সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: হায়দরাবাদ, উন্নাওয়ের ধর্ষিতাদের পরিণতি দেখিয়ে দিয়েছে, বিষয়টা আর নিছকই নারী নিরাপত্তা বিঘ্নিত – এটুকু উদ্বেগেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি চিন্তার হয়ে দাঁড়াচ্ছে আজকের শিশুকন্যাদের সুরক্ষা, বর্তমান এবং ভবিষ্যতে। গত কয়েকবছর ধরে দেশজুড়ে ঘটে চলা নির্ভয়াদের মতো চরম নৃশংস দিন যাতে নিজের সন্তানকে দেখতে না হয়, অহরহ সেই প্রার্থনায় মগ্ন মায়েরা।
কিন্তু শনিবার দুপুরে রাজধানীর রাস্তায় এধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে একেবারে নজিরবিহীনভাবে প্রতিবাদের পথে হাঁটলেন এক মা। প্রকাশ্য রাস্তায় নিজের ছ বছরের শিশুকন্যাকে জ্বালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেন, এই যুক্তি দেখিয়ে যে, একদিন তাঁর মেয়েরও উন্নাও বা হায়দরাবাদের তরুণীর মতো পরিণতি হতেই পারে। জন্মদাত্রীর এহেন প্রতিবাদ সত্যিই চোখ খুলে দেওয়ার মতো।
শুক্রবার রাতে হাসপাতালে অগ্নিদগ্ধ উন্নাওয়ে নির্যাতিতা জীবনযুদ্ধে হার মেনেছে। ধর্ষণের মামলা চলাকালীন আদালতে সাক্ষ্য দিতে যাওয়ার সময় তাঁকে জ্বালিয়ে দেয় অভিযুক্তরা। জ্বলন্ত শরীর নিয়েই প্রাণে বাঁচতে সে সাহায্যের জন্য ছুটে যায় প্রায় ১ কিলোমিটার। এমন প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ লড়াই করেও শেষরক্ষা হয়নি। শনিবার কাকভোরে তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই দেশজুড়ে ফের প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। দিল্লির পথে শুরু হয় প্রতিবাদ মিছিল, বিক্ষোভ।
আর সেখানেই চোখে পড়ে বেনজির সেই দৃশ্য। ধর্ষণের প্রতিবাদ জানিয়ে এক মা তাঁর শিশুকন্যার গায়ে পেট্রল ঢেলে তাকে জ্বালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। যদিও অঘটন ঘটার আগেই পুলিশ তাঁদের দু’জনকেই সরিয়ে নিয়ে যায়। ক্ষুব্ধ, আবেগজড়িত কণ্ঠে সেই মা জানিয়েছেন, তাঁর মেয়ের উপরেও হয়ত কখনও নেমে আসবে যৌন নির্যাতনের খাঁড়া এবং হয়ত উন্নাও কিংবা হায়দরাবাদের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে। তাই তিনি নিজেই মেয়ের জীবন শেষ করে দিতে চান। একথা বলার সময় সেই মায়ের মানসিক পরিস্থিতি যদি এখনও আঁচ না করা যায়, তবে হয়ত বছরের পর বছর এমন লজ্জার ভার বয়ে বেড়াতে হবে আমাদের।
তবে উন্নাওয়ের নির্যাতিতার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তে উত্তরপ্রদেশের যোগী সরকারের বিরুদ্ধে যথারীতি তোলপাড় শুরু হয়ে গিয়েছে। ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে এর বিচার হবে, মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের এই আশ্বাসের পরও ভরসা পাননি কেউ। নির্যাতিতার বাড়ি গিয়ে তাঁর পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াংকা গান্ধী। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ” যে পুলিশ এফআইআর নিতেই অস্বীকার করে, সে আর কী-ই বা পদক্ষেপ নিতে পারে? নারীদের উপর অত্যাচার বন্ধ করতে সরকারই বা কী ভূমিকা নিয়েছে?” রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব বিধানসভার সামনে ধরনায় বসেছেন। তাঁর দাবি, ”যতদিন না মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ডিজিপি পদত্যাগ করবেন, ততদিন সুবিচার হবে না।”
বিরোধীদের গলায় প্রতিবাদের সুর। তাঁরা বলছেন, উন্নাওয়ে মহিলাদের কোনও জায়গাই নেই। এভাবেই বারবার বিক্ষোভের ছবি ফিরে ফিরে আসছে। কিন্তু কতদিন? সুবিচার পেতে কি এভাবেই বারবার পথে নামতে হবে? নাহলে তা অধরাই থেকে যাবে? এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া জরুরি হয়ে উঠেছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.