সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: চাহিদা কিংবা সমস্যার কথা নিজে মুখে প্রকাশ করার ক্ষমতা নেই তার৷ হাতিয়ার একটাই৷ শুধুমাত্র কান্না৷ খিদে পেয়েছে, একথা বোঝাতে তাই সেই প্রতিক্রিয়াই দিয়েছিল বছর তিনের খুদে৷ কিন্তু তাতে কী? একরত্তি মেয়ের কান্নাতেও মন গলেনি বাবার৷ বরং বিরক্তি বাড়ছিল৷ মেয়ের কান্না থামাতে যা করল সে, তা চমকে ওঠার মতোই৷ একজন বাবার পক্ষে এমন কাজও সম্ভব, এই প্রশ্ন জাগা অসম্ভব কিছু নয়৷
রাজধানীর প্রেমনগরের বাসিন্দা বছর তিনেকের ওই শিশুটি৷ মা ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন আগেই৷ বাবার কাছে বড় হচ্ছিল খুদে৷ সেভাবে উপার্জন করেন না বাবা৷ অথচ সারাদিন বুঁদ হয়ে থাকে নেশার ঘোরে৷ ছোট্ট শিশু সে এত কিছু বোঝে না৷ সমস্যা হলে কান্নার মাধ্যমে জানান দেয় শুধু৷ খিদের কথাও সেভাবে বাবাকে জানান দিয়েছিল খুদে৷ কিন্তু এটাই ছিল তাঁর ‘অপরাধ’৷ মদ্যপ বাবা প্রথমে একরত্তির কান্নায় কানই দেয়নি৷ কিন্তু মেয়ের কান্নার চোটে নেশার ঘোর কেটে যাওয়ার জোগাড়! তাই বিরক্ত হয়েছিল৷ তাকে শান্ত করতে মুখে গুঁজে দিয়েছিল বোতল৷ খিদের সময় মুখে বোতল পেয়ে কিছুটা আশ্বস্ত হয় শিশুটি৷ কিন্তু বোতলের তরল পেটে যাওয়ার পর আরও জোরে জোরে কাঁদতে শুরু করে একরত্তি৷ পাড়া-প্রতিবেশীরা অবাক হয়ে যান৷ কেন এত কাঁদছে সে? তড়িঘড়ি হেল্পলাইন নম্বর ১৮১-তে ফোন করেন প্রতিবেশীরা৷ মহিলা কমিশনের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান৷ তাঁরা দেখেন, এক্কেবারে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে শুয়ে শুয়ে কাঁদছে শিশুটি৷ তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে৷ তবে ততক্ষণে প্রায় নিস্তেজ হয়ে গিয়েছে একরত্তি৷
এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে শিশুর চিকিৎসা শুরু হয়৷ তাঁরা দেখেন অযত্নে শিশুর শরীরের একাধিক জায়গায় ঘা হয়ে গিয়েছে৷ অপরিষ্কার থাকায় গোপনাঙ্গেও সংক্রমণ হয়ে গিয়েছে একরত্তির৷ কিন্তু কেন শিশুটি এমন নিস্তেজ হয়ে গিয়েছে, সেই কারণ নিয়ে ধোঁয়াশায় ছিলেন চিকিৎসকরাও৷ শিশুর খাবারে খারাপ কিছু ছিল বলেও সন্দেহ জাগে৷ দুধের বোতলের দিকে চোখ পড়তেই চমকে ওঠেন তাঁরা৷ চিকিৎসকরা দেখেন দুধ নয়, শিশুর বাবা তাকে মদ খেতে দিয়েছিল৷ নেশার ঘোরেই এমন নিস্তেজ হয়ে গিয়েছে সে৷ একজন বাবা যে এ কাজ করতে পারে, তা স্বপ্নেও ভাবতে পারছেন না কেউ৷ আপাতত হাসপাতালের শয্যায় মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে একরত্তি৷ শুধু কি নেশার ঘোরে, নাকি খুনের পরিকল্পনামাফিক মেয়েকে মদ খাইয়ে দিয়েছিল ওই ব্যক্তি, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.