঁচানোর। একাই লড়েছেন, তবে সাক্ষী রেখেছেন গোটা দুনিয়াকে। কীভাবে স্বামীর সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন তার প্রতিদিনের আপডেট দিতেন নেটদুনিয়ায়। অস্থির পৃথিবীকে বোঝানোর চেষ্টা করতেন, ভালোবাসা মিথ্যে নয়। তাইতো প্রতিবার একটা করে ধর্ষণের খবর, পারিবারিক হিংসার খবর, বিচ্ছেদের খবরের সঙ্গে সঙ্গে ফিডে আসতেন শ্রীজানাও। হয় স্বামীকে খাইয়ে দিচ্ছেন, কিংবা হুইল চেয়ারে বসা বিবেককে নিয়ে কোথাও ঘুরতে গিয়েছেন। তথাকথিত নাচ গানের রিলস নয়, দুজনের মুহূর্ত যাপন ভিডিও করে সোশাল দুনিয়ায় ছড়িয়ে দিতেন শ্রীজানা। আর এভাবেই যেন অনেকের ঘরের মানুষ হয়ে উঠেছিলেন দুজনে।

প্রিয় নায়কের মৃত্যু বেদনার। পছন্দের অভিনেত্রী আত্মহত্যা করলে কান্না পায়। বিবেক এর কোনওটাই নন। তবু এই মৃত্যু অনেকের হৃদয় ভারাক্রান্ত করেছে। ক্যানসার রোগী একদিন ফুরিয়ে যাবেন সেকথা সবাই জানত, তবু আশা ছাড়েননি কেউ। বারবার তাঁদের কথা আলোচনায় ফিরেছে। ভাইরাল হয়েছে দম্পতির ভালোবাসা। তাতে অশ্লীলতা ছিল না, আদর ছিল। তা গায়ে মেখেছেন সকলে। তাই বিবেকের চলে যাওয়ায় কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা সবকিছু। এই মৃত্যুর প্রভাব পড়বে না কারও জীবনে। শ্রীজানা ও বিবেকের পরিবার বয়ে বেড়াবেন শূন্যতা। তবু সকলের মনে যেন কিছু একটা নেই নেই ভাব। হয়তো আবার ভিডিও করবেন শ্রীজানা। হয়তো একাই থাকবেন, হয়তো না। তবে তাঁদের ভালোবাসা আর কতটুকু খুঁজে পাওয়া যাবে ভিডিওতে, সেই প্রশ্ন থাকছেই।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement